চট্টগ্রামে অব্যাহত রয়েছে ডেঙ্গু–চিকুনগুনিয়ার দাপট। এই রোগ দুটি এডিস মশার কামড় থেকে সৃষ্টি হয়। চলতি জুলাই মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৬ জন মারা গেছেন। আগের ছয় মাসে মারা গেছেন মাত্র দুইজন। জুলাই মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুহার দুটোই বাড়ছে। এ মাসে মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ৩৮২ জন। সব মিলিয়ে চলতি বছর মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৮২৭ জন। অপরদিকে চিকুনগুনিয়ার আক্রান্তের হারও বাড়ছে। চলতি বছর গতকাল পর্যন্ত চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ৮০৩ জন। তবে সরকারি পর্যায়ে চট্টগ্রামে চিকুনগুনিয়া পরীক্ষা ব্যবস্থা নেই। এছাড়া বেসরকারি ল্যাবেও পরীক্ষার সুবিধা সীমিত। তাই অনেক রোগী পরীক্ষার বাইরে রয়ে গেছেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বেশিরভাগ চিকিৎসক তাই রোগীর উপসর্গ দেখেই চিকিৎসা দেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের জ্বর থাকলেও সর্দি কাশি থাকে না। রোগীদের গায়ে ব্যথা থাকে। গায়ে ফুসকুড়ি (র্যাশ) থাকতে পারে, নাও থাকতে পারে। ডেঙ্গু রোগীদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, চোখের পেছনে, পিঠ–কোমর ও মাংসপেশিতে ব্যথা থাকে। আর চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তদের ক্ষেত্রে দেহের গিঁটে গিঁটে ব্যথা থাকে। পা ফুলে যায়। গায়ে ফুসকুড়ি থাকে। ব্যথার মাত্রা এত বেশি থাকে যে রোগী হাঁটতে পারেন না। অন্যদিকে ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে মৃত্যুঝুঁকি বেশি থাকে। ডেঙ্গুর তিন–চার দিন পর জ্বরের প্রকোপ কমে এলে জটিলতা দেখা দিতে পারে। অনেকের ফুসফুসে পানি জমে যেতে পারে। রক্তচাপ কমে যেতে পারে। অনেকের মধ্যে ভুল ধারণা রয়েছে যে প্লাটিলেট কমে গেলে বিপদ বেশি। কিন্তু প্লাটিলেটের চেয়ে রক্তচাপ কমে গেলে ভয় বেশি। কারও প্লাটিলেট যদি ৫ হাজারেও নেমে যায়, কিন্তু রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে তাহলে ঝুঁকি নেই। চিকুনগুনিয়ায় মৃত্যুঝুঁকি কম, কষ্ট বেশি। চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ৭০ শতাংশ এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে সুস্থ হয়ে যান। ৩০ শতাংশ ক্ষেত্রে রোগী তিন মাস পর্যন্ত অসুস্থ থাকতে পারেন, গায়ে ব্যথা থাকতে পারে। ৫ থেকে ৭ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে সুস্থ হতে বছরের পর বছর লেগে যেতে পারে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. আবদুর রব বলেন, ডেঙ্গুর পাশাপাশি চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত রোগী বাড়ছে। চিকুনগুনিয়ায় জ্বর সেরে যাওয়ার পরে শরীরে ব্যাথা থাকছে। রোগী সিঁড়ি বেয়ে উঠানামা করতে হিমশিম খেতে হয়। অপরদিকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে বাসায় চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চিকিৎসা নিতে পারবেন। তবে দীর্র্ঘমেয়াদি রোগ যাদের রয়েছে, তাদের একটু সতর্ক থাকতে হবে। শারীরিক কোনো জটিলতা দেখা দিলে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে।
উল্লেখ্য, রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) সম্প্রতি এক প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে চট্টগ্রাম নগরীর ছয়টি এলাকায় মশা চিহ্নিতকরণে চালানো জরিপের ফলাফল প্রকাশ করে। এই এলাকাগুলো হলো– চট্টেশ্বরী রোড (ওয়ার্ড ১৫), ও আর নিজাম রোড (ওয়ার্ড ১৫), আগ্রাবাদ (ওয়ার্ড ২৭), পাহাড়তলী (ওয়ার্ড ৯), হালিশহর (ওয়ার্ড ২৬), এবং ঝাউতলা (ওয়ার্ড ১৩)। জরিপকালে মোট ১২৮টি বাড়ি পরিদর্শন করা হয়, যার মধ্যে ৬২টি বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, নগরীর এসব এলাকা ডেঙ্গু চিকুনগুনিয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। এছাড়া প্রতিবেদনে তিনটি সুপারিশ করা হয়। সেগুলো হলো, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর লক্ষণ বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান করা। কীটতাত্ত্বিক জরিপের ফলাফলের ভিত্তিতে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাসমূহে অনতিবিলম্বে মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনা করা এবং পর্যায়ক্রমে সিটি কর্পোরেশনের অন্যান্য ওয়ার্ডসমূহকে উক্ত কার্যক্রমের আওতায় আনা এবং মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে জনগণের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করা।