শুধুমাত্র পাহাড় কাটার নিয়ম কানুন অনুসরণ না করায় চট্টগ্রামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সড়ক হিসেবে বিবেচিত ফৌজদারহাট–বায়েজিদ লিংক রোড ‘আতংকের রাস্তা’ হয়ে উঠছে। পাহাড় ধস ঠেকানোর দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় সড়কটি ব্যবহারে অনেকেই অনীহা প্রকাশ করছে। ইতোমধ্যে কয়েকদফা পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। রাস্তাটির বেশ কিছু অংশে একপাশের দুই লেন প্রায় এক মাস ধরে বন্ধ করে রাখা হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই রাস্তাটিতে ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটছে। প্রায় সাড়ে তিনশ’ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৬ টি পাহাড় খাড়াভাবে কেটে তৈরি করা বহুল প্রত্যাশার সড়কটি সচল রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রাম মহানগরীর যান চলাচলে গতিশীলতা আনা, ঢাকাসহ দেশের বিস্তৃত এলাকা থেকে কক্সবাজার, টেকনাফ, কিংবা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবানগামী গাড়ি শহরে প্রবেশ না করে চলে যাওয়া, চট্টগ্রাম থেকে উত্তরমুখী যোগাযোগ সহজ করার পাশাপাশি শহরের ভিতরে যানবাহনের চাপ কমানোর লক্ষ্য নিয়ে গ্রহণ করা হয় ফৌজদারহাট–বায়েজিদ লিংক রোড।
ফৌজদারহাট থেকে বায়েজিদ পর্যন্ত বহুল প্রত্যাশার সড়কটির নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল ১৯৯৭ সালে। ওই সময় ৩৩ কোটি ৮১ লাখ টাকা ব্যয়ে গৃহীত প্রকল্পটি ১৯৯৯ সালে একনেক পাশ হয়েছিল। ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ এবং চার লেনের রাস্তাটি নির্মাণের জন্য ২০০৪ সালে ৫৫ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। কাজও শুরু হয়েছিল। কিন্তু নানা জটিলতায় কাজটি শেষ করা যায়নি। পরবর্তীতে প্রায় সাড়ে তিনশ’ কোটি টাকা ব্যয়ে চার লেনের ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তাটি নির্মাণ করা হয়। রাস্তাটি নির্মাণ করতে একেবারে খাড়া করে কাটা হয় ১৬টি পাহাড়। এই পাহাড় কাটা নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর সিডিএকে জরিমানা করে। পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেছেন, সড়কটি নির্মাণে পাহাড় কাটার ক্ষেত্রে বিজ্ঞানসম্মত কোনো নিয়ম অনুসরণ করা হয়নি। যেভাবে মন চেয়েছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ওভাবেই পাহাড়গুলো কেটে ফেলেছে। অত্যন্ত খাড়াভাবে পাহাড় কাটার ফলে বৃষ্টি হলেই পুরো রাস্তাটি চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। একের পর এক পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। বালির পাহাড়গুলো বৃষ্টির পানিতে রাস্তার উপর পড়ে।
রাস্তাটিতে যান চলাচল আগের চেয়ে কমে গেছে। অনেকেই ঝুঁকির কারণে রাস্তাটিতে যেতে চান না। চলতি মৌসুমের প্রথম বৃষ্টিতে রাস্তাটির উপর কয়েকটি পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। এতে গত প্রায় এক মাস ধরে রাস্তাটির বেশ বড় একটি অংশের একপাশের দুইটি লেইন বন্ধ করে রাখা হয়েছে। অপর পাশের একটি লেন দিয়ে উভয়মুখী গাড়ি চলাচল করছে। এতে কেবল পাহাড় ধসের ঝুঁকিই নয়, একই সাথে সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকিও তৈরি হয়েছে। ইতোমধ্যে এই সড়কে বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয় সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। পাহাড় ধসের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠা রাস্তাটির পাহাড়গুলোকে দ্রুততম সময়ে রক্ষা করা না হলে আরো বড় বিপর্যয়ের শংকা প্রকাশ করে সূত্র বলেছে, পাহাড়গুলো ক্রমান্বয়ে ভাঙ্গতে থাকবে। এভাবে ভাঙ্গতে থাকলে পাহাড়গুলোর অস্তিত্ব বিপন্ন হওয়ার পাশাপাশি রাস্তাটির ভবিষ্যও সংকটে পড়বে। তারা বলেন, বৃষ্টি হলেই বালির পাহাড় ধসে রাস্তা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এভাবে ক্রমাগত রাস্তা বন্ধ রাখতে হলে রাস্তাটি গুরুত্ব হারাবে।
সীতাকুণ্ডে প্রতিদিন আসা যাওয়া করে চাকরি করেন এমন একাধিক কর্মকর্তা ও চিকিৎসক জানিয়েছেন, জিইসি থেকে ফ্লাইওভার ধরে বায়েজিদে নেমে এই রাস্তা ধরে সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাটে পৌঁছে যেতে পারি মাত্র ১০ মিনিটে। ওখান থেকে ৩০ মিনিটে সীতাকুণ্ড। যা জাকির হোসেন রোড ধরে গেলে কোনদিনই সম্ভব হবে না। তাই রাস্তাটি আমাদের কাছে খুবই পছন্দের। কিন্তু এখন যেভাবে পাহাড় ধসে পড়ছে তাতে ভয়ে অনেকদিন আর ওই রাস্তায় যাই না।
সিডিএর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, রাস্তাটিকে নিরাপদ করতে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। পাহাড়গুলোকেও রক্ষা করা হবে। কিছু জায়গায় রিটেইনিং ওয়াল বাকি রয়েছে। ওগুলো নির্মাণ করা হবে। পাহাড় রক্ষার জন্যও ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিষয়টি নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের সাথে যোগাযোগ হয়েছে বলেও সিডিএর প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন।