সড়ক খোঁড়াখুঁড়িতে রুলস মানছে না ওয়াসা, আইনগত ব্যবস্থা ছাড়া উপায় দেখছি না

সংবাদ সম্মেলনে মেয়র ।। আনন্দিপুরে আবাসিকে গার্মেন্টস গড়ে ওঠা নিয়ে সিডিএর প্রতিও ক্ষোভ কথা বললেন মশক নিধন কার্যক্রম, ডোর টু ডোর প্রকল্প এবং নগর সরকার প্রসঙ্গেও

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ২৮ জুলাই, ২০২৫ at ৪:৩০ পূর্বাহ্ণ

সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি করতে গিয়ে ওয়াসা আইন মানছে না দাবি করেছেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। এভাবে চলতে থাকলে সংস্থাটির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া ছাড়া উপায় থাকবে না বলেও সতর্ক করেন তিনি। মেয়র বলেন, হালিশহর এলাকায় সড়কের এই বেহাল অবস্থা কেন? কারণ ওয়াসা কোনো রুলস মানছে না। তারা তাদের মতো করে ঘেরাও দিয়ে সড়ক কাটছে। এতে সড়ক ভাঙছে। ঠিকমতো মেরামত করছে না। তারা হালিশহরকে নষ্ট করে দিয়েছে। আমরা বারবার তাগাদা দিচ্ছি। এখন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া আর কোন উপায় দেখছি না। তাদের কারণে সিটি কর্পোরেশনের বদনাম হচ্ছে।

তিনি গতকাল দুপুরে টাইগার পাস চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) অস্থায়ী কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন এসব কথা বলেন। কানাডা সফর শেষে নগরীর সার্বিক উন্নয়ন, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরার পাশাপাশি নগরের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কথা বলেন মেয়র। এসময় মেয়র হালিশহর আনন্দিপুরে আবাসিক এলাকায় গার্মেন্টস গড়ে ওঠা নিয়ে সিডি’এর প্রতিও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, সিডিএ’র কাছে জানতে চাচ্ছি, সেখানে (হালিশহর আনন্দিপুর) কীভাবে গার্মেন্টস করেছে। কীভাবে আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক ভবন করেছে। করেছে করেছে কমপ্ল্যায়েন্স মানেনি। কীভাবে পোশাক কারখানার জন্য ভবন নির্মাণে অনুমোদন পেল? এগুলো সিডিএর দেখার দায়িত্ব। এমন একটি এলাকায় কীভাবে পোশাক কারখানার জন্য ভবন নির্মাণে অনুমোদন পেল? এগুলো সিডিএর দেখার দায়িত্ব। সিডিএর কাছে তা জানতে চাই। এর আগে গত ৯ জুলাই হালিশহর আনন্দিপুরে নালায় পড়ে ৩ বছরের শিশু মৃত্যু ঘটনায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, অতীতে কিন্তু যারা এডাল্ট তারা মারা গেছে। কিন্তু এখানে ছোট বাচ্চা। বৃষ্টি বাদ দিলাম, এমনিতে নালায় পড়ে গেলেও তো উঠতে পারবে না। তিনি বলেন, একটি শিশু কখনোই স্বাধীন নয়, সে সম্পূর্ণ নির্ভরশীল। গার্মেন্টস হোক বা অন্য কোনো কর্মস্থলে শিশুকে সঙ্গে নিয়ে গেলে তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব কর্মীরই। শিশুকে যদি সামলে রাখা সম্ভব না হয়, তবে গেটকিপার বা অন্য কারও কাছে দায়িত্ব দিয়ে যেতে হবে। এই দায়িত্ব অবহেলা করা যায় না। সিটি কর্পোরেশন কিংবা অন্য কোনো সংস্থার পক্ষে সব শিশুদের তদারকি করা সম্ভব নয়। এ দায়িত্ব প্রথমেই পরিবারের বা অভিভাবকের। আর সব নালা ঢেকে দেওয়াও সম্ভব নয়। কিছু নালা সার্ভিস লাইন হিসেবে খোলা রাখতে হয়। তবে পাশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও স্ল্যাব বসানো থাকে। যেখানে গার্মেন্টস নিজস্ব উদ্যোগে কাজ করেছে, সেটি আমাদের নয়। মূলত পরিবার বা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বই শিশুদের সুরক্ষা দেওয়া। এখানে শিশুটির পরিবার, তার মায়ের কর্মস্থলের দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। তাদের শিশুটিকে দেখে রাখার দরকার ছিল। শিশুদের দেখাশোনার দায়িত্ব তো পরিবারের। সিটি কর্পোরেশনের পক্ষে তো প্রতিটি শিশুর পেছনে গার্ড রাখা সম্ভব নয়। এটি অযৌক্তিক। তিনি বলেন, আমাদেরও কোনো গাফেলতি রয়েছে কীনা সেটাও খতিয়ে দেখতে বলেছি।

আমরা জবাবদিহিতার উর্ধ্বে নয় : মশক নিধন কার্যক্রম নিয়ে কারো অভিযোগ থাকলে তা জানানোর আহবান জানিয়ে মেয়র বলেন, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও অন্যান্য স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলায় আমরা মশক নিধনের লক্ষ্যে ১০০ দিনের ক্রাশ প্রোগ্রাম চালু করেছি, যা আগামী তিন মাস চলবে। কোনো এলাকার কেউ যদি অভিযোগ জানাতে চায়, আমাকে সরাসরি জানাতে পারবে, আমি রেগুলার এখানে (চসিক কার্যালয়) আছি। আমাদের কর্মকর্তাদেরও জানাতে পারবেন। আপনারা সবসময় মনে রাখবেন আমরা জবাবদিহিতার উর্ধ্বে নয়। এ প্রতিষ্ঠানটি (চসিক) বিভিন্ন কারণে হয়তো আগে জবাবদিহিতার বাইরে ছিল। কিন্তু আমি মনে করি, আপনাদের জানার আছে এবং জানার অধিকার আছে।

