গায়ে জড়ানো দক্ষিণ আফ্রিকার পতাকা। মুখে চওড়া হাসি। ট্রফি সামনে রেখে এবি ডি ভিলিয়ার্স মেতে উঠলেন আনন্দনৃত্যে। এমন রূপে তাকে কে দেখেছে কবে। তার নাচের সঙ্গী ওয়েইন পার্নেল। তাদের অনুকরণে পেছনে দাঁড়িয়ে নাচলেন দলের অন্যরাও। শিরোপার উল্লাস যেমন হওয়া উচিত! খেলোয়াড়ি জীবনে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সব সংস্করণ রাঙিয়েও কখনও বৈশ্বিক শিরোপার ছোঁয়া পাননি ডি ভিলিয়ার্স। দেশের হয়ে একটি ট্রফি জয়ের স্বাদ পেলেন তিনি অবশেষে সাবেকদের ক্রিকেটে। তার অপ্রতিরোধ্য ব্যাটে পাকিস্তানকে উড়িয়ে ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ অব লেজেন্ডসের চ্যাম্পিয়ন দক্ষিণ আফ্রিকা। বার্মিংহামে ফাইনালে গত শনিবার পাকিস্তান চ্যাম্পিয়ন্সকে ৯ উইকেটে বিধ্বস্ত করে দক্ষিণ আফ্রিকা চ্যাম্পিয়ন। প্রাথমিক পর্বে দুই সেঞ্চুরি করা ডি ভিলিয়ার্স ফাইনালে উপহার দেন ৬০ বলে ১২০ রানের অপরাজিত ম্যাচ জেতানো ইনিংস। ফাইনালে ওঠার পথে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৫১ বলে অপরাজিত ১১৬ করেছিলেন তিনি।অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে করেছিলেন ৪৬ বলে ১২৩। পরে সেমি–ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেই ৬ রান করে তিনি আউট হয়ে যান পিটার সিডলের বলে। তবে ১ রানের রুদ্ধশ্বাস জয়ে দল পৌঁছে যায় ফাইনালে। শিরোপার মঞ্চে আবার জ্বলে উঠলেন তিনি। ২০১৮ সালে ৩৪ বছর বয়সে যখন আচমকাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছেড়ে দেন ডি ভিলিয়ার্স। হাহাকার পড়ে গিয়েছিল ক্রিকেট বিশ্বজুড়ে। পরে কয়েক বছর ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট রাঙিয়েছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার টি–টোয়েন্টি দলে তার ফেরা নিয়েও আলোচনা উঠেছে কয়েক দফায়। শেষ পর্যন্ত সেসব বাস্তব রূপ পায়নি। এই ৪১ বছর বয়সে সাবেকদের ক্রিকেটে তার পারফরম্যান্স যেন সেই পুরোনো আক্ষেপগুলোকেই জাগিয়ে তুলল আবার। আসরের ৬ ইনিংসে ৩ সেঞ্চুরি ও ১ ফিফটিতে তার রান ৪২৯। ব্যাটিং গড় ১৪৩, স্ট্রাইক রেট ২২০। গোটা আসরে ২০০ রানও করতে পারেননি আর কোনো ব্যাটসম্যান। ম্যান অব দ্যা ফাইনাল ও ম্যান অব দ্যা টুর্নামেন্ট সবই তিনি। এজবাস্টনে ফাইনালে পাকিস্তান ২০ ওভারে তোলে ১৯৫ রান। ওপেনিংয়ে শার্জিল খানের ৪৪ বলে ৭৬ রানের ইনিংস এগিয়ে নেয় দলকে। টপ অর্ডারের অন্যরা অবশ্য ভালো করতে পারেননি। কামরান আকমল বিদায় নেন ৫ বলে ২ করে, অধিনায়ক মোহাম্মাদ হাফিজ ফেরেন ১০ বলে ১৭ করে। শোয়েব মালিক ২০ রান করতে খেলেন ২৫ বল। তবে উমার আমিনের ১৯ বলে অপরাজিত ৩৬ ও আসিফ আলির ১৫ বলে ২৮ রানের ইনিংস পাকিস্তানকে নিয়ে যায় দুইশর কাছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার ওয়েইন পার্নেল ও হার্ডাস ভিলিওন দুটি করে উইকেট নেন, ডুয়ানে অলিভিয়ের একটি। লেগ স্পিনার ইমরান তাহির ও বাঁহাতি স্পিনার অধিনায়ক অ্যারন ফাঙ্গিসো আসজুড়ে ভালো বোলিং করলেও ফাইনালে ছিলেন বিবর্ণ।
চ্যালেঞ্জিং সেই লক্ষ্য স্রেফ তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেন ডি ভিলিয়ার্স ও দক্ষিণ আফ্রিকা। উদ্বোধনী জুটিতে পাওয়ার প্লেতেই ৬ ওভারে আসে ৭২ রান। তাতে হাশিম আমলার অবদান ছিল কেবল ১৪ বলে ১৮ রান। দ্বিতীয় উইকেটে জেপি দুমিনির সঙ্গে ডি ভিলিয়ার্সের অবিচ্ছিন্ন ১২৫ রানের জুটিতে দক্ষিণ আফ্রিকা জিতে যায় ১৯ বল বাকি রেখেই। ৬০ বলে ১২০ রানের ইনিংসে এক ডজন চারের সঙ্গে সাতটি ছক্কা মারেন ডি ভিলিয়ার্স। ২৮ বলে ৫০ রানে অপরাজিত থাকেন দুমিনি।