ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে যুবককে দেওয়া প্রত্যয়নপত্রে ‘শিশু ধর্ষণে’ তার জড়িত থাকার কথা লিখে ‘ব্যতিক্রম’ সৃষ্টি করেছেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। নানা প্রয়োজনে মানুষকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে ‘প্রত্যয়ন পত্র’ নিতে হয়। সাধারণত সেখানে তার ‘চরিত্র ভালো’, ‘সমাজ বা রাষ্ট্রবিরোধী কাজে জড়িত নন’, এমন গৎবাঁধা ভালো–ভালো কথাই লেখা থাকে। অনেক ক্ষেত্রে এমন লেখাযুক্ত প্রত্যয়ন পত্র ছাপানোই থাকে সেখানে শুধু নাম–ঠিকানা বসিয়ে দায়িত্বরতদের সিল–স্বাক্ষর দেওয়া হয়। তবে মো. শরিফ মিয়া (২২) নামের যুবককে প্রত্যয়নপত্র দিতে গিয়ে তা করেননি উপজেলার মাইজবাগ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইদুল ইসলাম বাবুল। খবর বিডিনিউজের।
বরং তিনি যুবকের সম্পর্কে তার জানা তথ্যগুলিই তুলে ধরেছেন প্রত্যয়নপত্রে। এমন ঘটনা জানাজানি হলে এলাকায় কৌতূহল সৃষ্টি হয়।
এ বছরের গত ১৩ জুন চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠে উপজেলার তারাটি গ্রামের মো. আব্দুল বারেক মিয়ার ছেলে মো. শরিফ মিয়ার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে ঈশ্বরগঞ্জ থানায় শরীফের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন।
পরে আদালতের নির্দেশে ১৪ জুলাই শরিফ মিয়ার বিষয়ে মাইজবাগ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে প্রত্যয়নপত্র সংগ্রহ করতে যান ভুক্তভোগীর এক স্বজন।
তাকে দেওয়া প্রত্যয়নপত্রে চেয়ারম্যান উল্লেখ করেন– মো. শরীফ মিয়া পিতা: বারেক মিয়া, আমার জানামতে তিনি ইতিপূর্বে এক কিশোরীকে ধর্ষণ করতে না পেরে বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেন। তিনি একজন দুষ্কৃতকারী এবং দুশ্চরিত্রের। তাছাড়া কিছুদিন আগে তিনি চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করেন। তিনি সামাজিক বা আইনের কোনো তোয়াক্কা করেন না। প্রত্যয়নপত্রে শরীফকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়ার জোর দাবিও করেন চেয়ারম্যান।
এ বিষয়ে চেয়ারম্যান সাইদুল ইসলাম বাবুল বলেন, সমাজের ভাল মানুষের পাশাপাশি খারাপ মানুষ রয়েছে। তবে খারাপ মানুষকে কখনো খারাপ হিসেবে প্রত্যয়নপত্র দেওয়া হয় না। আমরা সাধারণত ভালো কিছু লিখে প্রত্যয়নপত্র দিই। কিন্তু আমার মতে একটু যাচাই–বাছাই করে খারাপ মানুষকে খারাপ হিসেবেই প্রত্যয়নপত্র দেওয়া উচিৎ। এতে অপরাধ প্রবণতা কমবে, অন্য খারাপ যারা তারা ভাল মানুষের প্রত্যায়ন পাবে না। তিনি বলেন, আমার জানা মতে শরীফ ধর্ষণ করেছে যার কারণে তাকে খারাপ হিসেবেই প্রত্যয়ন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে শুক্রবার রাতে নারায়ণগঞ্জের রুপগঞ্জ থেকে শরীফকে গ্রেপ্তার করে র্যাব সদস্যরা। পরের দিন শনিবার ঈশ্বরগঞ্জ থানা পুলিশ তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলে পাঠিয়েছে।