চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির বিলুপ্ত কমিটির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকারের উপর পূর্বপরিকল্পিতভাবে হামলা এবং হত্যার উদ্দেশে তাকে লক্ষ্য করে গুলি করা হয় বলে দাবি করেছেন রাউজান উপজেলা বিএনপির একাংশের নেতারা। গতকাল বিকেলে নগরের নাসিমন ভবনে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করা হয়। রাউজান উপজেলা ও পৌর বিএনপি এবং অঙ্গসংগঠনের ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গোলাম আকবর খোন্দকারের অনুসারী হিসেবে পরিচিত নেতৃবৃন্দ অংশ নেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে রাউজান উপজেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী (পদ স্থগিত হওয়া বিএনপির ভাইস–চেয়ারম্যান) সমর্থিত আজিজুল হক, সাবের সুলতান কাজল, মোহাম্মদ রিয়াজ, শাহজান সাহিল, লিটন মহাজন, শাহাদত মির্জা, ইউছুপ তালুকদার, মোহাম্মদ সোহেল, মোহাম্মদ একরাম, রাসেল খান, মোহাম্মদ শহিদসহ সহ ৭০/৮০ জন সন্ত্রাসী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বিএনপি’র নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করে। এসময় গোলাম আকবর খোন্দকারসহ প্রায় ৩০ জন নেতাকর্মী আহত হন। গোলাম আকবর খোন্দকারের ব্যবহৃত পাজেরো জিপ ব্যাপক ভাঙচুর করে, ৯/১০টি মোটর সাইকেল পুড়িয়ে ফেলে এবং ২০টি মোটর সাইকেল নিয়ে যায়।
জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, এটা পূর্বপরিকল্পিত হামলা ছিল। গোলাম আকবর খোন্দকারকে যারা প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে তারাই উনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করেছে। পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ, জনপ্রিয় নেতা গোলাম আকবর খোন্দকারকে তারা সহ্য করতে পারে না। উনি রাউজানে গেলে তাদের মাথা খারাপ হয়ে যায়। উনার জনপ্রিয়তায় তারা শঙ্কিত। এজন্য গোলাম আকবর খোন্দকারকে তারা যে কোনোভাবে প্রতিহত করতে চাচ্ছে। আপনারা দেখেছেন, গতকাল উনাকে লক্ষ্য করে গুলি করা হয়েছে। গুলিটা যদি উনার কাঁধের আর এক ইঞ্চি কিংবা আধা ইঞ্চি কাছ দিয়ে যেত, তাহলে উনি স্পটেই মারা যেতেন।
তিনি বলেন, আমরা মূলত আমাদের প্রয়াত নেতা মহিউদ্দিন আহমদের কবর জিয়ারতের জন্য যাচ্ছিলাম। আমাদের আর কোনো কর্মসূচি ছিল না। আমরা নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত ছিলাম না, সে জন্য আমাদের কোনো প্রস্তুতিও ছিল না, কারণ আমরা তো কোনো যুদ্ধে যাচ্ছিলাম না। কিন্তু সেখানে আমাদের কর্মসূচিতে বাধা দিয়েছে গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সমর্থিত কিছু সন্ত্রাসী।
তিনি বলেন, রাউজানে গেলে কিছু ঝামেলা হতে পারে, এটা আমরা শুনেছিলাম। আমরা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। প্রশাসন বলেছিল, এ ধরনের কোনো ঝামেলা হলে তারা সেটা মোকাবিলা করবে, তারা সেটা ব্যর্থ করবে। আমাদের বলেছিল, আপনারা আসতে পারেন। প্রশাসন আশ্বস্ত করেছিল, সে জন্য আমরা গিয়েছিলাম।
তিনি বলেন, এরা (হামলাকারী) বিএনপির নাম ব্যবহার করলেও বিএনপির রাজনীতিতে তারা বিশ্বাস করে না। এরা সন্ত্রাসী। এরা যাদের প্রতিপক্ষ মনে করে তাদের ওপর হামলা করে। আমরা হামলাকারীদের গ্রেফতার দাবি জানাচ্ছি, তাদের বিচার চাই। আমাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে যিনি নিজেকে দাবি করেন, গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী, উনার দলীয় সব পদ কেন্দ্র থেকে স্থগিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, এই সন্ত্রাসী বাহিনী ইতোমধ্যে রাউজানে ১৫জন মানুষ খুন করেছে। তারা চাঁদাবাাজি, লুটপাট, বালু মহাল দখল, মাটি কাটা ও জায়গা জমি দখল করে রাউজানে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে এবং বসবাসের অযোগ্য গড়ে তুলেছে। আমরা ঘটনার সাথে জড়িত সন্ত্রাসীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনার দাবি করছি।
এ ঘটনায় মামলা করা হয়েছে কীনা জানতে চাইলে বলেন, আমরা এখনো মামলা করিনি। মামলা করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মামলা করার চেষ্টা করছি। প্রশাসনও কোনো গ্রেপ্তারের কাজ শুরু করেনি। কেন্দ্র থেকেও মামলা না করার বিষয়ে কোনো চাপ নেই। উত্তর জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্তির এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, অনেক বছর হয়ে গেছে। তাই গোলাম আকবর খোন্দকার নিজেও ওই পদে থাকতে চাচ্ছিলেন না। এটা অনেকদিন আগে থেকেই প্রক্রিয়া চলছিল। এটা (কমিটি বিলুপ্ত) গতকালের ঘটনার কোনো রিঅ্যাকশন না।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার বিকেলে রাউজানের সর্তারঘাট এলাকায় গিয়াস কাদের ও গোলাম আকবর খোন্দকারের অনুসারিদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এসময় গোলাম আকবরসহ উভয় পক্ষের অর্ধশতাধিক আহত হন। হামলার জন্য গিায়াস কাদেরকে দায়ি করেন গোলাম আকবর। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেন গিয়াস কাদের। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবদল সভাপতি হাসান মোহাম্মদ জসিম, রাউজান পৌরসভা বিএনপির সভাপতি আবু মোহাম্মদ, শফিউল আলম চৌধুরী, অ্যাড. ফরিদা বেগম, জিয়াউদ্দিন, মুরাদুল আলম, নাছির উদ্দিন, এইচ এম নুরুল হুদা, জি এম মুর্শেদ, কমলেন্দু শীল, শরাফত উল্লাহ বাবুল, দিদারুল আলম, অ্যাড আবু সাঈদ, এন আই বাবুল, আব্দুল মান্নান, মাহবুবুল আলম, জসিম উদ্দিন, হাসান মোহাম্মদ মুর্শেদ, নুরুল আজিম, মো. আনোয়ার, শেখ মো. জাহাঙ্গীর আলম, মহিউদ্দিন চৌধুরী, ইমরানুল হক সোহেল, শাকিল ইসলাম মন্জুরুল আলম, নাঈম উদ্দিন মিনহাজ, রায়হান উদ্দিন ইরফান, শাফায়েত রাকিব ও শাহজামান।