রবিনের স্বীকারোক্তি, রিমান্ডে আরেকজন

প্রকাশ্যে মাথা থেঁতলে হত্যা । বিএনপির ৫ জন বহিষ্কার । ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বে হত্যা : ডিএমপি

আজাদী ডেস্ক | রবিবার , ১৩ জুলাই, ২০২৫ at ৮:০৫ পূর্বাহ্ণ

পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে এক ভাঙারি ব্যবসায়ীকে প্রকাশ্যে মাথা থেঁতলে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার তারেক রহমান রবিন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আর হত্যা মামলায় টিটন গাজী নামের আরেক আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত।

তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালী থানার এসআই মো. মনিরের আবেদনে গতকাল শনিবার ঢাকার মহানগর হাকিম হাসিব উল্লাহ গিয়াস রবিনের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। পরে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। একই বিচারক টিটন গাজীর রিমান্ডের আদেশ দিয়েছেন। প্রসিকিউশন পুলিশের এসআই তানভীর মোর্শেদ চৌধুরী এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা রবিন ও টিটনকে আদালতে হাজির করেন। দুই দিনের রিমান্ড শেষে রবিন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হওয়ায় তা রেকর্ড করার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালী থানার এসআই মনির। রবিন এই ঘটনায় পুলিশের করা অস্ত্র মামলার আসামি। আর টিটন গাজীকে সাত দিনের রিমান্ডে চেয়ে আবেদন করেন আরেক তদন্ত কর্মকর্তা একই থানার ইন্সপেক্টর নাসির উদ্দিন।

এদিকে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, মিটফোর্ডের নারকীয় হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচারে সরকার বদ্ধপরিকর। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আইনের অধীনে দ্রুততম সময়ে বিচার শেষ করা হবে। আর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, ভাঙারি ব্যবসায়ী সোহাগ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। খবর বিডিনিউজ, বাংলানিউজ ও বাসসের।

গত বুধবার বিকালে মিটফোর্ড হাসপাতালের ৩ নম্বর ফটকের সামনে প্রকাশ্যে কংক্রিট বোল্ডার দিয়ে শরীর ও মাথা থেঁতলে হত্যা করা হয় ভাঙারি ও পুরনো তারের ব্যবসায়ী মো. সোহাগ ওরফে লাল চাঁদকে। এরপর এই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। এ ঘটনায় তার বড় বোন বাদী হয়ে কোতোয়ালী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। আর পুলিশ দায়ের করেছে অস্ত্র মামলা। এই ঘটনায় পুলিশ ও র‌্যাব চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের মধ্যে দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে পাঠায় আদালত। তারা হলেন মাহমুদুল হাসান মহিন ও তারেক রহমান রবিন। দুজনের মধ্যে রবিন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলেন। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের পাঁচজনকে বহিষ্কারের কথা জানিয়েছে বিএনপি।

এদিকে এই হত্যাকাণ্ডকে দুঃখজনক বর্ণনা করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, এইটার জন্য আমরা অলরেডি পাঁচজনরে আইনের আওতায় নিয়ে আসছি। গতকালকে র‌্যাব দুইজন ধরছে, ডিএমপি দুইজন ধরছে, আজকে একজন ধরছে।

পুলিশ ও স্থানীয়রা বলছেন, ওই হত্যাকাণ্ডে যাদের অংশ নিতে দেখা গেছে এবং নেপথ্যে যাদের নাম আসছে, তারা সবাই পূর্ব পরিচিত। একসময় তাদের কয়েকজন সোহাগের ব্যবসার সহযোগী ছিলেন। ব্যবসা সংক্রান্ত বিরোধে এমন ভয়ঙ্করভাবে কাউকে হত্যা করা হতে পারে, তা পরিচিতজনদের ধারণারও বাইরে।

