কবিগুরুর জীবনের শেষ দিনটি যেমন ছিল

সুইটি চৌধুরী পূর্বা | শুক্রবার , ৮ আগস্ট, ২০২৫ at ৬:৩৫ পূর্বাহ্ণ

পৃথিবীর মহান কবিদের একজন যিনি এই উপমহাদেশে জন্মেছিলেন, তিনি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম ২৫ শে বৈশাখ ১২৬৮ কলকাতায় জোঁড়াসাঁকোর পৈতৃক বাড়িতে। মৃত্যু ২২ শে শ্রাবণ ১৩৪৮, বেলা বারোটার কিছু পরে যে বাড়িতে জন্মেছিলেন সেখানেই, ৮০ বৎসর বয়সে। কবি জীবনের একটি বিষাদময় দিন ১৩ই শ্রাবণ। দিনটি ছিল এমন, আগামীকাল অপারেশন হবে কিন্তু কবি জানেন না, কেননা ভয় পাবেন বলে কেউই তাঁকে কিছু বলেননি। রোজই গ্লুকোজ দেওয়া হচ্ছে আর তিনি কেবলই জিজ্ঞেস করছেন, ‘সেই বড়ো খোঁচার ভূমিকাস্বরূপ এই ছোট খোঁচাগুলো আর কতদিন চালাবে’? খোঁজ নেন, কবে দিন ঠিক হল। সঠিক খবর কেউই দেননা কেবলই আশ্বাস দেন। এমন ভয় আর উদ্বেগের মধ্যেও আরেকটি কবিতা লেখা হয়ে গেল বিকেলবেলা। ‘দুঃখের আঁধার রাত্রি বারে বারে/ এসেছে আমার দ্বারে“’…এসে গেল অস্ত্রোপাচারের দিন, ১৪ই শ্রাবণ। জোঁড়াসাঁকোর বাড়িতেই অপারেশন হবে।

কবির ঘরের পিছন বারান্দায় আয়োজন করা হয়েছে, অপারেশন টেবিল আড়াল করে সাদা কাপড়ের পর্দা টাঙানো হয়েছে। সমস্ত আয়োজনই যথাযথ, কেবল কবিই জানেন না কিছু। খুব সকালে বিছানায় শুয়ে শুয়েই মুখে মুখে বলে গেলেন একটি কবিতা, রানীচন্দ তা লিপিবদ্ধ করে রাখলেন— ‘তোমার সৃষ্টির পথ রেখেছ আকীর্ণ করি/ বিচিত্র ছলনাজালে/ হে ছলনাময়ী’। এভাবেই রচিত হল কবি জীবনের সর্বশেষ কবিতা। সকাল সাড়ে দশটার সময় আয়োজন সম্পূর্ণ হলে ডাক্তার কবির কক্ষে এলেন। শেষ হল অস্ত্রাঘাত। তবে ভীষণ লেগেছিল তাঁর, বড়ো কষ্ট হয়েছিল। সারাদিন ঘুমুলেন। মোটামুটি এভাবেই দুদিন অতিবাহিত হয়ে গেল। তারপর অবস্থা খারাপের দিকে গড়ায়। ২০ তারিখ রাত থেকে স্যালাইন দিতে হল, অবস্থা এতই অবনতির দিকে। ২১ শে শ্রাবণের সন্ধ্যা, শান্তিনিকেতনের চীনা ভবনের অধ্যাপক এসেছেন, কবির বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে নিজের উপাসনা করলেন। রাত শেষ হয়ে গেল অচৈতন্য অবস্থায়। চিরকালের সূর্য আর দেখলেন না কবি। অন্তিম নিঃশ্বাস পড়ল স্তব্ধ দুপুরে। তখন বারোটা বেজে দশ মিনিট। ২২ শে শ্রাবণ, ঘর লোকে লোকারণ্য। সারা কলকাতা জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়ির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। এমনিভাবে বাঙালি জীবনের মহান এক মানবের শেষ জ্যোতির কণিকা নিভে গেল চিরতরে। ২২শে শ্রাবণের এমন দিনে কবিকে জানাই গভীর শ্রদ্ধা। লেখক : শিক্ষক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রণব রায় : গীতিকবি ও সাংবাদিক
পরবর্তী নিবন্ধকবিগুরুর প্রকৃতিবন্দনা