বান্দরবানের দুর্গম পাহাড়ের অরণ্য থেকে কৌশলে দুটি বিলুপ্তপ্রায় রাজ ধনেশ পাখি ধরে বিক্রির উদ্দেশ্যে আটকে রেখেছিলেন এক ব্যক্তি। খবর পেয়ে বন বিভাগের লোকজন অভিযান চালিয়ে রাজ ধনেশ দুটি উদ্ধার করে। উদ্ধারের পর বিরল প্রজাতির পাখিগুলো নতুন অতিথি হিসেবে ঠাঁই পেয়েছে চকরিয়া ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে পার্কের বন্যপ্রাণী হাসপাতালের কোয়ারেন্টাইন শেডে পাখি দুটিকে রাখা হয়। সেখানে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা শেষে পার্কের পাখি শালার নির্দিষ্ট বেষ্টনীতে উন্মুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন পার্ক কর্তৃপক্ষ।
বান্দরবান প্রতিনিধি জানান : বনবিভাগের অভিযানে বান্দরবানের থানচি উপজেলার দুর্গম রেমাক্রি থেকে ২টি রাজ ধনেশ পাখি উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে পাখিগুলো কক্সবাজারের চকরিয়া ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে পাঠানো হয়েছে।
বন বিভাগ জানায়, জেলার থানচি উপজেলার রেমাক্রি ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ের অরণ্য থেকে কৌশলে ধরে আটকে রাখা বিলুপ্তপ্রায় রাজ ধনেশ প্রজাতির ২টি পাখি উদ্ধার করেছে বনবিভাগ। একটি বাড়িতে পাহাড়ি সমপ্রদায়ের এক ব্যক্তি পাখি দুটি বিক্রির উদ্দেশ্যে রেখেছিলেন। খবর পেয়ে বনবিভাগের লোকজন অভিযান চালায়। উদ্ধার করা রাজ ধনেশ পাখি দুটি আকারে ছোট। উদ্ধারের পর পাখিগুলো থানচি থেকে বান্দরবান বনবিভাগের কার্যালয়ের কাঁচা বানিয়ে নিয়ে আসা হয়। পরে স্বাস্থ্য পরীক্ষার পাখিগুলো বনবিভাগের তত্ত্বাবধানে ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। চকরিয়া প্রতিনিধি জানান : চকরিয়ার ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে নতুন অতিথি হিসেবে ঠাঁই পেয়েছে অস্তিত্বের সংকটে থাকা বিরল প্রজাতির দুটি রাজ ধনেশ পাখি। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে পার্কের বন্য প্রাণী হাসপাতালের কোয়ারেন্টাইন শেডে পাখি দুটিকে রাখা হয়। সেখানে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা শেষে পার্কের পাখি শালার নির্দিষ্ট বেষ্টনীতে উন্মুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন পার্ক কর্তৃপক্ষ।
সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক মো. মনজুরুল ইসলাম জানান, পার্কের নতুন অতিথি হিসেবে আনা হয়েছে অস্তিত্বের সংকটে পড়া দুটি রাজ ধনেশ পাখি। বৃহস্পতিবার সকালেই বিরল প্রজাতির এই পাখি দুটিকে পার্কের কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তর করা হয় বান্দরবান বনবিভাগের পক্ষ থেকে। তিনি জানান, পাখি দুটি বিক্রির উদ্দেশ্যে বান্দরবানের থানচি উপজেলার রেমাক্রি ইউনিয়নের এক ব্যক্তির বাড়িতে রাখা হয়েছিল। খবর পেয়ে বনবিভাগের একটি দল গত ২ জুলাই ওই বাড়িতে অভিযান চালিয়ে পাখি দুটিকে উদ্ধার করে। এরপর বান্দরবানের বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয়ে পাখি দুটিকে রেখে পরিচর্যাসহ লালন–পালন করা হয়। পরবর্তীতে পাখি দুটি সুস্থ হয়ে উঠলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে প্রেরণের সিদ্ধান্ত নেয় বান্দরবান বন বিভাগ।
এ ব্যাপারে সাফারি পার্কের ভেটেরিনারি সার্জন হাতেম সাজ্জাদ মো. জুলকার নাইন দৈনিক আজাদীকে বলেন, বিরল প্রজাতির পাখি দুটির বয়স তেমন হয়নি। তবে বেশ সুস্থ–সবল রয়েছে। পার্কে আনার পর প্রথমে বন্যপ্রাণী হাসপাতালের কোয়ারেন্টাইন শেডে রেখে প্রয়োজনীয় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। হয়তো আগামীকালের (আজ) মধ্যে পাখি দুটিকে পার্কের পাখি শালার নির্দিষ্ট বেষ্টনীতে উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। যাতে পার্কে আগত পর্যটক–দর্শনার্থীরা পাখি দুটিকে অবলোকন করতে পারে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বান্দরবানের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোহাম্মদ আবদুর রহমান। তিনি জানান, নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও বনবিভাগের কর্মীরা জেলাজুড়ে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। ইতোপূর্বেও উদ্ধারকৃত বিভিন্ন বন্য প্রাণী ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে প্রেরণ করা হয়েছে। এবারের অভিযানে উদ্ধারকৃত বিরল প্রজাতির মূল্যবান রাজ ধনেশ পাখি দুটিকে উদ্ধারের পর প্রয়োজনীয় চিকিৎসা শেষে ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে হস্তান্তর করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, পার্বত্য জেলা বান্দরবানের বন ও বন্যপ্রাণী রক্ষায় এ ধরনের কার্যক্রম নিয়মিতভাবে চলমান থাকবে। ইতোমধ্যে বান্দরবানে খুব দ্রুত সময়ে সীমান্ত সড়ক নির্মাণ হবে। আর এই সীমান্ত সড়ক নির্মাণের পাশাপাশি আমরা আমাদের বন ও বন্য প্রাণীকে রক্ষায় নতুন আরও ৪টি অফিস স্থাপনের কাজ শুরু করবো। এতে সীমান্ত এলাকার বন ও বন্য প্রাণীর নিরাপদ আবাসস্থল তৈরি হবে।