দেশকে বদলে দিতে তরুণদের নেতৃত্ব দিতে হবে : মেয়র

ইয়ুথ ভয়েস অব বাংলাদেশের চট্টগ্রাম সিটি ওয়ার্কিং কমিটির কাউন্সিল

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ৩ আগস্ট, ২০২৫ at ৮:৪৬ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশকে বদলে দিতে হলে তরুণদের নেতৃত্ব দিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। এ সময় তরুণদের উদ্দেশে দেশপ্রেম, আত্মত্যাগ ও ইতিবাচক মনোভাব ধারনের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, দেশপ্রেম ও সততা ছাড়া কোনো পরিবর্তন সম্ভব নয়। যুগে যুগে তরুণরাই দেশের সব বিপ্লবে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে তারুণ্যের ভূমিকা অনস্বীকার্য। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন সব ক্ষেত্রেই তরুণরাই সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে। জুলাই আন্দোলনেও তারুণ্যরা নেতৃত্ব দিয়েছে। আগামীতেও দেশ গঠনে এগিয়ে আসবে তারুণ্যরা। দেশের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য নেতৃস্থানীয় ভূমিকা নিতে হবে তারুণ্যকেই।

তিনি গতকাল শনিবার বিকেলে নগরের ওয়াসা মোড়ে প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির সেন্ট্রাল অডিটোরিয়াম হলে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের যুব নেতৃত্ব ভিত্তিক সংগঠন ‘ইয়ুথ ভয়েস অব বাংলাদেশ’ এর চট্টগ্রাম সিটি ওয়ার্কিং কমিটির জেনারেল কাউন্সিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। ইয়ুথ ভয়েস অব বাংলাদেশএর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার তারেক আকবর খোন্দকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য প্রফেসর ড. ফরিদ এ সোবহানী। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, সুপ্রিম কোর্ট এর ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার ওসমান চৌধুরী, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের আইন কর্মকর্তা (যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ) ব্যারিস্টার শাহনেওয়াজ মুনির এবং বিএনপি চেয়ারপারসনের ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যাডভাইজরি কমিটির সদস্য ইসরাফিল খসরু মাহমুদ চৌধুরী। উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকার।

ডা. শাহাদাত বলেন, হযরত মোহাম্মদ (সা.) তরুণ বয়সে ‘হিলফুল ফুজুল’ নামক সংগঠন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সমাজ পরিবর্তনের আন্দোলন শুরু করেছিলেন। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তরুণ বয়সে মুক্তিযুদ্ধের ডাক দিয়েছিলেন এবং বেগম খালেদা জিয়াও গৃহবধূ থেকে রাজপথে এসে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মাত্র ৩৫ বছর বয়সে। তিনি বলেন, তারুণ্য আর আপসহীন নেতৃত্বই দেশকে রক্ষা করেছে। আজকের বাস্তবতায় আমাদের তরুণ সমাজের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হলো দেশপ্রেম ধারণ করা। তারা যেন শুধু সমালোচনা না করে, সমস্যা সমাধানের চিন্তা করে। টরেন্টো সফরে সেখানে পড়াশোনা করা তরুণদের বলেছি, তোমরা শিক্ষা অর্জনের পর দেশের টেকনোলজি ট্রান্সফার করো। বাংলাদেশকে ভালোবেসে দেশের জন্য কাজ করতে হবে।

মেয়র ‘ক্লিন, গ্রিন, হেলদি এবং সেফ চট্টগ্রাম’ করতে কাজ করছেন জানিয়ে এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে জন্য তরুণদের পাশে চান বলে জানান। তিনি বলেন, ইয়ুথ ভয়েস অব অব বাংলাদেশ আমার এই যাত্রায় পাশে থাকবে বলে আমি বিশ্বাস করি। তরুণরাই আমাদের ভবিষ্যৎ। তাদের স্যাক্রিফাইস করার মানসিকতা আমাদের বাংলাদেশকে দুর্নীতি ও বৈষম্য মুক্ত এক নতুন বাংলাদেশে পরিণত করবে।

প্রফেসর ড. ফরিদ এ সোবহানী বলেন, আজ ৩৩ জুলাই। এই জুলাই গত বছর ছিল, এইবারও আছে। এবার কিছু পার্থক্য দেখা যাচ্ছে, কিছু অনৈক্য দেখা দিয়েছে। গণতন্ত্রের চর্চার জন্য একটা লেভল পর্যন্ত অনৈক্য এঙেপ্টেবল। কিন্তু অনৈক্য যখন বেশি দেখা দেয়, তখন কিন্তু সেটা দেশের জন্য উন্নয়নের জন্য ভালো নয়। এজন্য আমাদেরকে ঐক্যের কথা বলতে হবে। সবাই মিলে দেশের উন্নয়নের কথা বলতে হবে। তিনি বলেন, বিপ্লব অর্জন করা অনেক কঠিন। তার চেয়ে অনেক বেশি কঠিন বিপ্লবের চেতনাকে ধরে রাখা, বিপ্লবের লক্ষ্যকে বাস্তবায়িত করা। জুলাই বিপ্লবের আমাদেরকে বাস্তবায়িত করতে হবে।

