কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে মেয়র ও প্রধান নির্বাহীকে লিগ্যাল নোটিশ

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ১১ জুলাই, ২০২৫ at ১০:৫৬ পূর্বাহ্ণ

নগরের হালিশহর আনন্দিপুর এলাকায় নালায় পড়ে নিহত তিন বছরের শিশু হুমায়রা আক্তারের পরিবারকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে লিগ্যাল নোটিশ দেয়া হয়েছে। গতকাল আশরাফুর রহমান নামে সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী এ নোটিশ দেন। এতে শহরের নালাকে উন্মু্‌ক্ত না রেখে নিরাপদ করতে বলা হয়। অন্যথায় হাইকোর্টে রিট পিটিশন করা হবে।

এ বিষয়ে সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন আজাদীকে বলেন, হীন উদ্দেশ্যে শুধুমাত্র আত্মপ্রচারের জন্য কোন ধরনের গাফিলতি না থাকা সত্ত্বেও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে আইনি নোটিশ দেওয়া হয়েছে। সিটি কর্পোরেশন আইনের সীমারেখার মধ্যে নাগরিক সেবা প্রদান করে চলেছে এবং এই ঘটনা নিয়ে যেকোনো আইনগত কার্যক্রমে যথাযথ জবাব প্রদান করবে। মেয়র বলেন, যে নালায় পড়ে শিশুটি মারা গেছে সেটি একটি সার্ভিস ড্রেন। ওখানে একটি গার্মেন্টস আছে, তাদের উচিত ছিল তাদের সার্ভিস ড্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। তাছাড়া গার্মেন্টস কর্মীর সন্তান খেলছে, সেখানে তো দারোয়ান থাকার ছিল।

এদিকে চসিকের জনসংযোগ শাখা থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উক্ত নালাটি একটি বেসরকারি গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানের সীমানায় অবস্থিত এবং গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণাধীন। ঘটনার স্থানটি ঝুঁকিপূর্ণ থাকলেও সংশ্লিষ্ট বেসরকারি কর্তৃপক্ষ কোনো ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি যা দায়িত্বহীনতার পরিচয় বহন করে। শিশুটির মা ওই গার্মেন্টসে কাজ করেন। শিশুটির মা বা পরিবারও তাদের সন্তানের নিরাপত্তার বিষয়ে যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করেনি যা দুঃখজনক ঘটনাটির জন্ম দিয়েছে । কোনো ধরনের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বেসরকারি গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষ আবাসিক এলাকায় গার্মেন্টস এর কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিল।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই নালাটির ব্যাস মাত্র ১৪ ইঞ্চি। এত ক্ষুদ্র আকারের নালাগুলো সাধারণত উন্মুক্তই থাকে। ঘটনাস্থলের আশেপাশের বড় নালাগুলো যথারীতি সুরক্ষিত ছিল। নালার বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কোন ধরনের অবহেলা বা গাফিলতি ছিল না। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নগরবাসীর সার্বিক কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে এবং সকল নাগরিকের প্রতি দায়বদ্ধ হলেও বেসরকারি মালিকানাধীন স্থানে সংঘটিত প্রতিটি ঘটনার কিংবা বাবামায়ের অসতর্কতার কারণে সংগঠিত প্রতিটি ঘটনার পূর্ণ দায়ভার কর্পোরেশনের উপর বর্তানো আইনগত ও নীতিগতভাবে সঠিক নয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন কানাডার টরোন্টো থেকে আনন্দপুর এলাকায় এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় গভীর শোক জানিয়েছেন। মেয়রের বরাতে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়। এ দুর্ঘটনা তদন্তে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন তদন্ত কমিটি গঠন করেছে এবং দুর্ঘটনার সাথে সাথে চসিকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ দুর্ঘটনার প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে দুর্ঘটনাস্থল একটি আবাসিক এলাকা হওয়া সত্ত্বেও সেখানে কীভাবে একটি গার্মেন্টস কারখানা স্থাপিত হয়েছে তা জানতে চিঠি দেয়া হবে। এছাড়া আবাসিক এলাকায় গার্মেন্টস কারখানা পরিচালনা করায় গার্মেন্টস মালিক পক্ষের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আইন শাখার মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এদিকে চসিককে দেয়া লিগ্যাল নোটিশে বলা হয়, চট্টগ্রামে উন্মুক্ত ড্রেন ও খালে পড়ে যাওয়ার ঘটনা দুঃখজনক হলেও নতুন নয়। গত ছয় বছরে চট্টগ্রাম শহরে উন্মুক্ত ড্রেন ও খালে পড়ে অন্তত ১৪ জন, যাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন শিশু ছিল, মারা গেছে। কিন্তু চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি বা জননিরাপত্তা নিশ্চিত করেনি।

নোটিশে বলা হয়, এটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে, বর্ষাকালে ড্রেনগুলো খোলা ছিল এবং কর্তৃপক্ষ কোনো রকম নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেয়নি। কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণেই একটি তিন বছর বয়সী শিশুর মৃত্যু হয়েছে। মনে রাখতে হবে, জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারি কর্তৃপক্ষের মৌলিক দায়িত্ব।

লিগ্যাল নোটিশে বলা হয়। হুমায়রার মৃত্যুতে তার পরিবার চরম ও অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে, যা অর্থ দিয়ে পূরণীয় নয়। তবে, পরিবারের প্রতি কিছুটা সান্ত্বনা ও কর্তৃপক্ষের অবহেলার বিরুদ্ধে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপনের উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে ক্ষতিপূরণ প্রদানের অনুরোধ জানানো হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহাসিনাসহ তিনজনের বিচার শুরু
পরবর্তী নিবন্ধউন্নত ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে তরুণ প্রজন্মকে দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলা আবশ্যক : প্রধান উপদেষ্টা