ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক ও অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ ছিলেন সমাজের আলোকবর্তিকা

শিশুমেলায় বক্তারা

আজাদী ডেস্ক | শনিবার , ৫ জুলাই, ২০২৫ at ৪:৪১ পূর্বাহ্ণ

ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক এবং অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ ছিলেন সমাজের আলোকবর্তিকা। এই দুই মহান ব্যক্তিত্ব তাঁদের বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনে মহৎ কাজের মাধ্যমে সমাজকে আলোকিত করেছেন। দৈনিক আজাদীর প্রতিষ্ঠাতা ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক ছিলেন প্রগতিশীল ও অগ্রচিন্তার এক উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব। ভারতের শিবপুর থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি নিয়ে এই অঞ্চলে বিদ্যুতের আলো যেমন ছড়িয়ে দিয়েছেন ঠিক তেমনি ছাপাখানা, প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ও সংবাদপত্র প্রকাশ করে আলোকিত মানুষ সৃষ্টিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। অপরদিকে অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ ছিলেন শিক্ষা, সংস্কৃতি, রাজনীতি ও সাংবাদিকতার এক আদর্শবান ব্যক্তিত্ব। তিনি আলো জ্বালিয়েছেন অধ্যাপনা, সাংবাদিকতা ও রাজনীতির ভুবনে। সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে এই দুই মনীষী আমাদের অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব।

ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আবদুল খালেক ও অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে দিনব্যাপী শিশুমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথিবৃন্দ এসব কথা বলেন। সকাল ১০ টায় শিশু সমাবেশ, আবৃত্তি ও চিত্রাংকন প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন দৈনিক আজাদী সম্পাদক একুশে পদকপ্রাপ্ত মিডিয়া ব্যক্তিত্ব এম এ মালেক। প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজির উপাচার্য ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় লেখক পরিষদের সভাপতি ড. ওবায়দুল করিম, সভাপতিত্ব করেন দৈনিক আজাদীর পরিচালনা সম্পাদক ওয়াহিদ মালেক। স্বাগত বক্তব্য দেন, সাপ্তাহিক স্লোগান সম্পাদক মোহাম্মদ জহির। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাচিকশিল্পী আয়েশা হক শিমু। বক্তব্য দেন, মোহাম্মদ মুনির ও মোহাম্মদ জোবায়ের।

সভায় প্রধান অতিথি ড. ওবায়দুল করিম বলেন, শিশুরা কখনো কোনো আদর্শ বা বিভাজন দিয়ে কিছু শেখেনা। তারা যা দেখে তাই শেখে। শিশুদের যখন ছবি আঁকতে বলা হয় তখন তারা প্রকৃতি দেখে ছবি আঁকে। শিশু যে ছবিটা আঁকে তা তার যে জগৎ দেখে সেটি আঁকে। তিনি আরো বলেন, তরুণদের বিকশিত করার জন্য আজকের এ আয়োজন সত্যি অনন্য সাধারণ। শিশুদের মনের মত যে সুন্দর প্রকৃতি হৃদয়ে ধারণ করে তার মত করেই আমাদের সমাজকে সুন্দর করে গড়ে তুলতে পারাটাই আমাদের সার্থকতা।

অনুষ্ঠানের উদ্বোধক দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক বলেন, আজকের শিশুরাই আগামীর কর্ণধার। আর কর্মই আগামীদিনের সফলতা। তাই শিশুদেরকে মানসিকভাবে উন্নত মননশীলতার অধিকারী করে তুলতে অভিভাবকদের ঐকান্তিক ভূমিকা রাখতে হবে। তিনি বলেন, আমার একুশ পদক প্রাপ্তির জন্য আমার মরহুম পিতা দৈনিক আজাদীর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক এবং পুরো আজাদী পরিবারের অবদান রয়েছে। তিনি বলেন, পুরষ্কার বড় নয় নিষ্ঠার সাথে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এপিজে আবুল কালামের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে যে স্বপ্ন দেখা হয় সে স্বপ্ন মূলত স্বপ্ন নয়। বরং সে স্বপ্ন আমাদের ঘুমাতে দেয়না সেটাই আসল স্বপ্ন। তিনি বলেন, শিশুদের প্রকৃতির মত বিশাল মন মানসিকতায় গড়ে তোলার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। শিশুদের সৃষ্টিশীল ও সৃজনশীল কাজের সাথে পরিচয় করার দায়িত্ব পরিবারকেই নিতে হবে। এক্ষেত্রে পিতা মাতাই সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষক। তাই শিশুদেরকে সুমানুষ হিসেবে গড়ার জন্য পিতা মাতাকেই মহান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করতে হবে। শিশুদের মনোজগতের সাথে সত্য, সুন্দর, দেশপ্রেম ও সুশিক্ষার পরিচয় দিতে হবে। আজকে যে শিশুমেলার আয়োজন করা হয়েছে তা নিঃসন্দেহে শিশুদেরকে নতুন নতুন স্বপ্ন ও কর্মের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে আগামীর অগ্রযাত্রা বেগবান করবে।

