এক মাস আগেও সবকিছু ঠিকঠাক ছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০১৫–১৬ সেশনের সাবেক শিক্ষার্থী সুমন আহমেদের। পুরোদমে চলছিল চাকরির পড়াশোনা। স্বপ্ন দেখতো সুন্দর একটা জীবনের। গত মে মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে এসে হাসি–আড্ডায় মেতে উঠেছিলো বন্ধুদের সঙ্গে। কখনো ভাবেনি যে, একদিন সুস্থ জীবনটাই তার কাছে সবচেয়ে বড় স্বপ্ন হয়ে দাঁড়াবে। কারণ স্বপ্নবাজ এই যুবকের শরীরে হঠাৎ দেখা দিয়েছে কিডনি রোগ (গ্লোমেরুলোনফ্রাইটিস)। সুমনের জন্ম ও বেড়ে ওঠা ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার রাঙ্গামাটিয়া ইউনিয়নের অনন্তপুর গ্রামের এক মধ্যবিত্ত কৃষক পরিবারে। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সুমন সবার ছোট। বাবা হাছেন আলী ও বড় ভাই আবু তাহের কৃষক। সুমনের স্বপ্ন ছিল পড়াশোনা শেষে ভালো চাকরি করবেন। পরিবারের হাল ধরে সংসারের অভাব–অনটন দূর করা এবং উন্নত চিকিৎসা করাবেন অসুস্থ বাবা–মায়ের। সেই আশায় সরকারি চাকরির প্রস্তুতি ও নিজের খরচ বহনের জন্য অনুবাদকের চাকরি নেন একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে। সমপ্রতি গোয়েন্দা সংস্থার একটি নিয়োগে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে স্বপ্নের কাছাকাছিও ছিলেন সুমন। কিন্তু নিয়তির নির্মম পরিহাসে হঠাৎ করেই কিডনি জটিলতায় সুমনের জীবনে নেমে এসেছে অন্ধকার।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘চ্যান্সেলর গোল্ড মেডেল এওয়ার্ড’ প্রাপ্ত শিক্ষার্থী সুমন ডিপার্টমেন্টেও ছিলেন দ্বিতীয়। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে টিউশনি আর সরকারি বৃত্তির টাকা দিয়ে নিজের খরচ বহন করতেন সুমন।
সুমনের বন্ধু রাহাত মাহমুদ খাঁন বলেন, এত সংগ্রাম করে জীবন কাটানোর পর বন্ধুদের কোথাও কেউ বিপদে পড়লে সুমন এগিয়ে আসত সবার আগেই। পকেটে তেমন টাকা না থাকলেও কোথাও খেতে বসলে হাসিমুখে সবার আগে বিলটা এগিয়ে দিয়েছে। কিন্তু আজ সুমনকে দেখে খুব ক্লান্ত মনে হচ্ছে। মনোবল হারিয়ে মনে হয়েছে যন্ত্রণায় কাতর পুরোদস্তুর অচেনা কেউ। আজ তাকে দেখে ক্ষণিকের জন্য নিজেই অনুপ্রেরণা হারিয়ে ফেলতে বসেছি। কিন্তু পরক্ষণেই আবার সুমনকে তার নিজের বলা কথা স্মরণ করিয়ে অনুপ্রেরণা দিলাম। হেরে যাওয়া যাবে না, হারানো যাবে না মনোবল। কিন্তু তাতেও যে সুমন মন খুলে হাসতে পারেনি এটা বোঝারও বাকি নেই। কারণ অসুস্থতা আজ তাকে অনেকটা ক্লান্ত–শ্রান্ত করে দিয়েছে। সুমন বর্তমানে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (পিজি হাসপাতাল) চিকিৎসাধীন রয়েছে। চিকিৎসকরা বলেছেন, তার একটি কিডনি স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি ছোট হয়ে গেছে। আরেকটি কিডনিও যেভাবে সমর্থন দেওয়ার কথা, সেই হারে সাড়া দিচ্ছে না। দৈনিক এক লিটারের বেশি পানি পান করায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। খাবারও নিচ্ছেন সীমিত পরিমাণে। গত এক মাসে ওজন কমেছে প্রায় ২০ কেজি। এখন হঠাৎ দেখে চেনার উপায় নেই যে এটাই সেই ২ মাস আগের সুমন। ডাক্তারের মতে, দেশে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে, তবে কিডনির বায়োপসি করালে জীবন নিয়ে ঝুঁকি রয়েছে। তাই, যত দ্রুত সম্ভব উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নেওয়া প্রয়োজন সুমনকে। যার জন্য বিপুল চিকিৎসা ব্যয় মেটানো তার পরিবারের পক্ষে সম্ভব নয়।
সুমনের মতো সংগ্রামী, মেধাবী ও স্বপ্নবাজ তরুণ আজ অসুখের কাছে অসহায়। তাই তিনি সকলের কাছে রোগমুক্তির জন্য দোয়া ও একটু সহযোগিতা চান। আপনার একটু সহযোগিতা হতে পারে তার জীবনের শেষ আশ্রয়স্থল। সুমন আহমেদ ফিরে পাক তার স্বপ্ন, তার হাসি। আপনার সাহায্যেই তা সম্ভব। সহযোগিতা করতে যোগাযোগ করতে পারেন– ০১৬২৬৯৯৩১৩৬ (সুমন আহমেদ)।