কমেছে পাশের হার, বেড়েছে জিপিএ-৫

পিছিয়ে পাহাড়ের তিন জেলা ফটিকছড়ির একটি স্কুলে একজনও পাশ করেনি মোট জিপিএ-৫ এর ৮৮% বিজ্ঞানে

ইমাম ইমু | শুক্রবার , ১১ জুলাই, ২০২৫ at ১০:৫৭ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে এবার পাশের হার ৭২ দশমিক ০৭ শতাংশ, যা গতবার ছিল ৮২ দশমিক ৮০ শতাংশ। গতবারের চেয়ে পাশের হার কমেছে ১০ দশমিক ৭৩ শতাংশ। পাশের হার কমলেও এবার বেড়েছে জিপিএ৫ এর সংখ্যা। এবার চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে জিপিএ৫ পেয়েছে ১১ হাজার ৮৪৩ জন শিক্ষার্থী, যা গতবার ছিল ১০ হাজার ৮২৩ জন। এবারে ১০ হাজার ৪৫৪ জন জিপিএ৫ পেয়েছে বিজ্ঞান শাখা থেকে, যা মোট জিপিএ৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর প্রায় ৮৮ শতাংশ। এবারে পাশের হার ও জিপিএ৫ দুটোতেই এগিয়ে রয়েছে মেয়েরা। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর দুইটায় চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড মিলনায়তনে এসব তথ্য জানান পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পারভেজ সাজ্জাদ চৌধুরী। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ইলিয়াছ উদ্দিন আহাম্মদ।

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অধীনে চট্টগ্রাম ছাড়া কক্সবাজার, রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি জেলার শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। সব মিলিয়ে এবার পরীক্ষার্থী ছিল ১ লাখ ৪১ হাজার ৩৩ জন। এর মধ্যে পাস করেছে ১ লাখ ১ হাজার ১৮১ জন। ছাত্রদের পাসের হার ৭১ দশমিক ৯৩ শতাংশ এবং ছাত্রীদের পাসের হার ৭২ দশমিক ১৯ শতাংশ। অকৃতকার্য হয়েছে ৩৯ হাজার ২০৭ জন। এরমধ্যে শুধু এক বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছে ২৪ হাজার ৬৬৮ জন। এক বিষয়ে অকৃতকার্যের হার প্রায় ৬৩ শতাংশ। একটি স্কুলে একজন শিক্ষাথীও পাশ করেনি। সেটি হলো চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির নারায়ণহাট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। ১০ থেকে ২০ শতাংশ পাশের হার এমন বিদ্যালয়ের সংখ্যা ছয়টি। ২০ থেকে ৫০ শতাংশ পাশের হার এমন বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১৫৩টি। ৫০ থেকে ১০০ এমন বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৯৭০টি। ৩৩টি স্কুলে শতভাগ পাশ করেছে। বহিষ্কৃত হয়েছেন এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যা একজন। এবারে মোট এক হাজার ১৬৪টি স্কুলের শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। এরমধ্যে কেন্দ্র ছিল ২১৯টি।

ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, চট্টগ্রাম নগরে পাসের হার ৮১ দশমিক ০৩ শতাংশ। আর নগর বাদে জেলায় পাসের হার ৭১ দশমিক ২৯ শতাংশ। তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে রাঙামাটিতে পাসের হার ৫৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ, খাগড়াছড়িতে ৬০ দশমিক ৭৭ ও বান্দরবানে ৬৩ দশমিক ১২ শতাংশ। অন্যদিকে কঙবাজার জেলায় পাসের হার ৭০ দশমিক ৭৬ শতাংশ। বিভাগ হিসেবে বিজ্ঞান বিভাগে পাসের হার ৯২ দশমিক ৫৭ শতাংশ। ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে পাসের হার ৭৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ ও মানবিক বিভাগে পাসের হার ৫৫ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ।

জিপিএ৫ প্রাপ্তদের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১১ হাজার ৮৪৩ জন জিপিএ৫ প্রাপ্তদের মধ্যে ১০ হাজার ৪৫৪ জন শিক্ষার্থী বিজ্ঞান বিভাগের। যা মোট জিপিএ৫ প্রাপ্তর প্রায় ৮৮ শতাংশ। এরমধ্যে ছাত্র ৫ হাজার ১৩১ জন, ছাত্রী রয়েছে ৫ হাজার ৩২৭ জন। এগিয়ে রয়েছে মেয়েরা। এছাড়া মানবিক বিভাগে মোট ১৩৮ জন জিপিএ৫ পেয়েছে। এরমধ্যে ছাত্র ১৪ জন, ছাত্রী রয়েছে ১২৪ জন। ব্যবসায় শিক্ষায় জিপিএ৫ পেয়েছে এক হাজার ২৪৭ জন শিক্ষার্থী। এরমধ্যে ছাত্র ৩৪৫ জন ছাত্রী ৯০২ জন। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটায় চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সামনে দেখা হয় রাঙামাটির রাবেতা মডেল হাইস্কুলের এসএসসি পরীক্ষার্থী আরাফাতের সাথে। হাসি মুখে আরাফাত তার ফলাফলের কথা জানান। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে আরাফাত পেয়েছেন ৪.১৬ জিপিএ। এখন চট্টগ্রাম শহরে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে এসআর হিসেবে কাজ করছেন। পরিবারের টানাপোড়েনেও পড়াশোনা করে এমন ফলাফলে খুশি আরাফাত।

পাশের হার কমার ব্যাপারে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ইলিয়াছ উদ্দিন আহাম্মদ বলেন, আমাদের নগরের ফলাফল অনেক ভালো। সেই তুলনায় চট্টগ্রামের অন্যান্য উপজেলায় পাশের হার কম। বেশি কমেছে পার্বত্য তিন জেলায়। এর প্রভাব পড়েছে পুরো ফলাফলে। তিনি জানান, পাহাড়ে তুলনামূলক পড়াশোনার সুযোগসুবিধা কম। অনেক স্কুল অবকাঠামোর দিক থেকে পিছিয়ে রয়েছে। আবার অনেক স্কুলে শিক্ষক, ক্লাস রুম সংকট রয়েছে। এরকম নানা কারণে পাহাড়ে আসলে পাশের হার কমেছে। চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বলেন, গত বছর জুলাই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ব্যাহত হয়েছে। অনেক শিক্ষার্থী মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিল। এছাড়া নানা কারণে পাশের হার কমেছে। আমরা এসব বিষয় মনিটরিং করছি। এরপর সেই অনুযায়ী সুপারিশ করবো যাতে এ পাশের হার বাড়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধউন্নত ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে তরুণ প্রজন্মকে দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলা আবশ্যক : প্রধান উপদেষ্টা
পরবর্তী নিবন্ধচার কারণ, সাত সুপারিশ