তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান কে হবেন, ঐকমত্যের বৈঠকে বিএনপির যে প্রস্তাব

| সোমবার , ১৪ জুলাই, ২০২৫ at ৭:৫০ পূর্বাহ্ণ

শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের পক্ষে দল একমত হলেও এ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা কে হবেন, কীভাবে মনোনীত হবে, তা নিয়ে মতভিন্নতা রয়ে গেছে। গতকাল রোববার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকেও যে এ বিষয়ে ঐকমত্য হয়নি, তা জানা গেছে বৈঠক পরবর্তী রাজনৈতিক দলগুলোর সংবাদ সম্মেলনে। বৈঠকে প্রতিনিধিত্ব করা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে তারা বিকল্প বলেছেন। এছাড়া প্রধান বিচারপতির নিয়োগ নিয়েও তাদের প্রস্তাবের কথা বলেছেন তিনি। খবর বিডিনিউজের।

রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের সংলাপের দ্বাদশতম দিনের আলোচনায় এ দুটি বিষয় ছাড়াও ছিল জরুরি অবস্থা জারির বিধান নিয়ে।

প্রধান বিচারপতি নিয়োগ প্রক্রিয়ার নিয়ে আলোচনার বিষয়টি তুলে ধরে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির সীমাহীন ক্ষমতা প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে এখন আছে (সংবিধানের) ৯৫ অনুচ্ছেদে। বাংলাদেশের যেকোনো নাগরিককে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যায় যদি তার প্রধান বিচারপতি হওয়ার জন্য অন্যান্য যোগ্যতা থাকে। সেখানে হাইকোর্ট বিভাগ বা আপিল বিভাগ বা অন্য কোনো মাপকাঠি, ওখানে কোনো কিছু উল্লেখ করা নাই। সাংবিধানিকভাবে সেই ক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে আপিল বিভাগের বিচারপতিদের মধ্য থেকে নিয়োগের জন্য আমরা বাধ্যবাধকতা রাখি। আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম তিনজনের মধ্য থেকে যেন করা হয়।’

আলোচনায় জ্যেষ্ঠতম দুইজনের মধ্য থেকে একজনকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের বিধান করতে একটা জায়গায় আসার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘কোনো দল তার নির্বাচনি ইশতেহারে উল্লেখ করে যদি ম্যান্ডেট প্রাপ্ত হয়। তখন তারা দুইজনের বিধান সংবিধানে রাখতে পারবে। যেহেতু জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টি করতে চাই, এখানে আমরা একমত হয়েছি।’

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় বিচার বিভাগকে বাদ রেখে কয়েকটি বিকল্প রাখা যায় কিনা তা নিয়ে সবার একমত হওয়ার কথা বলেছেন বিএনপির এই নেতা। তিনি বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের ক্ষেত্রে তো দ্বিমত সারা জাতির মধ্যেই নাই। সবাই একমত। কিন্তু সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আগের পুরোটাই হচ্ছে বিচার বিভাগ নির্ভর। তো সেজন্য বিচার বিভাগ নির্ভর প্রস্তাবগুলোর বাইরে যদি কয়েকটি প্রস্তাবে আমরা আগে একমত হতে পারি সবাই মিলে, তাহলে বিচার বিভাগকে বিতর্কের বাইরে রাখা যায়।’

সালাহউদ্দিনের মতে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধানের দায়িত্বে রাষ্ট্রপতিকে রাখা ঠিক হবে না। রাষ্ট্রপতিকে না রাখতে পারলেই ভালো, তারপরও যদি ঐকমত্যে আসা না যায় সেই ক্ষেত্রে একদম শেষ বিকল্প হিসেবে রাখা যায় একটা প্রতিষ্ঠান প্রধানকে।

