মাত্র কদিন হলো শ্রীলঙ্কার মাটিতে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো টি–টোয়েন্টি সিরিজ জয় করে দেশে ফিরেছে বাংলাদেশ দল। দেশে ফিরে বিশ্রামের সুযোগ পায়নি তারা। মাত্র দুদিন পর নামতে হয় পাকিস্তানের বিপক্ষে। নেমেই সফল টাইগাররা। পাকিস্তানকে উড়িয়ে দিয়ে সিরিজ শুরু করে বাংলাদেশ দল। তখনই আরেকটি ইতিহাস গড়ার সুযোগ আসে লিটনদের সামনে। আর তা হলো পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো টি–টোয়েন্টি সিরিজ জেতা। সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে এসে সেটাও করে দেখাল টাইগাররা। গতকাল মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে পাকিস্তানকে ৮ রানে হারিয়ে প্রথমবারের মতো টি–টোয়েন্টি সিরিজ জিতে নিল বাংলাদেশ। বোলারদের দাপটের ম্যাচে বাংলাদেশের বোলাররা দেখিয়েছে তাদের দক্ষতা। আগের ম্যাচে প্রথমে বল করে পাকিস্তানকে বেঁধে ফেলেছিল ১১০ রানে। আর গতকাল নিজেরা ব্যাট করে ১৩৩ রান করতে সক্ষম হলেও সেটাকে পাকিস্তানের জন্য অপ্রতিরোধ্য করে তোলে বাংলাদেশের বোলাররা। বাংলাদেশের পাঁচ বোলারই উইকেট পেয়েছেন। এক ম্যাচ হাতে রেখে সিরিজ নিশ্চিত করা বাংলাদেশের দৃষ্টি এখন নিশ্চিতভাবেই হোয়াইটওয়াশের দিকে। বহু কাঙ্ক্ষিত এই সাফল্য মাইলস্টোন ট্র্যাজেডির শিকার সবার উদ্দেশে উৎসর্গ করলেন অধিনায়ক লিটন কুমার দাস। সোমবার দুপুরে মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনার পরপরই সামাজিক মাধ্যমে সহমর্মিতা ও শোক প্রকাশ করেন বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা। পর দিন সন্ধ্যার ম্যাচেও তাদের হৃদয়ে যেন ছিল সেই ঘটনার ছাপ। পেশাদারত্বের খাতিরে মাঠে নামলেও তাদের চোখ–মুখ ছিল মলিন।
মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। লম্বা সময় পর একাদশে সুযোগ পাওয়া নাঈম শেখ দ্বিতীয় ওভারেই ৩ রান করে বিদায় নেন। প্রথম ম্যাচের মতো এই ম্যাচেও ব্যর্থ লিটন। প্রথম ম্যাচে ১ রান করা লিটন এই ম্যাচে ফিরেছেন ৮ রান করে। ২ বল পর তাওহীদ হৃদয় রানআউট হয়ে ফিরেন রানের খাতা খোলার আগেই। আগের ম্যাচের নায়ক পারভেজ হোসেন ইমনও আজ জ্বলে উঠতে পারেননি। ১৪ বলে ১৩ রান করে শিকার হন পাকিস্তানের অভিষিক্ত পেসার আহমেদ দানিয়ালের। ২৮ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়া দলকে টানার চেষ্টা করেন জাকের আলি এবং মাহেদি হাসান। ৪৯ বলে ৫৩ রানের জুটিতে দলকে ম্যাচে ফেরান তারা। ৩৩ রান করে মাহেদি ফিরলে ভাঙে এ জুটি। এরপর একাই লড়েন জাকের আলি। ৪৬ বলে নিজের হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করে ইনিংসের শেষ ওভারে গিয়ে আউট হন ৫৫ রান করে। তার ৪৮ বলের ইনিংসটি সাজানো ছিল ১ চার ও ৫ ছক্কায়। আর তাতেই ১৩৩ রানে থামে বাংলাদেশের ইনিংস। পাকিস্তানের পক্ষে ২টি করে উইকেট নিয়েছেন সালমান মির্জা, আব্বাস আফ্রিদি ও দানিয়াল। একটি করে উইকেট নিয়েছেন ফাহিম আশরাফ ও মোহাম্মদ নওয়াজ।
১৩৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই ছত্রখান পাকিস্তানের ব্যাটিং। প্রথম ওভারের শেষ বলে সাইম আইয়ুব ফিরেন রানআউট হয়ে। দলের রান তখন ৮। নিজের প্রথম এবং ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে শরীফুল ফেরান মোহাম্মদ হারিসকে। নিজের পরের ওভারে ফখর জামানকে ফেরান শরীফুল তার দ্বিতীয় শিকার বানিয়ে। তবে পাকিস্তানকে সবচাইতে বড় ধাক্কাটা দেন তানজিম সাকিব নিজের প্রথম এবং ইনিংসের পঞ্চম ওভারে। পরপর দুই বলে হাসান নেওয়াজ এবং মোহাম্মদ নেওয়াজকে ফিরিয়ে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলেছিলেন তানজিম সাকিব। কিন্তু সেটা আর হয়নি। ১৫ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে একেবারে খাদের কিনারায় তখন পাকিস্তান। খুশদিল শাহ এবং সালমান আগা মিলে ১৫ রান যোগ করেন এই কঠিন সময়ে। তবে তাদের জুটিটা আর বড় হতে দেননি মেহেদী হাসান। তিনি ফেরান সালমান আগাকে। ৩০ রানে নেই ৬ উইকেট। খুশদিল শাহও পারেননি হাল ধরতে। তাকে নিজের দ্বিতীয় শিকার বানিয়ে ফেরান মেহেদী হাসান। ১৩ রান করে ফিরেন খুশদিল।
এরপর হঠাৎ প্রতিরোধ গড়ে বসেন ফাহিম আশরাফ এবং আব্বাস আফ্রিদি। আগের সাতজন মিলে ৪৭ রান করলেও এ দুজন মিলে যোগ করেন ৪১ রান। দ্বিতীয় স্পেলে বল করতে এসে শরীফুল ভাঙেন এ জুটি। ১৩ বলে ১৯ রান করা আব্বাস আফ্রিদি বোল্ড হন শরীফুলের বলে। শেষ দিকে ঝড় তোলার চেষ্টা করছিলেন ফাহিম আশরাফ। রিশাদের করা ১৯তম ওভার থেকে ১৫ রান তুলে নেন ফাহিম এবং দানিয়াল। তবে ওভারের শেষ বলে ফাহিমকে ফিরিয়ে টাইগার শিবিরে স্বস্তি ফেরান রিশাদ। ৩২ বলে ৪টি চার এবং ৪টি ছক্কায় ৫১ রান করে ফিরেন ফাহিম আশরাফ। শেষ ওভারে পাকিস্তানের দরকার ছিল ১৩ রান। মোস্তাফিজের করা প্রথম বল থেকে ৪ রান নিয়ে নেন দানিয়াল। তবে দ্বিতীয় বলে ছক্কা মারতে গিয়ে সীমানায় ধরা পড়েন শামীমের হাতে। আর তাতেই ইতিহাস রচিত হয়ে যায় বাংলাদেশের। ১২৫ রানে থামে পাকিস্তান। আর বাংলাদেশ পায় ৮ রানের জয়। যে জয়ে প্রথমবারের মতো পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ জিতল বাংলাদেশ। টাইগার বোলারদের মধ্যে ৩টি উইকেট নিয়েছেন শরীফুল। ২টি করে উইকেট নিয়েছেন মেহেদী হাসান এবং তানজিম হাসান সাকিব।
হতাহতদের সিরিজ জয় উৎসর্গ করল বাংলাদেশ দল : পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম সিরিজ জয়ের সাফল্য মাইলস্টোন স্কুল ও কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় হতাহতদের উৎসর্গ করার ঘোষণা দেন বাংলাদেশ অধিনায়ক লিটন কুমার দাস। সোমবার দুপুরে মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনার পরপরই সামাজিক মাধ্যমে সহমর্মিতা ও শোক প্রকাশ করেন বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা। পর দিন সন্ধ্যার ম্যাচেও তাদের হৃদয়ে যেন ছিল সেই ঘটনার ছাপ। পেশাদারত্বের খাতিরে মাঠে নামলেও তাদের চোখ–মুখ ছিল মলিন।
ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণ মঞ্চে ক্রিকেটীয় নানা প্রশ্নের পর নিজ থেকেই সঞ্চালকের কাছে সময় চেয়ে নেন লিটন। পরে মাইলস্টোনের দুর্ঘটনায় আক্রান্ত সবার জন্য সিরিজ জয়টি উৎসর্গ করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। তিনি বলেন, আমরা জানি, গতকাল যে দুর্ঘটনাটা ঘটেছে, পুরো বাংলাদেশ জাতির জন্য হৃদয়বিদারক। এই সিরিজ জয়টি সম্পূর্ণ তাদের। আমরা জানি, যাদের (স্বজন মারা) গিয়েছে তাদের শূন্যতা কিছু দিয়ে পূরণ করতে পারব না। তবে অন্তত আমাদের পক্ষ থেকে, এই সিরিজ জয়টি তাদের জন্য।
দিন ব্যাপী রাষ্ট্রীয় শোকে শামিল হয়ে ম্যাচে শোক প্রকাশের জন্য ম্যাচে নানা আয়োজন রাখে বিসিবি। হতাহতদের জন্য করা হয় দোয়া প্রার্থনা, খেলা শুরুর আগে পালন করা হয় এক মিনিটের নীরবতা, ক্রিকেটার ও ম্যাচ অফিসিয়ালরা পরেন কালো ব্যাজ। এছাড়া অন্যান্য দিনের মতো এ দিন পুরো ম্যাচে মাঠে কোনো গানও বাজানো হয়নি। ম্যাচ শেষে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন, মাইলস্টোন স্কুলের দুর্ঘটনায় হতাহত বাচ্চাদের জন্য মন পুড়ছে তাদের সবার।