ঢাকার মাইলস্টোন ট্রাজিডির শিকার প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক মাসুকা বেগম হাসপাতালে মৃত্যুর আগ মুহূর্তে বলেছিলেন, তার লাশটি যেন সোহাগপুরে তার বড় বোনের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়। গত সোমবার রাতে হাসপাতালে মারা যাওয়া মাসুকার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তার বোনের বাড়ি আশুগঞ্জ উপজেলার সোহাগপুরে ঈদগাঁ সংলগ্ন কবরস্থানে দাফন করা হয় বলে ওই গ্রামের আহসান হাবিব পারভেজ নামে একজন জানান। এক চিকিৎসক আত্মীয়ের মাধ্যমে মাসুকার মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত হন বলে জানান পারভেজ।
তিনি বলেন, আমরা যতটুকু জেনেছি, মাসুকা অনেক শিক্ষার্থীর জীবন বাঁচিয়েছে। নিজে অসুস্থ হয়েও শিশু শিক্ষার্থীদের কথা সে চিন্তা করেছে। মাসুকা মৃত্যুর আগে বলে গেছেন, তার বোন পাপিয়ার কাছে যেন তার লাশ পৌঁছে দেওয়া হয়। খবর বিডিনিউজের।
মাসুকা বেগম ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার চিলোকুট গ্রামের সিদ্দিক আহমেদ চৌধুরীর ছোট মেয়ে। মেয়ের দাফনের সিদ্ধান্ত হওয়ার পর বড় মেয়ের শ্বশুরবাড়ি সোহাগপুরে আসেন ৭০ বছর বয়সি বৃদ্ধ সিদ্দিক আহমেদ। একটি চেয়ারে নির্বাক বসেছিলেন তিনি। অনেকক্ষণ ধরে নিশ্চুপ বসে থাকার পর এটুকুই বললেন, মেয়েটার (মাসুকার) সঙ্গে যখন কয়েকদিন আগে মোবাইল ফোনে কথা হল, আমার জন্য টাকা পাঠাইছে বলল।
প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, মাসুকার মা সমিরন বেগম মারা গেছেন প্রায় ১৫ বছর আগে। একমাত্র ভাই থাকেন প্রবাসে। বাবা সিদ্দিক আহমেদ অসুস্থ। একমাত্র বোনের বিয়ে হয়েছে আশুগঞ্জের এই সোহাগপুরে। তবে ৪০ বছর বয়সি মাসুকা নিজে বিয়ে করেননি। মাইলস্টোনের শিক্ষার্থীরাই ছিল তার পরিবার। জীবনের শেষ মুহূর্তেও শিক্ষার্থীদের জন্য লড়ে গেছেন মাসুকা। তার শেষ ইচ্ছে অনুযায়ী গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার সোহাগপুরে বড় বোন পাপির গ্রামে ঈদগাহ মাঠ সংলগ্ন কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়।
মাসুকাদের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার চিলোকুট গ্রামে হলেও বেড়ে উঠেছেন পৌর এলাকার মেড্ডা সবুজবাগ থেকে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ থেকে ইংরেজি বিষয়ে অনার্স করা মাসুকা চাকরি সুবাদে চলে যান ঢাকায়। প্রথমে মিরপুরের একটি স্কুলে শিক্ষকতা দিয়ে পেশাগত জীবন শুরু করেন। এরপর যোগ দেন মাইলস্টোন স্কুলে। তবে স্কুলটিতে তিনি ঠিক কত বছর ধরে আছেন সেটা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সোমবারের প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনায় মাসুকা বেগম আহত হন। রাতে তার মৃত্যুর খবর আসে।
মাসুকার ভাগনি ফাহমিদা নিধি এসব বলতে গিয়ে বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন। তিনি বলেন, আমরা সারাদিন খালাম্মার খোঁজ পাইনি। রাতে এক আত্মীয়ের মাধ্যমে যখন খবর পাই এর কিছুক্ষণের মধ্যেই তার মৃত্যুর খবর আসে।
পাপিয়া আক্তারের স্বামী মো. খলিলুর রহমান বলেন, মাইলস্টোন স্কুলে বিমান দুর্ঘটনার পর আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে খবর নিতে থাকি। রাতে খবর পাই, মাসুকা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। তবে অবস্থা বেশি ভালো না। এরই মধ্যে গভীর রাতে তার মৃত্যুর খবর আসে। মাসুকার ইচ্ছা অনুযায়ী আমাদের গ্রামে তাকে দাফন করা হয়েছে।
আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. শাহজাহান সিরাজী বলেন, এমন দুর্ঘটনায় মৃত্যু কারো কাম্য নয়। তবে মাসুকা তার শিক্ষার্থীদের বাঁচানোর যে বীরত্ব দেখিয়ে গেছে এতে আমরা গর্বিত। তার বীরত্বের স্মৃতিকে যেন সরকার ধরে রাখে সে দাবি জানাই।
ভৈরব সরকারি জিল্লুর রহমান কলেজের অধ্যক্ষ আবু হানিফা বলেন, মাসুকা আমার প্রিয় ছাত্রী। তার মৃত্যু মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। এতো অল্প বয়সে আমার ছাত্রীর জানাজা পড়তে হবে এটা ভাবিনি।