তিনি বলেন, সাধারণ নিয়মে সংসদ বিলুপ্ত হওয়ার ৩০ দিন আগে রাষ্ট্রপতি সংসদে প্রতিনিধিত্বশীল প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারে প্রধান নিয়োগের উদ্যোগ নেবেন। বাংলাদেশের নাগরিক যারা উপযুক্ত, উপদেষ্টা হওয়ার যোগ্য, তাদের মধ্য থেকে একজনকে প্রধান উপদেষ্টা করবেন। যদি পছন্দ মত না পাওয়া যায়, তাহলে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দল নেতা, সংসদের নিম্নকক্ষের স্পিকার ও বিরোধী দল থেকে মনোনীত ডেপুটি স্পিকার আলাদা করে নাম প্রস্তাব করবেন। সেখান থেকে ভোটাভুটির মাধ্যমে একজনকে ঠিক করা হবে। এ ক্ষেত্রে সভাপতিত্ব রাষ্ট্রপতিও করতে পারেন, স্পিকারও করতে পারেন। রাষ্ট্রপতি সভাপতিত্ব করলে তিনি শুধু শুনানি করবেন, ভোট দিতে পারবেন না। আর স্পিকার সভাপতিত্ব করলে তার ভোট প্রয়োগের ক্ষমতা থাকবে। এভাবে যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ঠিক করতে পারেন তাহলে সে প্রক্রিয়া এখানে সমাপ্ত হবে। আর যদি সেটা না হয় সে ক্ষেত্রে আরেকটি প্রস্তাবের কথা তুলে ধরে সালাহউদ্দিন বলেন, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দল নেতা, নিম্নকক্ষের স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার (বিরোধী পক্ষ থেকে যিনি হবেন) এই চারজন, সাথে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী তৃতীয় বৃহৎ দলের পক্ষ থেকে একজন প্রতিনিধি থাকবেন। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি সভাপতিত্ব করবেন এবং রাষ্ট্রপতির ভোট দেওয়ার ক্ষমতা থাকবে। আলোচনার যদি ঠিক হয় তাহলে ভালো।

এভাবেও যদি প্রধান উপদেষ্টা ঠিক করা না যায় তাহলে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দল নেতা, নিম্নকক্ষের স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার, সংসদে তৃতীয় বৃহৎ দলের একজন প্রতিধির সঙ্গে বিরোধী দল বাদে যারা নূনতম ৫ শতাংশ ভোট পেয়েছে তাদের পক্ষ থেকে একজনকে রাখা হবে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির ভোট দেওয়ার ক্ষমতা থাকবে।

তিনি বলেন, ‘এগুলো যদি না হয় তাহলে ত্রয়োদশ সংশোধনী অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতিতে যা আছে সেখানে আমরা ফিরে আসতে পারি। এক্ষেত্রে একটা প্রস্তাব দিয়েছি, অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিদের মধ্যে যাদের বয়স ৭৫ বেশি হবে না, তাদের মধ্য থেকে যাদের পাওয়া যায় সেখান থেকে মনোনয়ন হবে। প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দল নেতা, নিম্নকক্ষের স্পিকার ও ডেপটি স্পিকারের কমিটি যাচাই বাছাই করে একজনকে মনোনীত করতে পারেন। এরপরেও যদি না হয় তাহলে রাষ্ট্রপতিকে রাখার বা না রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত যেটা হয় সেটা নিতে পারে। অথবা রাষ্ট্রপতি না হয়ে কোনো একটা প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে করা যায় কিনা এটাও সিদ্ধান্তে আসবে।’

বিএনপির নেতা বলেন, বৈঠকে ঐকমত্য কমিশনের তরফে যেসব প্রস্তাব আসছে, তারা চান সেগুলো নিয়ে আলোচনা হোক। আমরা চাই, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির মধ্যে কয়েকটা বিকল্প আসুক, বিচার বিভাগকে বাদ দিয়ে। যেহেতু বিচার বিভাগকে বিতর্কের বাইরে রাখাটাই হচ্ছে সবার উদ্দেশ্য।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধসাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের ৬ষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী আজ
পরবর্তী নিবন্ধগ্যাসের সিলিন্ডারবাহী কাভার্ডভ্যানে লিকেজ, আতঙ্ক