অনুমতি নেয়া বেশিরভাগ ব্যবসায়ীই চাল আমদানি করেননি

অথচ আমদানিকে উৎসাহিত করতে তুলে দেয়া হয় শুল্ক-কর ।। ব্যবসায়ীদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে অনুমতি প্রদানের সময়ও বাড়ানো হয় চার দফা ।। কোনো ধরনের সংকট না থাকলেও বাজারে চালের দাম বাড়তি

হাসান আকবর  | রবিবার , ২৭ জুলাই, ২০২৫ at ৪:৩১ পূর্বাহ্ণ

চালের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে প্রচুর পরিমাণে আমদানি করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। দেশে এখন চাল ও গমের মজুদ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩ লাখ টন বাড়তি। খাদ্য নিয়ে কোনো ধরনের সংকট না থাকলেও বাজারে চালের দাম বাড়তি রয়েছে। বিষয়টিকে সংঘবদ্ধ চক্রের কারসাজি বলে উল্লেখ করে সূত্রগুলো বলেছে, গত ৫ বছরে দেশে চালের মূল্য বেড়েছে ৫৬ শতাংশ। যা অস্বাভাবিক। এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি দেশের সাধারণ ও নিম্নআয়ের মানুষের দুর্ভোগ বাড়াচ্ছে। সরকার এই দুর্ভোগ লাঘবের জন্য চাল আমদানির জন্য বেসরকারি পর্যায়ে অনুমোদন দিলেও তা যথাযথভাবে আনা হচ্ছে না বলে সূত্র জানিয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানের বরাত দিয়ে সূত্র জানিয়েছে, দেশে প্রতিদিন ১ লাখ টনের মতো চাল লাগছে। দেশে বর্তমানে চালের চাহিদা রয়েছে প্রায় ৩ কোটি ৮৫ লাখ টন। কৃষি বিভাগের পরিসংখ্যান মতে ২০২৪২৫ অর্থবছরে দেশে চালের উৎপাদন ছিল ৪ কোটি ৭ লাখ টন। চাহিদার চেয়ে বেশি চাল উৎপাদিত হলেও বাজারে চালের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়তে থাকে।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, বিভিন্ন মৌসুমি ব্যবসায়ী ধান চাল কিনে মজুদ করে রাখেন পরবর্তীতে বিক্রয়ের জন্য। এটা বাজারে একটি কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে। যা বাজারে দর বাড়িয়ে দিচ্ছে। বাজার ব্যবস্থাপনার ত্রুটির কারণে চালের দাম অস্বাভাবিকহারে বেড়েছে বলেও অনেকেই মন্তব্য করেছেন।

চালের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে সরকার বেসরকারি খাতে ১৬ লাখ ৭৫ হাজার টন চাল আমদানির অনুমতি দেয়। আমদানিকে উৎসাহিত করতে তুলে দেয়া হয় শুল্ককর। ব্যবসায়ীদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে অনুমতি প্রদানের সময়ও বাড়ানো হয় চার দফা। এত কিছুর পরও অনুমতি নেয়া ব্যবসায়ীদের বেশিরভাগই চাল আমদানি করেননি।

সূত্র জানিয়েছে, খাদ্য মন্ত্রণালয় গত বছরের নভেম্বরে চার দফায় ২৭৭টি বরাদ্দপত্রে ১৪ লাখ ৮১ হাজার টন চাল আমদানির অনুমতি দেয়। অনুমতিপত্রে ১০ ও ২২ ডিসেম্বরের মধ্যে চাল আমদানি করে বাজারজাতের শর্ত দেওয়া হয়। এ সময়ের মধ্যে মাত্র ১ লাখ টন চাল আমদানি করে বেসরকারি খাতে বরাদ্দপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো। অর্থাৎ অনুমতির মাত্র ৭ শতাংশ চাল আমদানি হয়। এ পরিস্থিতিতে নতুন করে আরও দুই দফায় ৫৭টি প্রতিষ্ঠানকে প্রায় ২ লাখ টন চাল আমদানির বরাদ্দ দেওয়া হয়। আবার এক মাস করে চার দফায় চাল আমদানির সময় বাড়ানো হয়। সর্বশেষ সময় বাড়িয়ে ১৫ এপ্রিল করা হয়েছিল। সব মিলিয়ে ৩৩৪টি বরাদ্দপত্রে ১৬ লাখ ৭৫ হাজার টন চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছিল খাদ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু চাল আমদানি করা হয় মাত্র ৫ লাখ ৪০ হাজার টন। ৩৩৪টি বরাদ্দপত্রের বিপরীতে ১৯০টি চাল আমদানি করে। অর্থাৎ অনুমোদন নেয়ার ৬৮ শতাংশ চালই আমদানি করা হয়নি। চালে আমদানি শুল্ক, সম্পূরক শুল্ক এবং এআইটি মিলে ৬২ দশমিক ৫০ শতাংশ শুল্ককর ছিল। যা পুরোপুরি প্রত্যাহার করার পরও চাল আমদানি না হওয়াকে দুঃখজনক বলে উল্লেখ করে সূত্র বলেছে যে, এদের মধ্যে কোনো সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছে কিনা তা খতিয়ে বের করতে হবে।

চট্টগ্রাম খাদ্য বিভাগের একজন কর্মকর্তা গতকাল দৈনিক আজাদীকে জানিয়েছেন, চালের কোনো সংকট নেই। গুদাম, আড়ত এবং দোকানে প্রচুর চাল রয়েছে। উত্তরবঙ্গের চালের মোকামগুলোও ভর্তি চালে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে চালের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাধারণ ভোক্তাদের পক্ষ থেকে বাজার মনিটরিংয়ের উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভুল ট্রেনে ওঠা নারীকে টাঙ্গাইলে দলবেঁধে ধর্ষণ, গ্রেপ্তার ৩
পরবর্তী নিবন্ধনানা বাড়িতে এসে ট্রেনের ধাক্কায় প্রাণ গেল শিশুর