কম্বোডিয়ার সঙ্গে সীমান্তে চলমান রক্তক্ষয়ী সংঘাত আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের জন্য মালয়েশিয়ার মধ্যস্থতা মেনে নিতে রাজি থাইল্যান্ড। খবর বিডিনিউজের।
মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহামদ হাসান একথা জানিয়েছেন। রোববার বারনামা সংবাদ সংস্থাকে মোহামদ হাসান জানান, কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত এবং থাইল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচায়াচাই সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধান খুঁজতে সোমবার সন্ধ্যায় মালয়েশিয়ায় যাবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, তাদের মালয়েশিয়ার ওপর পূর্ণ আস্থা আছে এবং আমাকে মধ্যস্থতাকারী হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে। কম্বোডিয়া এবং থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে জানিয়ে হাসান আরও বলেন, অন্য কোনও দেশের এ বিষয়ে জড়িত হওয়া উচিত নয় বলে তারা একমত হয়েছে।
মালয়েশিয়র প্রধানমন্ত্রী ও দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ান–এর চেয়ারম্যান আনোয়ার ইব্রাহিম গত শুক্রবার কম্বোডিয়া ও থাইল্যোন্ডের মধ্যে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছিলেন। শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, দু্ব দেশের নেতা যুদ্ধবিরতি নিয়ে কাজ করতে রাজি হয়েছে। তারপরই থাইল্যান্ড ও কম্বেডিয়ার মালয়েশিয়ায় বৈঠকে বসতে চলার এই খবর এল।
হাসান বলেন, আমার বিশ্বাস, মালয়েশিয়ার প্রথমে একজন মধ্যস্থতাকারী হিসাবে কাজ করাই উত্তম, যেহেতু এটি আসিয়ানের অভ্যন্তরীন বিষয়। আসিয়ানের চেয়ারম্যান হিসাবে মালয়েশিয়ার এই ভূমিকা পালন করা উচিত। দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার দুই প্রতিবেশী দেশ কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ড এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে এবারই সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘাতে লিপ্ত হয়েছে। দুই পক্ষের সীমান্ত সংঘর্ষে চার দিনেই ৩০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
এদের মধ্যে থাইল্যান্ডের ১৩ জন আর কম্বোডিয়ার ৮জনই বেসামরিক।
দুই দেশের সীমান্ত এলাকাগুলো থেকে দুই লাখের বেশি মানুষকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষগুলো জানিয়েছে। কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, রোববার সকালে সীমান্তের একাধিক পয়েন্টে থাইল্যান্ড গোলাবর্ষণ ও স্থল হামলা চালিয়েছে। ঐতিহাসিক মন্দির প্রাঙ্গণগুলোতে ভারি অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে গোলাবর্ষণ করা হয়েছে, বলেছেন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র। ওদিকে, থাই সেনাবাহিনী বলেছে, কম্বোডিয়ার সেনারা রোববার ভোরের আগে বেসামরিকদের বাড়িঘরের কাছে একাধিক এলাকায় গোলা ছুড়েছে এবং তারা দূরপাল্লার রকেট লঞ্চার মোতায়েন করেছে।
থাইল্যান্ডের সিসাকেত প্রদেশে রয়টার্সের সাংবাদিকরা রোববার দিনভর গোলার শব্দ শুনতে পেয়েছেন, তবে এসব শব্দ সীমান্তের কোন পাশ থেকে আসছিল তা নিশ্চিত হতে পারেননি তারা। দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত নিয়ে বিরোধ শতবর্ষ পুরনো, ফরাসী ঔপনিবেশিকরা কম্বোডিয়া ছেড়ে চলে যাওয়ার পর সীমানা নির্ধারণ নিয়ে এ বিরোধ দেখা দেয়। এ নিয়ে মাঝে মাঝেই প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে সংঘাত হয়েছে, সেনা ও বেসামরিক নাগরিকদের প্রাণও গেছে। সর্বশেষ উত্তেজনার সূচনা ঘটে মে মাসে, যখন এক সংঘর্ষে কম্বোডিয়ান এক সেনা নিহত হয়। এরপর দ্রুতই দুই প্রতিবেশীর মধ্যে সম্পর্ক এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে চলে যায়।