একই কক্ষে দুই আদালতের কার্যক্রম বিচারক বসছেন পালাক্রমে

আইনজীবীরা বলছেন, অস্বস্তিকর পরিস্থিতি বিচারপ্রার্থীদের মধ্যে বিভ্রান্তি

হাবীবুর রহমান | সোমবার , ২৮ জুলাই, ২০২৫ at ৪:২৪ পূর্বাহ্ণ

কক্ষ একটি। আদালত দুটি। এ চিত্র চট্টগ্রামে নবগঠিত অর্থঋণ আদালত২ ও অর্থঋণ আদালত৩ এর। বিচারক নিয়োগ দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আদালত দুটি চালু হলেও পৃথক দুটি কক্ষ বরাদ্দ না হওয়ায় বিচারিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এতে বিচারপ্রার্থীদের যেমন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে, তেমনি প্রশাসনিক জটিলতাও তৈরি হচ্ছে।

জানা গেছে, নগরীর কোর্টহিলের নতুন আদালত ভবনে আগে থেকে একটি আদালত (অর্থঋণ আদালত) পরিচালিত হচ্ছিল। চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি অর্থঋণ সংশ্লিষ্ট মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে আরও দুটি নতুন আদালত গঠন করা হয়। অর্থঋণ আদালত২ এবং অর্থঋণ আদালত৩। এ দুটি আদালতের জন্য বিচারকও নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু আলাদা কক্ষ বরাদ্দ না হওয়ায় বর্তমানে দুটি আদালতের কার্যক্রম চলছে এক কক্ষেই।

আদালত সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, একটি কক্ষে দুটি আদালতের বিচারক পালাক্রমে বসছেন। একজন এজলাসে উঠলে আরেকজন বিচারককে অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। এক কক্ষে একাধিক বেঞ্চ বসানোয় শুনানি এবং ফাইল ব্যবস্থাপনায় সমস্যার পাশাপাশি বিচারপ্রার্থীদের মধ্যেও বিভ্রান্তি দেখা দিচ্ছে, ব্যাহত হচ্ছে বিচার কার্যক্রম।

আইনজীবীরা বলেন, একই কক্ষে দুই আদালতের কার্যক্রম চালানো অত্যন্ত অস্বস্তিকর ও অস্বাভাবিক। এতে মামলার শুনানি যেমন বিলম্বিত হচ্ছে, তেমনি বিচারকদের কাজের স্বচ্ছতাও বিঘ্নিত হচ্ছে। বিষয়টি সমাধানে ইতোমধ্যে আইন মন্ত্রণালয়ের কাছে অতিরিক্ত কক্ষ বরাদ্দের আবেদন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তাদের প্রত্যাশা, দ্রুত নতুন কক্ষ বরাদ্দ পেলে পৃথকভাবে পূর্ণাঙ্গ বিচারিক কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হবে।

অর্থঋণ আদালত১ এর সেরেস্তাদার মো. সাইফুদ্দিন পারভেজ দৈনিক আজাদীকে বলেন, এক কক্ষে দুটি আদালতের কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে অবশ্যই সমস্যা হচ্ছে। দুজন বিচারককে পালাক্রমে এজলাসে বসতে হচ্ছে। এতে বিচারপ্রার্থী থেকে আইনজীবী সবার সমস্যা হচ্ছে। দুটি আদালতের জন্য বরাদ্দকৃত কক্ষে অবকাঠামাগত সমস্যা রয়েছে বলেও জানান তিনি। অর্থঋণ আদালত২ ও ৩ এর বেঞ্চ সহকারী রেজাউল করিম দৈনিক আজাদীকে বলেন, লোকবলের সংকট রয়েছে। প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের সংকট রয়েছে। এছাড়া এক এজলাসে দুটি আদালত পরিচালনার বিষয়টিও রয়েছে। বিচার কার্যক্রম পরিচালনায় অবশ্যই সমস্যা হচ্ছে। তিনি বলেন, সমস্যা থাকার পরও কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর নতুন দুটি অর্থঋণ আদালতে ১০ থেকে ১৫ টির মতো মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। আদায় করা হয়েছে প্রায় ৩ কোটি টাকা।

চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এনামুল হক আকন্দ দৈনিক আজাদীকে বলেন, সমস্যা যেটি হচ্ছে সেটি আমাদের নজরে রয়েছে। একটি কক্ষে দুটি আদালতের কার্যক্রম পরিচালনা অবশ্যই সমস্যা। একজন বিচারক যখন বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করছেন, ঠিক তখন অপর বিচারককে বসে থাকতে হচ্ছে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট আরো অনেক সমস্যা রয়েছে। আমাদের দাবি হচ্ছে, স্বতন্ত্র আদালত কক্ষ থাকতে হবে। এক কক্ষে পরিচালিত হবে একটি আদালতের কার্যক্রম। তিনি বলেন, নতুন দুটি অর্থঋণ আদালত গঠন, বিচারক নিয়োগ এবং কার্যক্রম শুরু হওয়া, সবকিছু অর্থঋণ মামলার বিচারের ক্ষেত্রে অবশ্যই ইতিবাচক। কিন্তু দুই আদালতের জন্য পৃথক দুটি কক্ষ পাওয়া গেল না। তিনি বলেন, নতুন আদালত ভবনকে ৫ ও ৬ তলায় রূপান্তর করা গেলে এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। মন্ত্রণালয়ের কাছে এ বিষয়ে আমাদের আবেদন করা আছে। কক্ষ খুঁজে না পাওয়ায় আপাতত নতুন দুটি অর্থঋণ আদালতের কার্যক্রম চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনের ৫০১ নম্বর কক্ষে চলছে বলেও জানান এনামুল হক।

চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সেক্রেটারি মোহাম্মদ হাসান আলী চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, একজন বিচারক যদি পুরো কার্য দিবস এজলাসে বসতে পারেন, তাহলে মামলা নিষ্পত্তির সংখ্যা তুলনামূলক বেশি হবে। নতুন দুটি অর্থঋণ আদালতে সেটি হচ্ছে না। এক কক্ষে দুটি আদালতের কার্যক্রম পরিচালনার উদাহরণ চট্টগ্রামে আরো রয়েছে। বিশেষ করে আমাদের সিভিল কোর্টে এ ধরনের সমস্যা রয়েছে। আইন মন্ত্রণালয়, গণপূর্ত মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের নজরে দিয়েছি আমরা এসব বিষয়। গণর্পূত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আগামী ৭ আগস্ট আইনজীবী সমিতিতে আসবেন। তখন আদালত কক্ষ সংক্রান্ত সমস্যার বিষয়টি নিয়ে আমরা কথা বলব। প্রসঙ্গত, চট্টগ্রামে অর্থঋণ সংক্রান্ত মামলা রয়েছে ৬ হাজারের উপর। এরমধ্যে নতুন দুটি অর্থঋণ আদালত তথা অর্থঋণ আদালত২ ও অর্থঋণ আদালত৩ এ অর্থঋণ ও অর্থ জারি মিলে ৩,৬৩৮ টি মামলার বিচার কাজ চলছে। অর্থঋণ আদালত১ এ চলছে বাদবাকি মামলার বিচার কার্যক্রম।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএকনেকে চট্টগ্রামের দুটিসহ ৮ হাজার ১৪৯ কোটি ৩৮ লাখ টাকার ১২ প্রকল্প অনুমোদন
পরবর্তী নিবন্ধচুয়েট পানি সম্পদ কৌশল বিভাগের শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুম-ল্যাবে তালা