কক্সবাজারের রামুতে সিএনজিচালিত টেক্সিতে ট্রেনের ধাক্কায় একই পরিবারের তিনজনসহ ৪ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে রয়েছে একজন শিশু। গতকাল শনিবার দুপুর সোয়া ১টার দিকে ঢাকা–কক্সবাজার রুটের রামু উপজেলার রশিদনগর ইউনিয়নের ধলিরছড়া রেল ক্রসিং এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার পর চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারমুখী পর্যটক এক্সপ্রেস নামের আরেকটি ট্রেন ঘটনাস্থলে পৌঁছলে তা চার ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।
নিহতরা হলেন কক্সবাজার সদরের ভারুয়াখালী এলাকার আবদুল মান্নানের স্ত্রী রেনু আকতার (৩২), রামু রশিদনগর কালিরছড়া এলাকার হাফেজ জান্নাত উল্লাহর স্ত্রী আসমাউল হোসনা (২৭), তার ছেলে আশেক উল্লাহ (১৩ মাস) এবং ঈদগাঁও মেহের ঘোনা এলাকার মোহাম্মদ সৈয়দ নুরের ছেলে টেক্সিচালক হাবিব উল্লাহ (৪০)।
রশিদনগর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক মাসুম জানান, দুপুরে কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসা কক্সবাজার এক্সপ্রেস ধলিরছড়া রেল ক্রসিং এলাকায় পৌঁছে। এ সময় ভারুয়াখালীমুখী একটি যাত্রীবাহী টেক্সি রেল ক্রসিং অতিক্রম করছিল। কিন্তু পার হওয়ার আগেই ট্রেন ধাক্কা দিয়ে টেক্সিটিকে টেনেহিচঁড়ে প্রায় এক কিলোমিটার দূর পর্যন্ত নিয়ে যায়। এতে টেক্সিটি দুমড়ে–মুচড়ে গিয়ে ঘটনাস্থলে চালক ও শিশুসহ ৪ জন নিহত হয়েছে। ঘটনার পরপরই ট্রেনটি ঘটনাস্থল ত্যাগ করে ঢাকার উদ্দেশ্যে চলে যায়।
রামু থানার ওসি তৈয়বুর রহমান জানান, ঘটনার পর খবর পেয়ে দ্রুত পুলিশের দল ঘটনাস্থলে যায়। তখন এলাকার সাধারণ লোকজন উত্তেজিত হয়ে পড়ে। তারা রেলপথে অবস্থান করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। এ সময় দুপুর আড়াইটার দিকে চট্টগ্রাম দিক থেকে আসা কক্সবাজারমুখী পর্যটক এক্সপ্রেস নামের ট্রেনটিকে বিক্ষুদ্ধ জনতা ঘটনাস্থলে আটকে দেয়। এরপর চার ঘণ্টা ট্রেনটি অবরুদ্ধ করে রাখে এবং ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেয়। এলাকার লোকজন দাবি করেন, রেল ক্রসিংয়ে গেট ও গেটম্যান না থাকায় সতর্ক সংকেত না পাওয়ায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। এই জন্য রেল কর্তৃপক্ষকে দায়ী করেন তারা। তাতে ক্ষুব্ধ হয়ে আটকে দেয়া পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনটি ভাংচুরের চেষ্টা করেন। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে দ্রুত ঘটনাস্থলে যায় সেনাবাহিনী ও র্যাবের দল। তারপর সব আইন–শৃক্সখলাবাহিনী মিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে নিহতদের স্বজনদের অনুরোধে উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করা হয় এবং চার ঘণ্টা পর বিকাল ৫টার দিকে আটকে রাখা ট্রেনটি মুক্ত করা হয়। এরপর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
এদিকে ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে যায় কক্সবাজারের পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মো. জসীম উদ্দিন চৌধুরী নেতৃত্বে জেলা পুলিশের একটি দল। এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মো. জসীম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত ভয়ংকর ও মর্মান্তিক। ঘটনাস্থল থেকে দীর্ঘস্থান পর্যন্ত নিহতদের হাত, পা, মাথার খুলি, শরীরের মাংসসহ বিভিন্ন অংশ ছড়িয়ে–ছিটিয়ে পড়ে। পরে এসব অংশ কুড়িয়ে এক স্থানে করে মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ দুর্ঘটনার বিষয়ে রেল পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান তিনি।