তিনি বলেন, আমি কাজ করে যাচ্ছি। আপনারা সহযোগিতা করবেন। যেখানে অনিয়ম হয় আমি সেখানে যাব। পার্সোনালি গিয়ে দেখভাল করব। মেয়র বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি অত্যন্ত জরুরি। বাসাবাড়িতে পানি জমে থাকা যেকোনো জায়গা, যেমন ডাবের খোসা, প্লাস্টিক বোতল, টব, টায়ার কিংবা বালতি, মশার লার্ভার জন্মের বড় উৎস। মাত্র ১২ মিলিলিটার পানিতেও ২৪৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এডিস মশার লার্ভা জন্মাতে পারে। তাই বাসাবাড়ির বালতিগুলো উল্টো করে রাখা, টবের পানি নিয়মিত পরিবর্তন এবং এসির পানি জমে থাকা বন্ধ করা অত্যন্ত জরুরি। চিকুনগুনিয়ার প্রভাব এই বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর তুলনায় বেশি। এজন্য আমরা প্রতিটি হটস্পট এবং ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বিশেষ নজরদারি চালাচ্ছি। প্রয়োজনে আমি নিজে প্রতিটি জোনে গিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করব।

ডোর টু ডোর প্রকল্প প্রসঙ্গ : মেয়র বলেন, কর্পোরেশন যে ট্যাঙ নেয় সেটা হচ্ছেডাস্টবিন থেকে ময়লাগুলো নিয়ে গার্বেজ স্টেশনে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু বাসা থেকে এনে ডাস্টবিন পর্যন্ত আনার জন্য কর্পোরেশন ট্যাঙ নেয় না। সেজন্য গৃহকর্তাকে বাসার ময়লা নির্দিষ্ট ডাস্টবিনে ফেলতে হবে। অনেক সময় বাসার সামনে ডাস্টবিন দিলে আপত্তি করে। তখন দূরে ডাস্টবিন বসালে সেখানে আবার নিয়ে যায় না, খালে ফেলে। ডোরটুডোর ময়লা সংগ্রহ প্রকল্প চালু করেছি। প্রতি পরিবার মাসে ৬০ টাকা প্রদান করবে।

তিনি বলেন, ডোর টু প্রকল্পের জন্য যাদের নেয়া হয় তাদের অনেকে কাজ করছে না। যাদের তিনচার মাস অনুপস্থিত দেখছি তাদের কিন্তু ছাঁটাই করছি। পূর্বে নিয়ম কানুন না থাকলেও এখন নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। কেউ নিয়ম ভঙ্গ করলে তাকে শাস্তি দেওয়া হবে। ডোরটুডোর সেবার ক্ষেত্রে ৬০ টাকার বেশি দাবি করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এসময় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, জাপান, কোরিয়া, কানাডা, চীন ও নেদারল্যান্ডসের বিনিয়োগকারীদের সাথে ওয়েস্টটুএনার্জি প্রজেক্ট নিয়ে আলোচনা করেছি। চট্টগ্রাম শহরে প্রতিদিন যে বিপুল বর্জ্য উৎপাদন হয় তা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে শহরের পরিবেশ ও অর্থনীতি উন্নত করা সম্ভব হবে। এছাড়া সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে ড্রেনেজ সিস্টেম মাস্টার প্ল্যানের আওতায় আনা হবে।

নগর সরকারের গুরুত্ব : নগর সরকার না থাকায় উন্নয়ন কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে বলে জানান মেয়র। তিনি বলেন, সিডিএ নগরীর কিছু খাল ও নালার কাজ করছে। এখন সিডিএ পূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে আর সিটি কর্পোরেশন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে। এখন নগর সরকার না থাকায় মেয়র যে সব সংস্থার প্রধান, এটা অফিসিয়ালি না হওয়ার কারণে অনেক সময় সিডিএকে তাগাদা দিলেও তারা কাজগুলো দেরিতে করছে অথবা ঠিকমতো করতে পারছে না। যার কারণে আমাদের সমস্যা হয়ে যাচ্ছে। যখনই কাজ করতে যায় তখন সিডিএ বলে আমাদের কাজ বাকি আছে। সেজন্য আমি খালগুলো করতে পারিনি।

তিনি বলেন, খালের পাশে যে সড়কগুলো আছে সেগুলো মূলত সিডিএ করার দায়িত্ব। কাজেই সেখানে গিয়ে আমরা ইন্টারফেয়ার করতে পারি না। কারণ সেখানে তাদের একটা বাজেট রয়ে গেছে। নগর সরকার না থাকার কারণে এই সমস্যাগুলো হচ্ছে। কানাডাতে নগর সরকার ব্যবস্থা আছে। এই কনসেপ্ট যতক্ষণ না হবে কোনো শহরে প্ল্যান অনুযায়ী কাজ করা যাবে না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবৈষম্যবিরোধী নেতাসহ চারজন ৭ দিনের রিমান্ডে
পরবর্তী নিবন্ধফ্লাইওভারের স্টিল গার্ডারের নাট বল্টু খুলে নিচ্ছে মাদকাসক্তরা