মা, হাসপাতাল এত দূরে কেন

অ্যাম্বুলেন্সে দগ্ধ ছামীমের শেষ কথা

| বুধবার , ২৩ জুলাই, ২০২৫ at ৫:০৮ পূর্বাহ্ণ

মাত্র আট মাস আগে সৌদি আরবে কর্মরত অবস্থায় মারা যান স্বামী আবুল কালাম মাঝি। ছেলেমেয়েদের বুকে ছড়িয়ে ধরে সেই শোক কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করছিলেন জুলেখা বেগম। কিন্তু তার আগেই ছেলে হারানোর শোক তার বুকে পাথরের মত চেপে বসল।

গত সোমবার উত্তরার মাইলস্টোন কলেজে বিমান বাহিনীর যুদ্ধবিমান দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন জুলেখার আদরের ছোট সন্তান আব্দুল্লাহ ছামীম (১৪)। গতকাল মঙ্গলবার সকালে শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার ডিএম খালি মাঝিকান্দি এলাকার বাবার কবরের পাশেই ছামীমকে শায়িত করা হয়েছে। এ সময় আহাজারি করতে করতে পুত্রহারা জুলেখা বেগম বলছিলেন, আমার বাবা বলছিল, মা, হাসপাতাল এতো দূরে কেন? কাছাকাছি হাসপাতাল হতে পারে না। আমাকে তোমরা চিকিৎসা করাতে বিদেশে নিয়ে যাও। আমার বাবা বাঁচতে চাইছিল। কেন আমার বাবা এভাবে চলে গেল? খবর বিডিনিউজের।

আবুল কালাম মাঝি ও জুলেখা বেগম দম্পতির তিন মেয়ে আর দুই ছেলের মধ্যে আব্দুল্লাহ ছামীম সবার ছোট। ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ছামীমের শিক্ষাজীবন শুরু হয়েছিল মাদ্রাসায়। পরে তাকে উত্তরার মাইলস্টোন কলেজে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করা হয়। ছামীমের স্বপ্ন ছিল সে চিকিৎসক হবে। এর মধ্যে গত বছরের ডিসেম্বরে সৌদি আরবে মারা যান বাবা আবুল কালাম মাঝি। সংসারে ছন্দপতন ঘটলেও জুলেখা আর অন্য ভাইবোনেরা মিলে ছামীমকে পরম মমতায় আগলে রেখেছিলেন। জুলেখা পরিবারের সবাইকে নিয়ে উত্তরার দিয়াবাড়ীর খাল পাড়ে বসবাস করতেন। সেখান থেকে ছামীমের স্কুল কাছেই ছিল।

পরিবার জানায়, প্রতিদিনের মত সোমবারও সহপাঠীদের সঙ্গে শ্রেণিকক্ষে ক্লাস করছিল ছামীম। টিফিনের তখন ১০ মিনিট বাকি। এর মধ্যে বিকট শব্দে বিদ্যালয়ের একটি ভবনে বিধ্বস্ত হয় বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান। সেই সময় গুরুতর আহত হয় ছামীম। সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে স্বজনদের খবর দেয়। তখন তাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। অবস্থা গুরুতর হওয়ার তাকে ভর্তি করা হয় বার্ন ইউনিটে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১১টার দিকে মারা যায় ছামীম। ছামীমের মৃত্যুর খবর তার গ্রামে পৌঁছালে এলাকাজুড়ে নেমে আসে শোকের ছায়া। গতকাল সকালে মরদেহ গ্রামের বাড়ি ডিএম খালি মাঝিকান্দি এলাকায় নিয়ে আসা হয়। সকাল ৯টায় চরভয়রা উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে তারা জানাজা হয়। ছামীমের এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না স্বজন ও এলাকাবাসী। ছেলের মৃত্যুতে কিছুক্ষণ পর পর মূর্ছা যাচ্ছেন মা জুলেখা বেগমও। তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা কেউ খুঁজে পাচ্ছে না।

ছামীমের সঙ্গেই বড় হয়েছে তার মামাতো ভাই আব্দুল্লাহ হুসাইন। গ্রামে এলে দুজন একসঙ্গে সময় কাটাত। এমনকি ঢাকায় গেলে আব্দুল্লাহকেও বিভিন্ন জায়গা ঘুরিয়ে দেখাতো ছামীম। খেলার সাথীকে হারিয়ে কান্না থামছে না আব্দুল্লাহর। ভাগ্নেকে ভীষণ ভালোবাসতেন মামা সাইফুল ইসলাম। ছোট ভাগ্নের এমন করুণ মৃত্যু যেন কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না তিনি। সাইফুল ইসলাম বলছিলেন, ছোটবেলা থেকেই ভীষণ মেধাবী ছিল আমার ভাগ্নে। ওর স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে চিকিৎসক হবে। বাবার মৃত্যুর পর ওকে সবাই আগলে রেখেছিলাম। আজ ও আমাদের ছেড়ে বাবার কবরের পাশেই চিরনিদ্রায় গেল। ওর চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকুর্মিটোলায় ফিউনারেল প্যারেডে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকিরের শেষ বিদায়
পরবর্তী নিবন্ধবিমান দুর্ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া উচিত : নাহিদ