নিরাপদ নিরিবিলি ও সম্ভাবনাময় সৈকত

বাঁশখালীর ৩৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত

কল্যাণ বড়ুয়া, বাঁশখালী  | শনিবার , ৫ জুলাই, ২০২৫ at ৬:২১ পূর্বাহ্ণ

বাঁশখালীর উপকূলীয় ৩৭ কিলোমিটার সমুদ্র সৈকতকে ঘিরে পর্যটনের নানা সম্ভাবনা বিরাজ করলেও তা (পর্যটন স্পট) বাস্তবায়ন না হওয়াতে বার বার হতাশ হচ্ছেন বাঁশখালীসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের জনগণ। অপরদিকে বিগত সরকারের আমলে কর্ণফুলী টানেল হওয়ার পর চট্টগ্রামের আনোয়ারাবাঁশখালী হয়ে চকরিয়াপেকুয়া থেকে সমুদ্রনগরী কঙবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। তবে তা নিয়ে অনেক সভাসেমিনার হওয়ার পরও কোন ধরনের কার্যক্রম চলমান না থাকায় জনগণের মনে ক্ষোভ বিরাজ করছে। অন্যদিকে বাঁশখালীর উপকূলজুড়ে স্বপ্নের বেড়িবাঁধে নানা স্থানে ভাঙন এবং বেশ কিছু বাঁধ না থাকায় অমাবস্যাপূর্ণিমায় জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্রবেশের ভয়ে দিন পার করছে উপকূলবাসী। অথচ বাঁশখালী সমুদ্র সৈকতকে ঘিরে রয়েছে পর্যটনের বিপুল সম্ভাবনা। সরকারি পৃষ্টপোষকতায় পাল্টে যেতে পারে এই এলাকার দৃশ্যপট। স্থানীয়দের মতে, উপকূলজুড়ে মেরিন ড্রাইভ ও বেড়িবাঁধ সংস্কার করে বিশাল এই সমুদ্র সৈকতকে পর্যটন স্পটে পরিণত করলে একদিকে কঙবাজারে পর্যটকের চাপ কমতো, অন্যদিকে বাঁশখালীসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের জনগণ একটি আধুনিক পর্যটন স্পটে সময় কাটানোর সুযোগ পেত।

বাঁশখালীর উপকূলীয় বেড়িবাঁধে কিছুদিন পর পর সংস্কার কার্যক্রম পরিচালিত হলেও জোয়ারের তোড়ে সে সব উন্নয়ন কার্যক্রম হারিয়ে যায় বলে মন্তব্য করেছেন খানখানাবাদ এলাকার আবুল কালাম। তিনি বলেন, ‘এসব কাজে কোটি কোটি টাকা খরচ না করে স্থায়ী বাঁধ কিংবা মেরিন ড্রাইভ করা হলে উপকৃত হতো উপকূলীয় জনগণ।’ বাঁশখালীর দীর্ঘ সমুদ্র সৈকতকে আধুনিক রূপ দিতে ‘বাঁশখালী সমিতি কঙবাজারের’ পক্ষ থেকে উপকূলীয় এলাকায় বিগত দিনে ছাতা ও চেয়ার দেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে সৈকত এলাকায় প্রতিদিন শতশত লোকের সমাগম ঘটে। যেকোন বন্ধের দিনে হাজার হাজার লোকের সমাগম হলেও সুনির্দিষ্ট কোন ধরনের পরিকল্পনা কিংবা সরকারিভাবে মনিটরিং না থাকায় নানাভাবে ভোগান্তি পোহাতে হয় বলে জানান মো. ওসমান গণি নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা। তিনি বলেন, সৈকত এলাকায় যত্রছত্র মোটরসাইকেল চালানো এবং ফুটবল খেলতে থাকায় বেড়াতে আসা লোকজনের নানাভাবে ভোগান্তি হয়। অথচ বিগত দিনে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সভায় বাঁশখালীর উপকূলীয় সমুদ্র সৈকত এলাকায় পুলিশি নিরাপত্তাসহ পর্যটকদের সুবিধায় নানা নির্দেশনা লেখা থাকলেও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি বলে অভিমত স্থানীয়দের।

