অভিবাসনপ্রত্যাশী দুই বাংলাদেশির পক্ষে ইইউ আদালতের রায়, চটেছে ইতালি

| রবিবার , ৩ আগস্ট, ২০২৫ at ৮:৩৬ পূর্বাহ্ণ

অভিবাসন সংক্রান্ত এক মামলায় দুই বাংলাদেশি নাগরিকের পক্ষে রায় দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সর্বোচ্চ আদালত (ইসিজে)। এ রায়ের পর ইতালির বর্তমান অভিবাসন নীতি ও আলবেনিয়ার সঙ্গে করা দ্বিপাক্ষিক চুক্তি নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। আদালতের এ সিদ্ধান্তে ক্ষোভ জানিয়েছে ইতালির ডানপন্থি সরকার।

গত শুক্রবার লুঙ্মেবার্গে ইউরোপীয় আদালতের এই রায়টি ইউরো নিউজসহ ইতালির মূলধারার গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। রায়ে বলা হয়, কোনো দেশকে ‘নিরাপদ’ ঘোষণার ভিত্তিতে অভিবাসন আবেদন সরাসরি প্রত্যাখ্যান করা যাবে না। প্রতিটি আবেদন ‘ব্যক্তিকেন্দ্রিক’ পর্যালোচনা করতে হবে এবং আবেদনকারীর নিজ দেশে ফেরত যাওয়া আদৌ নিরাপদ কিনা, তা মূল্যায়নের আওতায় আনতে হবে। খবর বিডিনিউজের।

মামলার শুরু হয় লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালিতে অবৈধভাবে প্রবেশ করা দুই বাংলাদেশি নাগরিককে ঘিরে। তারা সেখানে পৌঁছানোর পরপরই ইতালির সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আলবেনিয়ায় পাঠানো হয়। ওই দুই ব্যক্তি আলবেনিয়ায় অবস্থানরত অবস্থাতেই ইতালিতে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেন, যা ইতালির আদালত বাতিল করে। পরে মানবাধিকার সংস্থার সহায়তায় তারা ইউরোপীয় আদালতে আপিল করেন।

ইইউ আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, কোনো দেশকে ‘নিরাপদ’ ঘোষণা করতে হলে সুনির্দিষ্ট, স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য প্রমাণের ভিত্তিতে সে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। জাতি, ধর্ম, মতাদর্শ বা গোষ্ঠীভেদে কোনো শ্রেণি যদি ঝুঁকিতে থাকে, তবে ওই দেশকে সামগ্রিকভাবে নিরাপদ বলা যাবে না।

এ রায়ের ফলে বাংলাদেশসহ আরও কয়েকটি দেশ ইতালির ‘নিরাপদ দেশের তালিকা’ থেকে বাদ পড়ার আশঙ্কায় পড়েছে। এ রায়ের পর ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জা মেলোনির দপ্তর থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, এই রায় একটি রাষ্ট্রের আইন প্রণয়নের সার্বভৌম অধিকারকে বাধাগ্রস্ত করেছে। ইতালি ইউরোপীয় ও আন্তর্জাতিক আইন মেনেই অভিবাসন নীতি পরিচালনা করে।

অন্যদিকে, ইতালির বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো আদালতের এই রায়কে সরকারের অভিবাসন নীতির বিরুদ্ধে আইনি বিজয় হিসেবে দেখছে। ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সাধারণ সম্পাদক এলি স্‌ক্েলইন বলেন, আলবেনিয়ার সঙ্গে ইতালির অভিবাসন চুক্তিটি শুরু থেকেই আইনবিরুদ্ধ ছিল। ইইউ আদালতের রায় আমাদের অবস্থানকে দৃঢ় করেছে।

আদালত আরও নির্দেশ দিয়েছে, আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য স্থাপিত ক্যাম্পগুলোতে ন্যূনতম মানবিক সেবা ও অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। কোনো প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে মৌলিক মানবাধিকার খর্ব করা যাবে না।

২০২৩ সালে ইতালি ও আলবেনিয়ার মধ্যে একটি চুক্তি হয়, যার আওতায় ‘নিরাপদ’ দেশ থেকে আগত অভিবাসনপ্রত্যাশীদের আলবেনিয়ায় অবস্থিত প্রসেসিং সেন্টারে পাঠিয়ে আবেদন যাচাই করা হয়। ২০২৪ সালের অক্টোবরে ইতালি নতুন করে ‘নিরাপদ দেশের তালিকা’ প্রকাশ করে, যেখানে বাংলাদেশ ও মিশরসহ বেশ কয়েকটি দেশের নাম যুক্ত করা হয়। তবে ইইউ আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, তালিকা তৈরিতে ‘স্বচ্ছতা ছিল না’ এবং এর ফলে অনেক ‘দুর্বল ও ঝুঁকিপূর্ণ’ অভিবাসী সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

বর্তমানে আলবেনিয়ায় স্থাপিত ইতালির প্রসেসিং সেন্টারগুলোতে মাত্র কয়েক ডজন অভিবাসনপ্রত্যাশী রয়েছেন, যদিও সরকারের লক্ষ্য ছিল মাসে অন্তত তিন হাজার আবেদনকারী স্থানান্তর। ইতালির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় দেখা গেছে, এসব কেন্দ্রের প্রতিটি আবাসন স্থান পরিচালনার খরচ সিসিলির অনুরূপ সেন্টারের তুলনায় প্রায় সাতগুণ বেশি, প্রতি জনে আনুমানিক ১ লাখ ৫৩ হাজার ইউরো। অন্যদিকে, ২০২৬ সাল থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি নতুন অভিবাসন আইন কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে, যেখানে ‘নিরাপদ দেশ’ ঘোষণার ক্ষেত্রে কিছু ব্যতিক্রম রাখার বিধান যুক্ত করা হয়েছে। ইউরোপীয় কমিশন এরইমধ্যে একটি অনানুষ্ঠানিক ‘নিরাপদ দেশের তালিকা’ প্রস্তাব করেছে, যেখানে বাংলাদেশ ও মিশরের নাম এখনো রয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধতথ্যে ভুল থাকলে সংশোধনের সুযোগ মিলবে ১২ দিন
পরবর্তী নিবন্ধআজ নতুন বাংলাদেশের রূপরেখা দেবে এনসিপি