পাহাড়ের উন্নয়নে বসবাসরত সকল জনগোষ্ঠীর মানুষের মধ্যে ঐক্য ও সমপ্রীতির বন্ধন সুদৃঢ় করার কোনো বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি–এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
গতকাল সোমবার বেলা ৩টায় এনসিপির জুলাই পদযাত্রার অংশ হিসেবে খাগড়াছড়ির শাপলা চত্বরের মুক্তমঞ্চে আয়োজিত সমাবেশে তিনি বলেন, পার্বত্য তিন জেলার সমস্যাগুলো কাছাকাছি। এখানে অনেকগুলো জাতিগোষ্ঠী বসবাস করেন। অর্থনৈতিক উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সুবিধার ক্ষেত্রে পাহাড়ে বসবাসরতরা বঞ্চিত। সে বাঙালি হোক, চাকমা হোক, মারমা হোক। ফলে পাহাড়ে যদি উন্নয়ন ঘটাতে হয় তাহলে কিন্তু ঐক্য, সম্প্রীতির কোনো বিকল্প নেই। পাহাড়ে যদি স্কুল, কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়, স্বাস্থ্য সেবার বিস্তৃতি হয় তাহলে এর সুযোগ–সুবিধা সকল জনগোষ্ঠী পাবে। ফলে আপনারা নিজেদের সুবিধার জন্য সকল জনগোষ্ঠীকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমরা সম্প্রীতি ও ঐক্যের বার্তা নিয়ে আপনাদের কাছে এসেছি।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশকে আমরা বহু ভাষা ও বহু সংষ্কৃতির দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। ঐতিহাসিকভাবে এই বদ্বীপ অঞ্চলে বহু সংস্কৃতির মিলন মেলা ছিল। এটি আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অংশ। একটি রাষ্ট্রের শক্তি হল–কত বৈচিত্র্যকে ধারণ করতে পারে। কিন্ত আমাদের সংবিধানে বৈচিত্র্যকে অস্বীকার করা হয়েছে। সকল জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভূক্তি ৭২ সালের সংবিধানে স্বীকার করা হয়নি। এখানে জাতির সাথে জাতির বিদ্বেষ, ধর্মের সাথে ধর্মের পার্থক্য, সেক্যুলারিজমের সাথে ইসলামের বিভেদসহ নানা ধরনের বিভেদ সংবিধানে জিইয়ে রাখা হয়েছে।
নাহিদ ইসলাম আরো বলেন, ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের পরে যে নতুন জাতীয় ঐক্যের সুযোগ, সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে তা আমরা হারাতে চায় না। ফলে বিচার, সংস্কার এবং নতুন সংবিধানের দাবিতে আমাদের এই জুলাই পদযাত্রা শুরু হয়েছে। আপনাদের একটা দাবি উঠাতে হবে–আমাদের একটি নতুন সংবিধান চাই, একটি নতুন বাংলাদেশ লাগবে, একটা নতুন খাগড়াছড়ি লাগবে।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে দীঘিনালায় সংঘটিত সাম্প্রদায়িক সংঘাতের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, ঘটনার পর আমি দীঘিনালায় এসেছিলাম। সেই ঘটনায় পাহাড়ি–বাঙালি উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেই আগুন লাগার ঘটনাকে কেন্দ্র্র করে দেশে এবং দেশের বাইরে অনেকে সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। বাংলাদেশে কোন আধিপত্যবাদী শক্তির জায়গা হবে।
পথযাত্রার সমাবেশে সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, আমরা বিশ্বাস করি সংখ্যায় যে যত কমই হোক বা বেশি হোক না কেন বাংলাদেশের যখন পলিসি নির্ধারণ করা হবে তখন প্রত্যেক জাতিগোষ্ঠীর স্বার্থকে মাথায় রাখতে হবে। বাংলাদেশের প্রতিটি প্রান্তে রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা পৌছাতে হবে। এই পার্বত্য অঞ্চলের মানুষেরা চিকিৎসা সেবা পেতে তাদেরকে অনেক কষ্ট করতে হয়। স্বাস্থ্য সেবার জন্য তাদেরকে অনেক উঁচু নিচু পথ পাড়ি দিতে হয়। এই কারণে পার্বত্য এলাকার প্রত্যন্ত এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করতে হবে। পাহাড়ি–বাঙালি সকলে মিলে বাংলাদেশকে রক্ষা করতে হবে।
এ সময় মাইলস্টোন কলেজের বিমান দুর্ঘটনায় আহতদের দ্রুত চিকিৎসা দেওয়ার আহ্বান জানান উত্তরাঞ্চলের মূখ্য সংগঠক সারজিস আলম।
এর আগে বেলা আড়াইটার দিকে খাগড়াছড়ি এসে পৌঁছায় এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা। শহরের মহাজন পাড়া থেকে পদযাত্রা শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে শাপলা চত্বরে এসে শেষ হয়। শাপলা চত্বরের মুক্তমঞ্চে আয়োজিত পথসভায় সারজিস আলমের সঞ্চলনায় আরও বক্তব্য রাখেন নাসির উদ্দিন পাটোয়ারি, খাগড়াছড়ির জেলা সমন্বয়ক মনজিলা ঝুমা।
এদিকে এনসিপির সমাবেশ উপলক্ষে গতকাল সকাল থেকে খাগড়াছড়িতে বাড়তি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। জেলা শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া আমর্ড পুলিশও মোতায়েন করা হয়েছে। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত ছিল সেনা সদস্যরাও।