মাইলস্টোন ট্র্যাজেডির পর গভীর রাতে এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিতের বিলম্ব সিদ্ধান্ত নেয়ায় অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরার এর পদত্যাগ দাবিতে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সামনে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন এইচএসসির শিক্ষার্থীরা। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর দেড়টা থেকে প্রায় সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত নগরীর ষোলশহরে শিক্ষা বোর্ডের সামনে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। প্রথমে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা বোর্ডের বাইরে থাকলে পরে ভিতরে ঢুকে যায়। এক পর্যায়ে শিক্ষা বোর্ডের ফটকে তালা ঝুলিয়ে সড়কে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। এ সময় পুলিশ ঘটনাস্থলে অবস্থান নেয়। পরে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। এসময় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের কারণে সড়কে যান চলাচলে ব্যাহত হয়। অবরোধের কারণে আশপাশের এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। আটকে পড়া যানবাহনের যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। পরে সড়কের একপাশ ছেড়ে দেওয়া হয় যানবহন চলাচলের জন্য।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোন কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ফলে যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে, তাতে দেশের সকল শিক্ষার্থী মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। এ অবস্থায় এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বসা কোনোভাবেই সম্ভব ছিল না। কিন্তু সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা পরীক্ষার্থীদের মানসিক অবস্থা বিবেচনা না করে প্রথমে এইচএসসি পরীক্ষা অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত জানান। পরে রাত তিনটায় পরীক্ষা স্থগিতের বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। আমরা জানতে পেরেছি, শিক্ষা সচিবের বিরোধিতার কারণে পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়ে দেরি হয়েছে। আমরা অবিলম্বে শিক্ষা উপদেষ্টা ও সচিবের পদত্যাগ দাবি করছি। শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা জানতে পেরেছি শিক্ষা উপদেষ্টা পরীক্ষা স্থগিতে সম্মত হলেও শিক্ষা সচিব এতে সাড়া দেননি। এজন্য পরীক্ষা স্থগিত করা যায়নি। রাত তিনটায় পরীক্ষা স্থগিত করায় অনেকে বিভ্রান্ত হয়েছে। বিশেষ করে যারা অনলাইনে ছিলেন না বা গ্রামে ছিলেন তাদের সমস্যা হয়েছে। এরকম শিক্ষা উপদেষ্টার আর দরকার নাই। আমরা দ্রুত শিক্ষা উপদেষ্টা ও শিক্ষা সচিবের পদত্যাগ চাই। শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের যেকোনো বিষয় দাবি জানিয়ে আদায় করা লাগতেছে। উনারা নিজ থেকে বিবেক খাটিয়ে কিছুই করছেন না আমাদের জন্য। আমরা বিবেকবান মানুষ চাই প্রশাসনে। মাইলস্টোনের ঘটনা বিষয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা চাই মাইলস্টোনে শিক্ষার্থীদের মৃত্যু নিয়ে সভিকভাবে তদন্ত হোক। কোনোভাবে যাতে কিছু লুকোনো না হয়।
জানা যায়, দুপুর দেড়টার দিকে প্রথমে ২০–৩০ শিক্ষার্থী চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সামনে জড়ো হয়। তারা শিক্ষা উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবি জানায়। এরপর শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা বোর্ডের ফটকে তালা দিয়ে সড়কে অবস্থান নেয়। এসময় আন্দোলনেকারী শিক্ষার্থীদের নিজেদের বাক–বিতণ্ডায় লিপ্ত হতেও দেখা যায়। পরে তারা নিজেরাই সেটা মিটমাট করে নেয়। এ ব্যাপারে কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের নিজেদের মধ্যে কিছু বিষয় নিয়ে ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে, পরে সেটা মিটমাট হয়েছে।
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর ড. পারভেজ সাজ্জাদ চৌধুরী বলেন, কিছু শিক্ষার্থী বোর্ডের সামনে এসে বিক্ষোভ করেছে। তবে তারা লিখিতভাবে আমাদের কিছু জানায়নি। তাদের আলোচনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তারা সম্মত হননি। পরে তারা চলে যান।