সভাপতির বক্তব্যে দৈনিক আজাদীর পরিচালনা সম্পাদক ওয়াহিদ মালেক বলেন, আমি আজাদী পরিবারে জন্ম নিয়ে নিজেকে গর্ববোধ করি। তিনি বলেন, আমাদেরকে লোভ লারসার ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করতে হবে। শিশুদেরকে এমনভাবে গড়ে তুলে যাতে তারা আমাদেরকে দেখে ভালো কিছু শিখতে পারে। তিনি আরো বলেন, একটা শিশু প্রকৃত শিক্ষা অর্জন করে পিতা মাতা পরিবারের সদস্য ও শিক্ষকদের কাছ থেকে। আমিও আমার পরিবারের সদস্যদের থেকেই জীবনের অনেক কিছু শিখেছি। এখনো শিখে যাচ্ছি। শিশুদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আমাদেরকে সুন্দর করে চলতে হবে। ক্ষমতার অপব্যবহার না করে আমাদের মানবিক সমাজ বিনির্মাণে কাজ করতে হবে যাতে করে সবসময় মানুষের পাশে ও নিজের পরিবারকে পাশে থাকা যায়।

অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদের সন্তান স্লোগান সম্পাদক মোহাম্মদ জহির বলেন, আমাদের সমাজে গুণী মানুষের সম্মান কমে যাচ্ছে। দুই মনীষীদের জীবন কর্ম আগামী প্রজন্মকে জানার জন্য আজকের এই আয়োজন। আমার নানা ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক ও বাবা অধ্যাপক খালেদকে নিয়ে আমরা গর্ব করি। তাদের অবদান যুগ যুগ আমাদের প্রেরণা দিবে।

সমাজব্রতী লায়ন বিজয় শেখর দাশ বলেন, দৈনিক আজাদী শুধু একটি পত্রিকা নয়। এটি একটি শিল্প, সংস্কৃতি, সাহিত্য, মানবিকতা, আদর্শ, দেশপ্রেম ও সৃষ্টিশীল একটি বৃহৎ কর্মযজ্ঞ প্রতিষ্ঠান। আজাদীর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক ও সম্পাদক অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ তাদের কর্মের মাধ্যমে যে আদর্শ রেখে গেছেন তা আমাদের জন্য অনুকরণীয়।

বিকেল ৪টায় দুই পর্বের পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক এলিজাবেথ আরিফা মুবাশশিরা ও অধ্যাপক মৃণালিনী চক্রবর্তী। বাচিকশিল্পী আয়েশা হক শিমু ও কবি লিপি বড়ুয়ার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন, অধ্যক্ষ তরুণ কান্তি বড়ুয়া, শিশুসাহিত্যিক অরুণ শীল, প্রাবন্ধিক নেছার আহমদ, প্রাবন্ধিক রেজাউল করিম স্বপন, অধ্যক্ষ সৈয়দ মুহাম্মদ আবু ছালেহ, জসীম উদ্দিন খান, গৌতম কানুনগো, বাসুদেব খাস্তগীর, নিজামুল ইসলাম সরফী, গোফরান উদ্দীন টিটু, আতিয়া শিরিন, নাসরিনএ জান্নাত।

গল্পকার বিপুল বড়ুয়ার সভাপতিত্বে ও কবিশিশুসাহিত্যিক রাশেদ রউফের সঞ্চালনায় ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক ও অধ্যাপক খালেদকে নিয়ে স্বরচিত লেখাপাঠে অংশ নেন, শিউলি নাথ, কাঞ্চনা চক্রবর্তী, সৈয়দ করিমুন্নেসা, সৈয়দ সেলিমা আকতার, কাসেম আলী রানা, লিটন কুমার চৌধুরী, সোমা মুৎসুদ্দি, হৈমন্তি তালুকদার, সুচিত্রা বৈদ্য, শর্মি বড়ুয়া, সুপর্ণা লিপি বড়ুয়া, তটিনি বড়ুয়া, লিপি তালুকদার, কুতুবউদ্দিন বখতিয়ার, আলমগীর হোসাইন, ডা. কল্যাণ বড়ুয়া, মাহবুবা চৌধুরী, সুমি দাশ, মারজিয়া খানম সিদ্দিকা, শিরিণ আফরোজ, কানিজ ফাতেমা, আখতারুল ইসলাম, প্রদ্যোত কুমার বড়ুয়া, সরোয়ার আরমান, ইসমাইল জসীম, সৌভিক চৌধুরী, সিমলা চৌধুরী, বিচিত্রা সেন, পিংকু দাশ, আকাশ আহমেদ, মর্জিনা আখতার, সালাম সৌরভ, সাইফুল্লাহ কায়সার, মলিনা মজুমদার, সৌরভ সাখাওয়াত, অপু চৌধুরী, নিগার সুলতানা, তারিফা হায়দার, সনজিত দে, শওকত আলী সুজন, বনানী শেখর, ইঞ্জিনিয়ার ফসিউল আলম, মুকুল চৌধুরী, শরণাঙ্কর বড়ুয়া, এস এম মোখলেছুর রহমান, ফারহানা ইসলাম রুহি, সেয়দ জিয়া উদ্দিন, অমিত বড়ুয়া, প্রিয়ংকা সরকার, অধ্যাপক সনজীব বড়ুয়া, রেহেনা আকতার, নাসের রহমান, ইফতেখার মারুফ, শিপ্রা দাশ, তানজিনা রাহী, হাসিবুল আলম প্রমুখ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাউজানে কিশোর দলের মারামারি থামাতে গিয়ে যুবদল নেতার মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধমাল্টি ডেস্টিনেশন এডুকেশন এক্সপো কাল