চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের পাশাপাশি বাড়ছে মৃত্যুও

চলতি জুলাই-আগস্টে আক্রান্ত ৫৫২, মৃত্যু ১১ সারা দেশে আক্রান্ত ছাড়ালো ২৩ হাজার

জাহেদুল কবির | শুক্রবার , ৮ আগস্ট, ২০২৫ at ৫:৫৮ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্তের পাশাপাশি বাড়ছে মৃত্যুও। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যান মাত্র দুইজন। অথচ জুলাই ও আগস্টের গতকাল পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ১১ জন। একই সাথে বেড়েছে আক্রান্ত। চলতি বছর মোট আক্রান্ত হয়েছে ৯৯৭ জন। এরমধ্যে জুলাই ও আগস্টের গতকাল পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ৫৫২ জন। অর্থাৎ অর্ধেকেরই বেশি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চট্টগ্রামে বর্তমানে কখনো মাঝারি ও কখনো থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। এতে বিভিন্ন জায়গায় পানি জমছে। বিশেষ করে ফুলের টব ও ডাবের খোসা, গাড়ির টায়ারসহ বিভিন্ন পরিত্যক্ত বস্তুতে পানি জমার কারণে ডেঙ্গুবাহী এডিস মশা প্রজননে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। এতে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীও বাড়ছে। তাই সবাইকে বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার রাখাসহ কোথাও যাতে তিনদিনের বেশি পানি না জমে সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। এছাড়া রাতে ছাড়াও দিনেরও বেলায়ও মশারি টানাতে হবে।

এদিকে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ২৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। এরমধ্যে বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১২ জন, ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি হাসপাতালে ৩ জন, ২৫০ শয্যার চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ২ জন এবং বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে আরো ৩ জন চিকিৎসাধীন রয়েছে। তবে গতকাল কেউ মারা যাননি। অপরদিকে চলতি বছর সারাদেশে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত মোট ২৩ হাজার ২২০ জন এবং মারা গেছেন ৯৫ জন।

চিকিৎসকরা বলছেন, ডেঙ্গু রোগীর মূল চিকিৎসা হচ্ছে ফ্লুইড ম্যানেজম্যান্ট। অনেক অনেক রোগী এনএসওয়ান রিপোর্ট হওয়ার সাথে সাথে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে যাচ্ছেন। এটি আসলে কোনো দরকার নাই। ডেঙ্গুর প্ল্যাটিলাট কাউন্ট ১০ হাজারের নিচে নেমে গেলে তখন ইন্টারনাল ব্লিডিং শুরু হয়। তখন ক্রিটিক্যাল কেয়ার ম্যানেজম্যান্টের প্রয়োজন পড়ে। আবার প্ল্যাটিলেট কমা শুরু হয় জ্বর কমে যাওয়ার পর পর। তখন শারীরিক কিছু অসুবিধা দেখা দেয়। ওই সময় হাসপাতালে ভর্তি হতে পারে। সাধারণ মানুষের মধ্যে প্ল্যাটিলেট নিয়ে আতঙ্ক লক্ষ্য করা যাচ্ছে, আসলে প্ল্যাটিলেট যখন বাড়া শুরু হয় তখন দ্রুতই বাড়ে। কাজেই ডেঙ্গু জ্বর হলেই আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।

চট্টগ্রাম জেলার সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ডেঙ্গু মোকাবেলায় নাগরিকদের অনেক দায়িত্ব রয়েছে। শুধুমাত্র স্বাস্থ্যবিভাগের একার পক্ষে ডেঙ্গু মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নগরীতে মশক নিধন কর্মসূচি চালিয়ে আসছে। এখন নাগরিকরা বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার রাখা, ফুলের টব কিংবা বাড়ির ছাদে যাতে পানি জমে না থাকে সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখবেন। তাহলে ডেঙ্গু মোকাবেলা করা আরো সহজ হবে।

এদিকে সম্প্রতি রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) ‘র‌্যাপিড রেসপন্স টিম’ নগরীর চট্টেশ্বরী রোড (ওয়ার্ড ১৫), ও আর নিজাম রোড (ওয়ার্ড ১৫), আগ্রাবাদ (ওয়ার্ড ২৭), পাহাড়তলী (ওয়ার্ড ৯), হালিশহর (ওয়ার্ড ২৬) এবং ঝাউতলায় (ওয়ার্ড ১৩) এডিস মশা চিহ্নিতকরণে জরিপ চালায়। গত জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে পরিচালিত জরিপে কীটতাত্ত্বিক দলের সদস্যরা ওইসব এলাকার ১২৮টি বাড়ির মধ্যে ৬২টিতে এডিস মশার লার্ভা দেখতে পান। পরবর্তীতে আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন স্বাক্ষরিত জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। সেখানে মশা নিধনে তিনটি সুপারিশ করা হয়। সেগুলো হলোডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর লক্ষণ বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান করা। কীটতাত্ত্বিক জরিপের ফলাফলের ভিত্তিতে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাসমূহে অনতিবিলম্বে মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনা করা এবং পর্যায়ক্রমে সিটি কর্পোরেশনের অন্যান্য ওয়ার্ডসমূহকে উক্ত কার্যক্রমের আওতায় আনা এবং মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে জনগণের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করা।

উল্লেখ্য, গত বছর ২০২৪ সালে মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৪ হাজার ৩২৩ জন এবং মারা যান ৪৫ জন। এর আগে ২০২৩ সালে আক্রান্ত হয়েছিল ১৪ হাজার ৮৭ জন। এরমধ্যে মারা যায় ১০৭ জন। এছাড়া ২০২২ সালে মোট আক্রান্ত ৫ হাজার ৪৪৫ জনের মধ্যে মারা যান ৪১ জন এবং ২০২১ সালে আক্রান্ত হয় ২২১ জন এবং মারা যায় ৫ জন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদেশের রপ্তানি পালে হাওয়া
পরবর্তী নিবন্ধতফসিল ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে