তৈরি পোশাক খাত নিয়ে শঙ্কা

বাংলাদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে বড় ক্রেতারা : সেলিম রহমান সুরাহা না হলে চড়া মূল্য দিতে হবে : সৈয়দ তানভীর

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ৯ জুলাই, ২০২৫ at ৬:২০ পূর্বাহ্ণ

৩৫ শতাংশ মার্কিন শুল্ক বহাল থাকলে দেশের রপ্তানি খাতে বিপর্যয় নামবে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রপ্তানিকারকেরা। বিশেষ করে তৈরি পোশাকখাতের সাথে সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, এতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান এই সেক্টরটি ঝড়ের মুখে পড়বে। রপ্তানিকারকেরা বলেন, আমাদের তৈরি পোশাকশিল্পের অনেক বড় বাজার হচ্ছে আমেরিকায়। এখানে যদি এতো বিশাল অংকের শুল্ক আরোপ করা হয়, তাহলে আমাদেরকে অনেক বড় ধাক্কার মুখে পড়তে হবে। সবচেয়ে শঙ্কার ব্যাপার হচ্ছে, তৈরি পোশাকখাতে আমাদের অন্যতম প্রধান প্রতিযোগী হচ্ছে ভিয়েতনাম। ভিয়েতনাম আমেরিকায় ২০ শতাংশ শুল্কে পোশাক রপ্তানি করবে। কিন্তু আমাদের দিতে হবে ৩৫ শতাংশ।

আবার আরো একটি ব্যাপার এখনো ঝাপসা রয়েছে মন্তব্য করে তৈরি পোশাকখাতের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলেন, আমরা এখনও নিশ্চিত না যে, আগের যে ১৬ শতাংশ শুল্ক ছিল, সেটি এর (নতুন ৩৫ শতাংশ) সাথে যুক্ত হবে কিনা। যদি সেটিও যুক্ত হয়, তাহলে ৫১ শতাংশ শুল্ক নিয়ে যে পরিস্থিতিতে আমাদের পড়তে হবে তা অবর্ণনীয়।

গার্মেন্টস সেক্টরের সাথে সংশ্লিষ্টরা বলেন, সরকার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কী ধরনের আলোচনা করছে বা আদৌ করছে কিনা, আমরা কিছুই জানি না। অথচ এটা দেশের অন্যতম প্রধান রপ্তানি খাতের ভবিষ্যতের প্রশ্ন। তারা বলেন, আগস্ট মাস পর্যন্ত আমাদের সময় আছে। এই সময়ের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে শুল্কহার পুনর্বিবেচনার সুযোগ রয়েছে। এখন সুষ্ঠু আলাপ আলোচনাই আমাদেরকে একটি পথ দেখাতে পারে বলেও তারা মন্তব্য করেন।

বিজিএমইএ’র প্রথম সহসভাপতি সেলিম রহমান বলেন, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শুল্ক সংক্রান্ত আলোচনা বা সমঝোতা বিষয়ে শিল্পখাতকে কোনোভাবেই অবহিত করা হয়নি। এমনকি সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর কোনো মতামতও গ্রহণ করা হয়নি। ফলে একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় বাণিজ্যিক সিদ্ধান্ত ব্যবসায়ী সমাজের অংশগ্রহণ ছাড়াই গ্রহণ করা হয়েছে, যা হতাশাজনক।

বিশ্ব বাণিজ্য বর্তমানে অত্যন্ত মূল্য সংবেদনশীল বা প্রাইজ সেনসেটিভ মন্তব্য করে সেলিম রহমান বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় প্রতিযোগী ভিয়েতনামের উপর শুল্ক মাত্র ২০ শতাংশ, যেখানে আমাদের ক্ষেত্রে তা ৩৫%। এটা একটি গুরুতর বৈষম্য তৈরি করছে। বর্তমান মৌসুমে হয়তো কিছুটা সামাল দেওয়া সম্ভব হবে, কিন্তু ভবিষ্যতে এই শুল্কের প্রভাবে বাংলাদেশ থেকে বড় বড় অনেক ক্রেতাই মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে। কারণ ক্রেতারা স্বাভাবিকভাবেই কম খরচের বাজারে ঝুঁকবে।

আমাদের তৈরি পোশাক রপ্তানি খাতের প্রায় ৪০ শতাংশ আমেরিকার বাজারে। যেসব কারখানা মার্কিন বাজারে কাজ করছে, তারা তখন বিকল্প বাজার খুঁজতে বাধ্য হবে। কিন্তু ইউরোপের বাজার ইতোমধ্যেই প্রতিযোগিতামূলক এবং সংকুচিত, আর তাদের অর্থনীতিও এই মুহূর্তে দুর্বল। ফলে সবাই সেই বাজারে প্রবেশের চেষ্টা করলে দাম পড়বে এবং টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে বলেও সেলিম রহমান মন্তব্য করেন।

তিনি বিদ্যমান প্রেক্ষাপটে বিষয়টি নিয়ে দ্রুত ও কার্যকর উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি প্রয়োজনীয় কূটনৈতিক যোগাযোগ ও আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধানের পথ খুঁজে বের করার অনুরোধ জানান। অন্যথায় এই সংকট বাংলাদেশের জন্য এটি বড় ধরনের বিপর্যয়ের কারণ হয়ে উঠতে পারে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

আমেরিকায় রপ্তানিকারকদের মধ্যে দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান প্যাসিফিক জিনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর গতকাল আজাদীকে বলেন, আমরা বেশ শঙ্কিত। আলাপ আলোচনার মাধ্যমে যদি ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক আরোপের বিষয়টির একটি সুন্দর সুরাহা করা না যায়, তাহলে আমাদেরকে অনেক চড়া মূল্য দিতে হবে। তিনি ৫০ শতাংশ বেশি শুল্ক আরোপ হলে এই সেক্টরে বিপর্যয় নেমে আসবে বলেও মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, আমাদের প্রতিযোগীরা আমাদের চেয়ে অনেক কম শুল্কে আমেরিকার বাজারে প্রবেশ করবে। যা এক অসম প্রতিযোগিতার সৃষ্টি করবে। ওই প্রতিযোগিতায় আমাদের টিকে থাকা কঠিন হবে। তিনি বিষয়টি নিয়ে দ্রুত এবং কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, দেশের অর্থনীতির একটি বড় অংশ দাঁড়িয়ে আছে গার্মেন্টস সেক্টরের উপর। এই সেক্টরে সংকট আসলে অর্থনীতি নিরাপদ থাকবে না। তাই দেশের অর্থনীতির স্বার্থেই বিষয়টি নিয়ে সর্বাত্মক উদ্যোগ নিতে হবে।

উল্লেখ্য, দীর্ঘ তিন মাস আলোচনার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশসহ ১৪টি দেশের আমদানি পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন। এই সিদ্ধান্ত জানিয়ে গত সোমবার এসব দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের উদ্দেশে চিঠিও পাঠান তিনি। চিঠিগুলো প্রকাশ করা হয়েছে তার নিজস্ব সামাজিক মাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যালে’।

পূর্ববর্তী নিবন্ধইউনূসকে লেখা ট্রাম্পের চিঠিতে যা আছে
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রাম কাস্টমসে সার্ভার সমস্যার স্থায়ী সমাধান কবে