কয়েক মাসের আন্তর্জাতিক চাপ ও ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডটিতে ক্ষুধা ছড়িয়ে পড়া নিয়ে ত্রাণ সংস্থাগুলোর অব্যাহত সতর্কবার্তার পর ত্রাণবাহী ট্রাকগুলো মিশর থেকে গাজার পথে যাত্রা শুরু করেছে। খবর বিডিনিউজের।
রোববার মিশরের রাষ্ট্র সংশ্লিষ্ট টেলিভিশন আল কাহেরা নিউজ এ খবর দিয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। এদিকে ইসরায়েল বলেছে, তারা শনিবার গাজায় আকাশ থেকে ত্রাণ ফেলার কার্যক্রম এয়ারড্রপ শুরু করেছে এবং গাজার মানবিক সঙ্কট লাঘবে আরও কয়েকটি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলেছে, গাজাবাসীর কাছে ত্রাণ পৌঁছে দিতে জাতিসংঘের যানবাহনগুলোর নিরাপদ চলাচলে মানবিক করিডর চালু হবে এবং ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোতে এই মানবিক বিরতি কার্যকর হবে। মিশর ও গাজার মধ্যকার রাফাহ সীমান্ত থেকে আল কাহেরা নিউজের প্রতিবেদক বলেছেন, টনকে টন ত্রাণ নিয়ে ডজনের বেশি ট্রাক দক্ষিণ গাজার কারাম আবু সালেম ক্রসিংয়ের দিকে অগ্রসর হয়েছে। আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলো বলছে, ইসরায়েলি অবরোধের কারণে গাজার ২২ লাখ জনসংখ্যার বেশিরভাগই তীব্র অনাহারে ভুগছে। মার্চে তেল আবিব ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডটিতে ত্রাণ সরবরাহের সব পথ বন্ধ করে দিয়েছিল, মে–তে সীমিত আকার খুললেও দেয় নানান বিধিনিষেধ। ইসরায়েল বলছে, তারা গাজায় পর্যাপ্ত খাবার ঢুকতে দিয়েছে, কিন্তু জাতিসংঘ সেসব ঠিকঠাক বিতরণে ব্যর্থ হয়েছে। জাতিসংঘ অভিযোগ অস্বীকার করে বলছে, ইসরায়েলি বিধিনিষেধের মধ্যেই তারা যতটা সম্ভব দক্ষতার সঙ্গে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। দোহায় ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি সশস্ত্রগোষ্ঠী হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি নিয়ে পরোক্ষ আলোচনা কোনো চুক্তি ছাড়াই ভেঙে পড়ার পর গাজায় আকাশ থেকে ত্রাণ ফেলার ইসরায়েলি সিদ্ধান্ত আসে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানায়, আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করেই এই এয়ারড্রপগুলো পরিচালনা করা হবে এবং সেসব ড্রপে আটা, চিনি ও টিনজাত খাদ্যের ৭টি বড় চালান থাকবে। পরে ফিলিস্তিনি সূত্রগুলো উত্তর গাজায় আকাশ থেকে ত্রাণ ফেলা শুরু হয়েছে বলে জানায়। ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, তাদের সেনাবাহিনী রোববার সকালে বেসামরিক কেন্দ্র ও মানবিক করিডোরগুলোতে মানবিক বিরতি মেনে চলবে।
তারা এ নিয়ে আর বিস্তারিত কিছু বলেনি। আইডিএফ জোরের সঙ্গে বলছে, গাজা ভূখণ্ডে কোনো অনাহার নেই, এটা হামাস পরিচালিত একটি মিথ্যা প্রচারণা। গাজার লোকজনের মধ্যে খাবার বিতরণের দায়িত্ব জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলোর। তারা তাদের ত্রাণ বিতরণের কার্যকারিতা বাড়াবে এবং ত্রাণ যেন হামাসের কাছে না পৌঁছায় তা নিশ্চিত করব্তেএমনটাই প্রত্যাশা করা হচ্ছে, শনিবার বিবৃতিতে এমনটাই বলেছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। তবে তারা জানিয়েছে, মানবিক নানা পদক্ষেপ নেওয়া হলেও গাজা ভূখণ্ডে সামরিক অভিযান বন্ধ হয়নি।
এদিকে ত্রাণবাহী একটি জাহাজে থাকা আন্তর্জাতিক মানবাধিকারকর্মীরা এঙে এক পোস্টে জানিয়েছেন, তাদের জাহাজটি আটক করা হয়েছে। ওই জাহাজটি ইতালি থেকে গাজার দিকে যাচ্ছিল। ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও পরে এঙে এক পোস্টে জানায়, তাদের নৌবাহিনী গাজা উপকূলের সমুদ্রসীমা অঞ্চলে অবৈধভাবে প্রবেশ করা থেকে ওই জাহাজটিকে থামিয়েছে।
জাহাজটিকে ইসরায়েল উপকূলে নেওয়া হচ্ছে এবং সব যাত্রী নিরাপদে রয়েছে, বলেছে তারা। বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ বলেছিল, গাজায় মানবিক বিরতি ত্রাণ সহায়তার মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করবে।
ইসরায়েল জাতিসংঘের ত্রাণবহরের জন্য পর্যাপ্ত বিকল্প রুট দেয়নি, যা ত্রাণ সরবরাহে বাধা সৃষ্টি করছে বলেও অভিযোগ করেছিল তারা। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, গত কয়েক সপ্তাহে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডটিতে অপুষ্টিতেই কয়েক ডজন গাজাবাসীর মৃত্যু হয়েছে।
২০২৩ সালের অক্টোবরে, ইসরায়েল–হামাস যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত গাজায় অপুষ্টিতে মোট ১২৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে, যার মধ্যে ৮৫টিই শিশু। বুধবার শতাধিক ত্রাণ সংস্থা গাজায় বিস্তৃত আকার ক্ষুধা ছড়িয়ে পড়ছে বলে সতর্ক করেছিল।
শনিবার ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা লবণাক্ত পানি বিশুদ্ধ করার একটি কেন্দ্রে বৈদ্যুতিক সংযোগ দিয়েছে, এই কেন্দ্রটি প্রতিদিন প্রায় ৯ লাখ গাজাবাসীর দৈনন্দিন পানির চাহিদা মেটাতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস সীমান্ত অতিক্রম করে ইসরায়েলের ভেতর ঢুকে তাণ্ডব চালানোর পর তেল আবিব গাজায় ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধে নামে। হামাসের সেদিনের হামলায় প্রায় এক হাজার ২০০ লোক নিহত হয়েছিল বলে ভাষ্য ইসরায়েলির। জিম্মি করা হয়েছিল আড়াইশ জনকে। ওই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল গত দুই বছর ধরে সাঁড়াশি হামলায় গাজার প্রায় ৬০ হাজার মানুষকে হত্যা করেছে, এবং ভূখণ্ডটির সিংহভাগ অংশকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে।