গত কালকের দিনটা ছিল বাংলাদেশের জন্য শোকের। উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রশিক্ষণ উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে মারা গেছে অনেক শিক্ষার্থী। বুক ভরা সে শোক নিয়ে সাফ উইমেন’স অনূর্ধ্ব–২০ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জয়ের লক্ষ্যে মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। শোককে শক্তিতে পরিণত করে দক্ষিণ এশিয়ার নারীদের অনূর্ধ্ব–২০ এই চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা বাংলাদেশ ধরে রাখল অপরাজিত থেকে। বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় গতকাল সোমবার রাউন্ড রবিন লিগে নিজেদের শেষ ম্যাচে নেপালকে ৪–০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে শিরোপা জিতে নিয়েছে বাংলাদেশ। ম্যাচে দলের পক্ষে সবগুলো গোলই করেন সাগরিকা। চার দলের এই প্রতিযোগিতায় টানা ৬ ম্যাচ জিতে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে টুর্নামেন্ট সেরা হল বাংলাদেশ। রানার্সআপ হয়েছে নেপাল। আর এই নেপাল বাংলাদেশের কাছে দুবারই হেরেছে। প্রথম দেখায় ৩–২ গোলে আর গতকাল ৪–০ গোলে।
মাত্র সপ্তাহখানেক আগের কথা। মায়ানমারকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে ইতিহাস গড়েছে আফাইদা–ঋতুপর্ণারা। সে আনন্দের রেশ কাটতে না কাটতেই এবার সাগরিকারা দেশকে আরো একটি শিরোপা এনে দিল। সাফ অনূর্ধ্ব–২০ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। বলা যায় পুরো টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত খেলে একেবারে অজেয় থেকে ট্রফিটা নিজেদের করে নিয়েছে বাংলাদেশ। চার দলের এই টুর্নামেন্ট ছিল ডাবল লিগের। যেখানে ছয় ম্যাচ শেষে পয়েন্ট তালিকার সবার উপরের দলটি হয়েছে চ্যাম্পিয়ন। আর সে দলটির নাম বাংলাদেশ। ছয় ম্যাচেই কোন প্রতিপক্ষকে দাঁড়াতে দেয়নি স্বাগতিক নারীরা। শেষ ম্যাচের নায়ক সাগরিকা। অথচ এই সাগরিকা নেপালের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে লাল কার্ড পেয়ে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন তিন ম্যাচ। শেষ ম্যাচে ফিরেই করলেন ৪ গোল। বনে গেলেন শিরোপা জয়ের নায়ক।
ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ছিল বাংলাদেশ দল। দ্বিতীয় মিনিটেই এগিয়ে যেতে পারতো স্বাগতিকরা। সাগরিকার নেওয়ার শট লাফিয়ে কোনোমতে আটকান নেপাল গোলকিপার। একটু পর গোলমুখে বল পেয়ে পা ছোঁয়াতে পারেননি শান্তি মার্ডি। নেপালের রক্ষণে চাপ ধরে রেখে অষ্টম মিনিটে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। সতীর্থের থ্রু পাস অফসাইডের ফাঁদ ভেঙে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আগুয়ান গোলকিপারকে কাটিয়ে নিখুঁত কোনাকুণি শটে লক্ষ্যভেদ করেন সাগরিকা। ১৮ মিনিটে গোল হজম করতে বসেছিল বাংলাদেশ। বল তার হাত গলে বেরিয়ে যাওয়ার পর নেপালের মিনা দেউবার শট পোস্টে লাগলে বেঁচে যায় বাংলাদেশ। ফলে ১–০ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় বাংলাদেশ।
দ্বিতীয়ার্ধে নেপালকে চেপে ধরে টুর্নামেন্টের প্রথম আসরের চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ। ৫২ মিনিটে ব্যবধান হয় দ্বিগুণ। সতীর্থের পাস প্রথম স্পর্শে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে একটু এগিয়ে দারুণ শটে জাল খুঁজে নেন সাগরিকা। এই গোলের রেশ থাকতেই হ্যাটট্রিক পূরণের উচ্ছ্বাসে ভাসেন সাগরিকা। মাঝ মাঠ থেকে আসা লং ক্রস চিপ শটে গোলকিপারের মাথার ওপর দিয়ে জালে জড়িয়ে দেন এই ফরোয়ার্ড। ৩–০ গোলে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ৯–১ গোলে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। সে ম্যাচেও হ্যাটট্রিকের আনন্দে ডানা মেলেছিলেন সাগরিকা। খেলার ৭৬ মিনিটে ব্যবধান ৪–০ করেন সাগরিকা। সতীর্থের বাড়ানো বল ধরে গোলরক্ষকের পাশ দিয়ে লক্ষ্যভেদ করে ব্যবধান আরও বাড়ান সাগরিকা। একটু পরই তাকে তুলে নেন বাংলাদেশ কোচ পিটার জেমস বাটলার। বাকিটা সময়ে ব্যবধান আর না বাড়লেও ঘরের মাঠে শিরোপা ধরে রাখার আনন্দে মেতে উঠে বাংলাদেশের খেলায়াড়, কর্মকর্তারা।