দয়া দাক্ষিণ্য

ড. গৌরী ভট্টাচার্য্য | রবিবার , ২৭ জুলাই, ২০২৫ at ৪:৪৮ পূর্বাহ্ণ

এই পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ থেকে মৃত্যুবরণ পর্যন্ত প্রতিটি মুহূর্ত আমাদের জন্য সৃষ্টিকর্তার দান, তাঁরই প্রীতিউপঢৌকন। জীবন যাপনে সুখদুঃখ, আনন্দ বেদনা সবই তাঁর দয়া দাক্ষিণ্য। সুখ সানন্দে উপভোগ করতে মানুষ উৎফুল্ল থাকে, কিন্তু দুঃখবেদনার প্রাপ্তিতে ভারাক্রান্ত হৃদয় ভাগ্যকে দোষারোপ করে। দুঃখকষ্টও অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের জন্য, শিক্ষা গ্রহণের জন্য সৃষ্টিকর্তার বিশেষ দান। প্রতিটি দিবস, প্রতিটি রজনী সৃষ্টিকর্তার উপহার। সৃষ্টিকর্তার দয়া দাক্ষিণ্য সম্পর্কে আমাদের বোধ খুবই সামান্য। এই পৃথিবীতে কত কী জানার আছে, আমরা কতটুকুই বা জানি, আসমুদ্রহিমাচল পর্যন্ত আমাদের অজানা। এক জীবনে জ্ঞান অর্জন কতটুকুই বা সম্ভব, তবুও প্রয়াস করা যায়, কিছুটা হলেও জ্ঞান অর্জনের জন্য। দেখা, শোনা, পড়া, লেখা সবই জ্ঞান অর্জনে সহায়ক, বিকল্প নেই।

আমাদের চিত্ত সবসময় কোনো না কোনো বিষয় নিয়ে অস্থির থাকে। স্থির চিত্তে সাধনা করার জন্য অভ্যাস করতে করতে অভ্যস্ত হওয়া দরকার। আমাদের অন্তর্জগত থেকে বহির্জগত, ঐহীজগৎ পর্যন্ত সাধনার অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। এই বিশাল সৃষ্টি সম্ভার প্রাকৃতিক নিয়মেই পরিচালিত হয়ে থাকে। সবার জীবনও শারীরিক নিয়ম অনুসৃত, শৈশব থেকে বৃদ্ধ অবস্থা পর্যন্ত ক্রিয়াশীল। মানুষ ছন্নছাড়া জীবন যাপন করতে পারে না। একাকীত্বের ভেতর অসহায়ত্ব বোধ জাগে, দুঃখময় জীবন যাপন করতে মানুষ সৃষ্টিকর্তার শরণাগত হয়। বিপদে আপদে সকলপ্রকার দুঃখকষ্টে ধনী গরীব সবাই সৃষ্টিকর্তার শরণাগত হয়। অফুরন্ত সুখ ভোগ করতে গিয়ে সবাই নানাবিধ সমস্যার বেড়াজালে পড়ে। এক সমস্যা সমাধান হতে না হতেই আরেক সমস্যা দরজায় কড়া নাড়ে। সত্যিকার অর্থে জীবনে চাওয়া পাওয়ার কোনো সমাপ্তি রেখা নাই। মানুষের চিরকাল অতৃপ্ত বাসনা। অথচ প্রতিটি ক্ষেত্রেই সৃষ্টিকর্তার বিশেষ দয়া দাক্ষিণ্য মানুষের কাছে দুর্বোধ্য।

মানুষের জ্ঞান অতি সামান্য, অজ্ঞানতা মাত্রাধিক, এই সত্য কথাটি বিনা বিতর্কে স্বীকার করতে করি। মানুষ সর্বদা আত্মসুখ স্বপ্নে বিভোর থাকে,যার ফলে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে যায়, দিকভ্রান্ত হয়ে অন্যায় অপরাধে লিপ্ত হয়ে যায়। মানুষের জীবন খুবই ক্ষণস্থায়ী,আজ আছি তো কাল নেই। তাই কিছু ভালো কাজ করতে পারা দেশ ও দশের কল্যাণকর কাজের জন্য প্রয়াস করতে পারার মধ্যে জীবনের সার্থকতা নিহিত আছে। জীবন সায়াহ্নে মানুষের সত্য উপলব্ধি জাগ্রত হয়, করতে পারা না পারার আফসোস আসে মনে। আত্মতৃপ্তি জীবন সায়াহ্নে তখন আসে যখন চোখের সামনে ভেসে ওঠে মানুষের জন্য কিছুটা হলেও মঙ্গলজনক কাজ করার প্রয়াস করা হয়েছে, কারো ক্ষতি না করে উপকার করার জন্য নিরলসভাবে কাজ করা হয়েছে। আবার অনুশোচনা আসে কত কী ভুল, কত কী অন্যায় করা হয়েছে তার জন্য। প্রকৃতপক্ষে পরের সুখে সুখ এবং পরের দুঃখে দুঃখ বোধ করা সুন্দর মানসিকতার পরিচয় বহন করে। আত্মসুখের দাম্ভিকতা মিথ্যার আবরণে আচ্ছাদিত থাকে। সবার ঘৃণার পাত্র হয় তারা।

মানুষ বেঁচে থাকতে চায়, দীর্ঘদিন বেঁচে থাকার যেমন সুখ আছে, আনন্দ আছে, তেমনই আছে রোগ, শোক, দুঃখকষ্ট সবকিছুর সাথে লড়াই, লড়াই করে বাঁচতে হয়। মরতে কেউ চায় না, কারণ মৃত্যুর পরের অবস্থা সবার অজ্ঞাত। অথচ মৃত্যুই একমাত্র সত্য, সৃষ্টিকর্তার দয়া দাক্ষিণ্যের মধ্যে সর্বশেষ শ্রেষ্ঠ উপহার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমন কেড়ে নেয় স্বদেশ
পরবর্তী নিবন্ধএকটি কবিতার জন্ম