চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী উপজেলার উপকূলীয় ৮ ইউনিয়নের লাখ লাখ নিরীহ মানুষ বঙ্গোপসাগরের লবণাক্ত পানির সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে আছে। ১৯৬০ সাল থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত একাধিক মহাপ্রলয়কারী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস উপকূলীয় এলাকার অধিকাংশ ইউনিয়নের জনগণ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দীর্ঘ ৬৫ বছরের মধ্যে ১৯৬০ সালের জলোচ্ছ্বাসের পর বাঁশখালী সমগ্র উপকূলীয় এলাকায় জনগণের জানমাল রক্ষার্থে উপকূলীয় বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ সরকার জনস্বার্থে শুরু করে। ১৯৯১ সালের ২৯ শে এপ্রিলের মহাপ্রলয়কারী ঘূর্ণিঝড় জলোচ্ছ্বাসের কারণে উপকূলীয় এলাকার বেড়িবাঁধ বিধ্বস্থ হয়ে মাটির সাথে মিশে গিয়েছিল। এ ব্যাপারে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করলে উপকূলবাসীর স্বপ্ন পূরণে এ পর্যন্ত অরক্ষিত বাঁশখালীর উপকূল রক্ষার্থে স্থায়ী ও টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য ২৯৩ কোটি টাকার বরাদ্দসহ অনুমোদন দেন। ২০১৫ সালের মে থেকে শুরু করে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত কাজের মেয়াদ রাখা হলেও কাজ শুরু হয়েছে সব প্রক্রিয়া শেষে ২০১৬ সালের শেষের দিকে। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা মারামারি ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়াতে ২০ দিন কাজ বন্ধ থাকে। পরে ইউএনও ও পুলিশের হস্তক্ষেপে পুনরায় কাজ শুরু হয়। তখন কিছুদিন কাজ বন্ধ থাকায় চলমান কাজে বিরাট বাধা প্রাপ্তিতে কাজের ক্ষতি হয়েছে। প্রেমাশিয়া থেকে কদমরসুল মধ্যম সীমানা পর্যন্ত সবচেয়ে ভয়ংকর বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ এলাকাটি পুরো বাঁশখালীর উপকূলীয় এলাকার অন্যতম ভয়াবহ এলাকা। পাউবো কর্তৃক নির্মিত ২০২৩ সালে শেষ হওয়া ২৯৩ কোটি টাকার প্রকল্পটি দুই বছরের মধ্যে সাগরের ঢেউয়ে ধসে যাচ্ছে। এখনো দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার সংকেত পেলেই নিদ্রাহীন রাত পার করতে হয় উপকূলবাসীকে। সম্প্রতি উপকূলীয় বেড়িবাঁধ নির্মাণে নতুন করে বাঁশখালীতে প্রায় ৫০৯ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন হলেও উপকূলবাসীর শঙ্কা কাটেনি। তারা পূর্বের ন্যায় প্রকল্পটির অর্থ আত্মসাৎ হওয়ার শংকা প্রকাশ করছেন। তবে সুষ্ঠুভাবে যদি সংস্কার কাজ হয় তাহলে তাদের জীবনের পট পরিবর্তন হবে। বাঁশখালীর উপকূলীয় এলাকার ৫০ হাজার পরিবার বাস্তুহারা / গৃহহারা উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়েছে। শুধু ৯১ সালে বেড়িবাঁধের অভাবে প্রায় ৭০ হাজারের মত মানুষ মৃত্যুবরণ করেছিলো এবং হাজার কোটি টাকার সম্পদেরও বিনষ্ট হয়েছে।
ছোট ছনুয়া ও খুদুকখালী এবং কদমরসুলের মধ্যম সীমানা থেকে দক্ষিণের সীমানা পর্যন্ত প্রায় ১ কিঃমিঃ বাঁধভাঙ্গা প্রেমাশিয়া বাজার হতে দক্ষিণাংশের সীমানা পর্যন্ত বঙ্গোপসাগর তীরের সাথে লাগানো বাঁধটি খুবই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এমনকি নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে সাধনপুর পশ্চিম বৈলগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন সেল্টারটি। বঙ্গোপসাগর ও শঙ্খ নদীর ভাঙনে আরো বেশ কিছু এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হারিয়ে গেছে প্রেমাশিয়া সাইক্লোন সেন্টারসহ কয়েকটি প্রাথমিক স্কুল কাম সাইক্লোন সেন্টার। ২০২৩ সালে ব্যয় আরও বাড়ানো হলেও দীর্ঘসময় নানা কারণে বাঁধ নির্মাণ শেষ করা সম্ভব হয়নি। অধিকাংশ স্থানে বেড়িবাঁধের নির্মাণ কাজ না করে ঠিকাদার ফেলে রেখেছে। তবে বাঁশখালী উপকূলে স্থায়ী ও টেকসই বেড়িবাঁধের প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি। কদমরসূলের নবনির্মিত বাঁধের ধসে পড়া ব্লক পরিদর্শনক্রমে বিহীত ব্যবস্থাকরণ এবং কদমরসুলের ভাঙা অংশের বেড়িবাঁধ নির্মাণ জনস্বার্থে অপরিহার্য। নচেৎ ৯১ এর পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে। এমনকি এই বেড়িবাঁধ স্থায়ী ও টেকসই না হলে আগামীতে ব্যাপকহারে জানমালের ক্ষয়ক্ষতির আশংকা রয়েছে। সরকারিভাবে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ প্রদান করলেও কাজে ভয়াবহ দুর্নীতি ও অনিয়মের ফলে বাঁশখালীর উপকূলীয় বেড়িবাঁধ সেই আগের অবস্থান থেকে পরিবর্তন করতে পারেনি। ফলে ঘূর্ণিঝড় শুরু হলে বাঁশখালীর উপকূলীয়, ইউনিয়ন খানখানাবাদ, সাধনপুর, বাহারছড়া, গণ্ডামারা, পুকুরিয়া, সরল, ছনুয়া, শেখেরখীল, কাথরিয়া, শীলকূপ, পুঁইছড়ি সহ বিভিন্ন ইউনিয়নের লোকজনের হৃদয়ে কম্পন শুরু হয় এবং বিগত দিনের মতো জলোচ্ছ্বাসে সাগরে বিলীন হওয়ার ভয়ে চমকে উঠে। এ ব্যাপারে সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।