ওই এলাকার একজন বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের ব্যবসায়ী বলছেন, পুরনো তারের ব্যবসার একটি বড় সিন্ডিকেট সেখানে রয়েছে, যার নিয়ন্ত্রণ করতেন সোহাগ। গ্রেপ্তার মহিন তার দলবল নিয়ে ওই সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। সেই চেষ্টায় তারা সোহাগের গোডাউনে তালা মেরে দেয়। তাদের মধ্যে এটা নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক হয়। জড়িতদের কয়েকজন স্থানীয় যুবদলের রাজনীতিতে জড়িত। সোহাগও এক সময় যুবদল করতেন।

রবিন বললেন, ফাইসা গেছি : ভাঙারি ব্যবসায়ীকে প্রকাশ্যে মাথা থেঁতলে হত্যার ঘটনায় দুই আসামি তারেক রহমান রবিন এবং টিটন গাজী দুজনেই এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছেন। আদালতে জবানবন্দি দেওয়া অস্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার রবিন বলেছেন, তিনি ফেঁসে গেছেন। টিটনের ভাষ্য, ব্যবসায়ী মো. সোহাগ ওরফে লাল চাঁদকে তিনি কোনো আঘাত করেননি বা অন্য কাউকে মারধরের নির্দেশও দেননি।

ঢাকার মহানগর হাকিম হাসিব উল্লাহ গিয়াস রবিনের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। পরে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। রবিন পরে সাংবাদিকদের বলেন, আমি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত না। আমি দোষী, সারা বাংলাদেশের মানুষ জেনে গেছে। তার কাছ থেকে একটি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। রবিন বলেন, আর ৮ দিন পর তার পর্তুগালের ফ্লাইট, বিদেশ যাওয়ার জন্য তার ২২ লাখ টাকা এ বাবদ খরচ হয়েছে।

এই হত্যাকাণ্ডের জড়িতদের কারো সঙ্গে তার সম্পর্ক নেই জানিয়ে রবিন বলেন, আমি ফাইসা গেছি। ঘটনাস্থলে ছিলাম না। সন্দেহের কারণে আমাকে গ্রেপ্তার করেছে। আমার জীবনটা শেষ। আম্মু অসুস্থ হয়ে পড়েছে, ডায়াবেটিস ধরা পড়েছে। আর কিছু বলতে চাই না।

এদিন আদালতে রিমান্ডের শুনানির সময় টিটন গাজী বলেছেন, তিনি ওই ঘটনার সময় কেবল দাঁড়িয়ে ছিলেন। একজনের ফোন পেয়ে সেখানে যাই, আমি আঘাত করিনি।

কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা টিটন গাজীকে সামনে ডেকে আনেন বিচারক, তার আইনজীবী আছে কিনা তা জানতে চান। টিটন জানান, তার কোনো আইনজীবী নেই। এরপর তার কোনো বক্তব্য আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি আদালতকে বলেন, যে ভিডিওটা ভাইরাল হয়েছে, মনোযোগ সহকারে দেখবেন। আমি কোনো আঘাত বা মারধর করিনি। ভিডিওতে দেখবেন, আমি পেস্ট কালারের গেঞ্জি পরা। আমার এ ঘটনায় কোনো ভূমিকা ছিল না। আমি কাউকে মারার হুকুম দিইনি। শুধু দাঁড়িয়ে ছিলাম।

পরে আদালত টিটনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠানোর আদেশ দেন।

বিচারক এজলাস থেকে নেমে যাওয়ার পর টিটন গাজী জানিয়েছেন, মনির নামের একজন তাকে ফোন দেন। সেই ফোন পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। তবে কী কারণে এ ঘটনা ঘটেছে তা জানা নেই বলে ভাষ্য টিটনের।

এদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রাথমিকভাবে জানা যায়, ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব এবং পূর্ব শত্রুতার জের ধরে এই ঘটনাটি ঘটেছে। ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে এবং ঘটনার সাথে জড়িত অন্যান্যদের গ্রেপ্তারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমফস্বলে পড়ে ব্যবসায় শিক্ষায় তাক লাগানো ফল
পরবর্তী নিবন্ধষড়যন্ত্র শেষ হয়নি, ফের জোরেশোরে শুরু হয়েছে : তারেক রহমান