নগরে মাইকিং চলছে। জনসাধারণকে সচেতন করে তোলার চেষ্টা চলছে। আহ্বান জানানো হচ্ছে নগরকে পরিচ্ছন্ন রাখতে। কেননা উন্নয়ন পরিকল্পনার পাশাপাশি পরিচ্ছন্ন নগরী গড়ে তুলতে সাধারণ মানুষকে সচেতন করে তোলা জরুরি। তা না হলে সব উন্নয়ন প্রকল্প ভেস্তে যাবে বলে আশংকা রয়েছে।
মোট কথা, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের অনেকগুলো কাজের মধ্যে মূল দায়িত্ব তিনটি। রাস্তাঘাট নির্মাণ ও মেরামত, পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম পরিচালনা, শহর আলোকায়ন করা। কিন্তু সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব আয়ে পরিচ্ছন্ন কার্যক্রমসহ অন্যান্য অপরিহার্য সেবা শতভাগ নিশ্চিত করা সম্ভব হয়ে উঠছে না। তাছাড়া ডাস্টবিন নির্মাণের জায়গা স্বল্পতা, অপর্যাপ্ত ডাম্প ট্রাক, পরিচ্ছন্ন কর্মী স্বল্পতাসহ নানাবিধ সমস্যার কারণে বর্তমানে চলমান পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম জনগণের প্রত্যাশা পূরণে শতভাগ সক্ষম হচ্ছে না। কয়েক বছর আগে বিলবোর্ড অপসারণ করে নগরীর সৌন্দর্য রক্ষায় যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল, তার জন্য চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে অভিনন্দন জানিয়েছিল নগরবাসী। কিন্তু এখন নগরী আবার পরিণত হয়েছে জঞ্জালে। এর বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে অ্যাকশনে নামতে হবে। যে সমস্ত প্রতিষ্ঠান অবৈধ সাইনবোর্ড ব্যবহার করে রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে এবং নগরীর সৌন্দর্যহানি করছে, অনতিবিলম্বে সেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে। সাইনবোর্ড–বিলবোর্ড সরিয়ে ফেলতে হবে। জনস্বার্থে একটা বিজ্ঞপ্তি জারি করতে হবে এভাবে, সাত দিনের মধ্যে অবৈধ সাইনবোর্ড স্ব–উদ্যোগে সরিয়ে ফেলুন, নইলে সিটি কর্পোরেশন তা উচ্ছেদ করবে এবং জরিমানা প্রদান করবে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘সিটি করপোরেশন সব সময় শহর পরিচ্ছন্ন না হওয়ার জন্য স্বল্প বাজেট ও জনবলের অভাবকে দায়ী করে থাকে। তাই যদি হবে তাহলে প্রথমে করণীয় হচ্ছে বাজেট ও লোকবল বাড়ানো। আর সেটা করা যদি সম্ভব না হয় তাহলে বেসরকারিভাবে বাসাবাড়ি থেকে যেভাবে টাকার বিনিময়ে ময়লা সংগ্রহ করা হচ্ছে, একইভাবে রাস্তাঘাট, অলিগলি পরিষ্কারের কাজটিও বেসরকারিভাবে করা যেতে পারে। ন্যায্য ও যুক্তিসংগত ফির বিনিময়ে এটা করা যেতেই পারে। শহরটা তো অন্তত পরিষ্কার থাকবে। তবে এই রাস্তাঘাট পরিষ্কার করার অছিলায় যাতে আবার কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য না হয়, সেটাও দেখতে হবে। তবে নগর অপরিচ্ছন্ন থাকার সব দায় সিটি করপোরেশনগুলোর ওপর না দিয়ে নিজেদের দিকেও তাকাতে হবে। আমরা নগরবাসী সবাই কি পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন থাকি? এই নগরটা এত নোংরা হয় সে আমরা করি বলে। আমাদের অনেকের স্বভাব হচ্ছে যেখানে সেখানে ময়লা ফেলা। আইসক্রিম খেয়ে বা চিপস খেয়ে প্যাকেটটা আমরা অনেকে রাস্তাতেই ফেলি। কটা টাকা বাঁচানোর জন্য বাসার বর্জ্য ময়লা সংগ্রহকারীদের কাছে না দিয়ে রাস্তার মোড়ে ফেলছি। আমাদের এসব বাজে স্বভাবের বদল না হলে শহর নোংরাই থাকবে। উন্নত দেশগুলোতে বাসাবাড়ি বা রাস্তাঘাট নোংরা করলে মোটা অঙ্কের অর্থ জরিমানা করা হয়। আমাদের দেশেও সে রকম জরিমানার ব্যবস্থা চালু করতে হবে। তবেই যদি স্বভাব বদলায়।’
তাঁরা বলেন, পরিচ্ছন্ন শহর মানেই বাসযোগ্য শহর। নগরের প্রতিটি কোণে যদি পরিচ্ছন্নতা বজায় থাকে, তা শুধু সৌন্দর্যই বাড়ায় না– মানুষের স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, পরিবেশও রক্ষা করে। আধুনিক নগর ব্যবস্থাপনায় বর্জ্য সঠিকভাবে পরিচালনা করা এখন একান্ত জরুরি। চট্টগ্রাম নগরী বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক শহর। এখানে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের চলাচল ও কার্যক্রমের ফলে তৈরি হচ্ছে বিপুল পরিমাণ বর্জ্য। একটি পরিচ্ছন্ন ও বাসযোগ্য নগর গড়ে তুলতে পরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এখন সময়ের দাবি।
নগর পরিচ্ছন্নতার কাজে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে। তা না পারলে কোনো শুভ উদ্যোগের সফলতা আশা করা যায় না। আমরা যদি নিজেরা নিজেদের ঘর পরিষ্কার রাখি, তাহলেই শহর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা সম্ভব। সবাই শহর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন দেখতে চায়। কিন্তু নিজেদের ময়লা তারা যেখানে–সেখানে ফেলে রাখেন। ময়লা আবর্জনা নির্দিষ্ট সময়ে যথাস্থানে ফেলার জন্য সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। নগরের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখার ক্ষেত্রে পালন করতে হবে নাগরিক দায়িত্ব।