ব্যারিস্টার মীর হেলাল বলেন, আমরা সবাই অর্থনৈতিক উন্নয়ন, জিডিপি ইত্যাদি নিয়ে কথা বলি। জিডিপি একদুই পয়েন্ট কমলে বা বাড়লে খুব চিন্তিত থাকি। কিন্তু আমি সবসময় বিশ্বাস করি, একটি দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন সূচক হওয়া উচিত মানব উন্নয়ন সূচক। এই উন্নয়ন সূচক কী? সংক্ষেপে বললে, এই সূচকের চারটি মূলনীতি হলাসমতা, উন্নয়ন, স্থায়িত্ব এবং ক্ষমতায়ন। যদি আমরা এই চারটি জিনিস নিশ্চিত করতে পারি, বিশেষ করে তরুণদের জন্য, তাহলে আমরা দেশ ও জাতির জন্য ভালো কিছু করতে পারব। তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটি সম্ভাবনাময় দেশ। আমাদের দরকার এমন একটি শক্তি যারা কেবল বাংলাদেশের জন্য পক্ষপাতদুষ্ট হবে, আর কিছু নয়। নিজেকে এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে যাতে আমরা দেশের জন্য, নিজের জন্য এবং পরিবারের জন্য ইতিবাচকভাবে অবদান রাখতে পারি। সব তরুণদের বলছি, এটাই সময়। দেশের জন্য কিছু করতে হবে। সামনে এগিয়ে যেতে হবে।

ব্যারিস্টার ওসমান চৌধুরী বলেন, যে কোনো নেগেটিভিটি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তরুণদের পজেটিভ ভাইবস ক্রিয়েট করতে হবে। তিনি তরুণদের রাজনীতি ও আইন বিষয়েও সচেতন হতে হবে, তবে এ জন্য রাজনীতিবিদ বা আইনজীবী হতে হবে না।

ব্যারিস্টার শহনেওয়াজ মুনির বলেন, তার‌্যুকে শুধু বয়স দিয়ে বিচার করলে হবে না। ইসরাফিল খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে ১৫ থেকে ২৯ বছরের জনগোষ্ঠী আছে ৪ কোটি ৬০ লক্ষ। এই বিশাল এই জনগোষ্ঠীকে যদি আমরা রাষ্ট্র গঠনে সম্পৃক্ত করতে না পারি তাহলে দেশকে সামনে নিতে পারবেন না। তিনি বলেন, ইয়ুথ ভয়েস বাংলাদেশ লিডারশিপ নিয়ে কাজ করে। লিডারশিপের জন্য চারটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ; সহমর্মিতা, মানুষের সমস্যা শুনার ধৈর্য্য, ইগো থাকা যাবে না এবং দেশপ্রেম। অর্থাৎ আপনি যাদের জন্য কাজ করবেন তাদের সমস্যাগুলো বুঝতে হবে, তার প্রতি সহমর্মিতা থাকতে হবে। আপনার যদি শোনার ধৈর্য্য না থাকে আপনি মানুষের সমস্যার সমাধান করতে পারবেন না। সবচেয়ে বেশি দরকার দেশপ্রেম, নিজের দেশটাকে ভালোবাসতে হবে।

ব্যারিস্টার তারেক আকবর খোন্দকার বলেন, পুঁথিগত বিদ্যার বাইরে তরুণদের মধ্যে নৈতিকতা, সমাজচিন্তা এবং দেশপ্রম থাকতে হবে। শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য কেবল পুঁথিগত বিদ্যা নয়, এর সঙ্গে নৈতিকতা, আদর্শ ও দেশপ্রেম গড়ে তোলা জরুরি। তরুণদের উচিত শিক্ষা গ্রহণের পাশাপাশি নৈতিক মূল্যবোধ ও দায়িত্বশীলতা নিয়ে দেশ ও সমাজের কল্যাণে কাজ করা। তিনি বলেন, যুব সমাজকে শুধু পড়াশোনার গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ না থেকে আত্মউন্নয়নের উপরও গুরুত্ব দিতে হবে। নেতৃত্বের গুণাবলী চর্চা ও সামাজিক সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। তিনি বলেন, ইয়ুথ ভয়েস অব বাংলাদেশ বিশ্বাস করেনেতৃত্ববান, মানবিক ও সচেতন যুবসমাজই আগামীর বাংলাদেশকে একটি উন্নত, শান্তিপূর্ণ ও ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্রে রূপান্তর করতে সক্ষম। তিনি দেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব গঠনে, সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে ও মানবিক মূল্যবোধের বিকাশে ইয়ুথ ভয়েস অব বাংলাদেশ এক দশকেরও বেশি সময় ধরে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে বলেও জানান।

ইয়ুথ ভয়েস অব বাংলাদেশ’এর চট্টগ্রাম সিটি ওয়ার্কিং কমিটির এবারের সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য ছিল ‘নেতৃত্বে তারুণ্য : নতুন বাংলাদেশের রূপরেখা’। সম্মেলনে ৪২টি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নির্বাচিত ১৪৫ জন মেধাবী তরুণ প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন। তাদের পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে আগত প্রায় ২০০ জন শিক্ষার্থীও এই সম্মেলনে অংশ নেন।

সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম সিটি কমিটির সদ্য সাবেক প্রেসিডেন্ট ডা. মুনিরা তারেক খোন্দকার, সাধারণ সম্পাদক আরেফিন বিল্লাহ, বর্তমান কমিটির কোঅর্ডিনেটর মোহাম্মদ আশিকুর রহমান, প্রথম কমিটির সভাপতি চৌধুরী কে এন এম রিয়াদ ও সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম খোকন। উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তার, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হাসান আলী চৌধুরী ও ব্যারিস্টার ফয়সাল দস্তগীর।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সকল শক্তির ঐক্য অটুট রাখতে হবে : সংস্কৃতি উপদেষ্টা
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