রাঙ্গুনিয়ার বিভিন্ন পাহাড়ে বাণিজ্যিকভাবে আদা চাষ হয়। উৎপাদিত আদা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে চলে যায় ঢাকা–চট্টগ্রামসহ দেশের বড় বড় পাইকারী বাজারে। এর বাইরেও রাঙ্গুনিয়ায় জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে বস্তায় আদা চাষ। বাড়ির ছায়াযুক্ত আঙিনা, ছাদ কিংবা পরিত্যক্ত স্থানে এই পদ্ধতিতে আদা চাষ করে সফল হচ্ছেন স্থানীয়রা। অনাবাদী ছায়াযুক্ত উঁচু জমিও এখন বস্তায় আদা চাষের মাধ্যমে আবাদের আওতায় আসছে। এক্ষেত্রে কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তর প্রণোদনা ও উদ্বুদ্ধকরণের কাজ করছে। পাশাপাশি এই পদ্ধতিতে আদা চাষে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে বিভিন্ন এনজিও সংস্থা। রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সরফভাটা ইউনিয়নের হাজারীখীল গ্রামের কৃষক মো. হেলাল উদ্দিন। গত বছর এক হাজার বস্তায় প্রথমবারের মতো আদা চাষ করেন। এতে তার ৭৫ হাজার টাকা খরচ হলেও উৎপাদন তিন হাজার কেজি ছাড়িয়ে যায়। এবার তার আশেপাশের আরও অনেকে এই পদ্ধতিতে আদা চাষ করেছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, রাঙ্গুনিয়ায় ব্যতিক্রমী বস্তায় আদা চাষ জনপ্রিয় হয়ে ওঠছে। অনেক কৃষক নিজ উদ্যোগে কৃষি অফিসের সহায়তা নিচ্ছেন। এবার বস্তায় আদা চাষের জন্য ২২৫ জন কৃষককে প্রদর্শনী দেয়া হয়েছে। ‘অনাবাদি ও পতিত জমি এবং বসতবাড়ির আঙিনায় পারিবারিক পুষ্টি বাগান’ প্রকল্পের সাহায্যে ২৫ জনের প্রতিজনকে ৩০টা করে বস্তা, বীজ আদা আর সার দেয়া হয়েছে। এছাড়া ‘ক্লাইমেট স্মার্ট এগ্রিকালচার এন্ড ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট প্রকল্প (ডিএই অংশ)’ এর সাহায্যে ২০০ জন কৃষককে ১০টি করে বস্তা, বীজ আদা আর সার দেয়া হয়েছে। সবমিলিয়ে এখন পর্যন্ত ২৭৫০টি বস্তা আদা চাষের জন্য বীজ–সারসহ দেয়া হয়েছে। এছাড়া কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে আরও ৪৫০০টি বস্তায় আদা চাষ করানো হয়েছে।
সরেজমিনে উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন বাড়ির আঙিনা ও ছাদে বস্তায় আদা চাষ করা হয়েছে। তাদের একজন শিখা দাশ গুপ্ত। তিনি তার বাড়ির ছাদে ৩০টি বস্তায় আদা চাষ করেছেন। এতে তার বেশ ভালো ফলন আসবে বলে প্রত্যাশা করেন।
পদুয়া নারিশ্চা গ্রামের কৃষক আব্দুল নবী বলেন, আমার কিছু জমি উঁচু হওয়ায় এক মৌসুমে আবাদ হতো। সেখানে আমি বস্তায় আদা চাষ করেছি। আশাকরি বেশ ভালো ফলন হবে।
জানা যায়, স্বল্প খরচে অধিক লাভজনক হওয়ায় গ্রামীণ কৃষিতে আগ্রহ বাড়ছে আদা চাষে। বাড়ির আঙিনা, ছাদ, অনাবাদি ও পতিত জমিসহ বিভিন্ন জায়গায় বস্তায় কিংবা টবে মাটি ভরে আদা চাষ করা যায়। মসলা ও ভেষজ ওষুধ হিসেবে আদা ব্যবহার হওয়ায় এর দামও বেশ চড়া। তাই পরিবারের প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে বাড়তি লাভের উদ্দেশ্যে আদা চাষ পদ্ধতি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস বলেন, বস্তায় আদা চাষ করলে অনেক সুবিধা। মাটিতে আদা চাষ করলে অনেকসময় কন্দপঁচা রোগে আক্রান্ত হয়। এতে একটিতে হলে পুরো জমি নষ্ট হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে বস্তায় করলে কোন কারণে একটি হলে শুধুমাত্র সেটি সরিয়ে নিলেই বাকি আবাদ ভালো থাকে। বস্তায় আদা চাষে কীটনাশক এবং পানি লাগে অনেক কম। ফলে যে কোনো স্থানে এভাবে আদা চাষ করা সম্ভব। পাশাপাশি কেউ চাইলে বাসার ছাদে, ব্যালকনি এবং বাড়ির সামনে পরিত্যক্ত স্থানেও চাষ করতে পারে। বাণিজ্যিকভাবে যদি কেউ আদা চাষ নাও করতে চায়, স্বল্প পরিসরে এ চাষের মাধ্যমে নিজেদের আদার চাহিদা মেটানো সম্ভব।