বাঁশখালী পানি উন্নয়ন উপবিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী অনুপম পাল বাঁশখালীর উপকূলীয় বেড়িবাঁধ সংস্কার প্রসঙ্গে বলেন, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ বাজেট (রিপেয়ার ও মেইটেনেইজ)-এর আওতায় বাঁশখালীর উপকূলীয় গন্ডামারায় ১৫৫১ মিটার, ছনুয়াতে ৩৫০ মিটার, শেখেরখীলে ১৭৫ মিটার, চাম্বলে ২০০ মিটার ও খানখানাবাদে ৮৩০ মিটার কাজ চলমান রয়েছে। অপরদিকে টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্প (১ম পর্যায়)-এর আওতায় আগামী জুলাই থেকে শুরু হওয়া প্রকল্পে বাঁধ পুনরাকৃর্তিকরণ ও ঢাল সংরক্ষণ কাজ করা হবে ৬.৪১০ মিটার। তার মধ্যে খানখানাবাদে ২ হাজার ৬১০ মিটার, বাহারছড়া এলাকায় ১ হাজার মিটার, ছনুয়াতে ২ হাজার ৮০০ মিটার, আর সাধনপুরে নদীর তীর সংরক্ষণে ১ হাজার ১০০ মিটার কাজ করা হবে। ইতোমধ্যে এই কাজের জন্য প্রথম ধাপে (মোবিলাইজেশন) চলমান রয়েছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে। এছাড়া চলতি জুলাই মাস থেকে ছনুয়াতে ২ হাজার ৮০০ মিটার কাজ শুরু করবে বলে তিনি জানান।

কঙবাজার, পতেঙ্গা কিংবা কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত ছাড়াও বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি স্বল্প পরিচিত সমুদ্র সৈকতও রয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম হলো চট্টগ্রাম জেলা শহর হতে ৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই বাঁশখালী সমুদ্র সৈকত। বালুময় বেলাভূমি ও ঝাউবন ঘেরা বাঁশখালী সমুদ্র সৈকত কঙবাজারের পর দেশের অন্যতম বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত। এটি ছনুয়া, গন্ডামারা, বাহারছড়া, সরল, খানখানাবাদ ও কাথরিয়া উপকূল মিলিয়ে সর্বমোট ৩৭ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত রয়েছে। সৈকতের ঝাউবন আর সূর্যাস্তের দৃশ্য যে কারো মন কাড়ে। নির্জনতা পছন্দকারীদের জন্য এটি আদর্শ স্থান। দিগন্ত বিস্তৃত সাগরের বুকে সূর্যাস্তের দৃশ্য, লাল কাঁকড়ার অবাধ বিচরণ বা দলবেঁধে বিচ ফুটবলে মেতে উঠার আনন্দ ভ্রমণকারীদের দেয় এক অপার্থিব পূর্ণতা ও আনন্দ।

বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, উপকূলীয় সমুদ্র সৈকত সত্যিই একটি সুন্দর এলাকা। এখানে বেড়াতে এসে কেউ যাতে নিরাপত্তার অভাবে না ভোগে তার জন্য আমার বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক নজরদারিসহ আমি খোঁজখবর রাখি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জামশেদুল আলম বলেন, বাঁশখালী উপকূলীয় সমুদ্র সৈকত একটি মনোরম এলাকা। নিরাপদ, নিরিবিলি এ সৈকতে যে কারো পছন্দ ও ভালো লাগবে। এটাকে পূর্ণাঙ্গ পর্যটন স্পটে রূপ দিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে সার্বিক যোগাযোগ স্থাপন এবং এটার বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসুষ্ঠু নির্বাচনের আগে প্রয়োজন রাজনৈতিক সংস্কার : জামায়াত আমির
পরবর্তী নিবন্ধলোহাগাড়ায় চোলাইমদসহ দুই মাদক কারবারি গ্রেপ্তার