চট্টগ্রামের গার্মেন্টস কারখানায় উৎপাদিত পণ্য সরাসরি ইউরোপে পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। শুরুতে ইয়ংওয়ান নিজেদের পণ্য পাঠানোর মাধ্যমে এই কার্যক্রম শুরু করলেও ক্রমান্বয়ে অন্যান্য বড় বড় গার্মেন্টস গ্রুপগুলো চট্টগ্রাম থেকে ইউরোপে পণ্য পাঠাতে পারবে। পণ্য পাঠানোর সুবিধার জন্য চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বেশ বড় পরিসরের কার্গো স্টেশন নির্মাণের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে ইতোপূর্বেকার ২৭০ টনের কার্গো স্টেশনটিও সচল হয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, ভারত ট্রানজিট সুবিধা বন্ধ করে দেয়ার পর বাংলাদেশের কার্গো ফ্লাইট চালুসহ অবকাঠামোগত সুবিধা বৃদ্ধির উপর গুরুত্বারোপ করা হয়। এরই অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বাড়ানো হচ্ছে কার্গো পাঠানোর সুযোগ সুবিধা। ইতোমধ্যে ২৭০ টনের কার্গো স্টেশন চালু করা হয়েছে। এখান থেকে প্রতিদিনই গড়ে আড়াইশ’ থেকে তিনশ’ টনের মতো কার্গো মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাঠানো হচ্ছে। চট্টগ্রাম থেকে কার্গো ফ্লাইট না থাকায় যাত্রীবাহী বিমানের প্রতিটিতে ১৫ থেকে ২০ টন করে কার্গো রপ্তানি হচ্ছে।
এরই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রাম–চীন রুটে কার্গো ফ্লাইট চালুর ব্যাপারে জোর আলোচনা চলছে। চীনের চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইন্সের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। চায়না ইস্টার্ন চট্টগ্রাম থেকে কার্গো ফ্লাইট পরিচালনার ব্যাপারে বেশ ইতিবাচক বলে সূত্র জানিয়েছে।
বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে যাতে কোন সমস্যা না হয় সে জন্য সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকেও ব্যাপক পরিকল্পনা এবং দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে চট্টগ্রামের ইয়ংওয়ান গ্রুপ বেশ এগিয়ে এসেছে বলে উল্লেখ করে সূত্র জানিয়েছে, তৈরি পোশাকখাতের দেশের অন্যতম শীর্ষ গ্রুপ ইয়ংওয়ান দীর্ঘদিন ধরে যেসব পণ্য কার্গো ফ্লাইটে পাঠানো দরকার সেগুলো ঢাকা থেকে পাঠাতো। এছাড়া মধ্য এশিয়ার উজবেকিস্তান তাজাখিস্তানসহ কয়েকটি দেশেও প্রেরণ করতো। ওখান থেকে সড়কপথে এসব পণ্য ইউরোপের বাজারে যেতো।
কিন্তু ইয়ংওয়ান তাদের পরিকল্পনায় নতুনত্ব আনতে যাচ্ছে। তারা চট্টগ্রামে উৎপাদিত তৈরি পোশাক ঢাকা বা অন্য কোন দেশের পরিবর্তে চট্টগ্রাম থেকেই আকাশ পথে ইউরোপে পাঠাতে চায়। এজন্য চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকেই কার্গো ফ্লাইট পরিচালনা করবে ইয়ংওয়ান। এখান থেকে সরাসরি পণ্য যাবে ইউরোপে, কাঁচামাল আসবে সরাসরি চট্টগ্রামে।
বিষয়টি নিয়ে ইয়ংওয়ান গ্রুপের চেয়ারম্যানের সাথে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের সাথে সিরিজ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব বৈঠকে কার্গো রপ্তানি সংশ্লিষ্ট সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে যাতে পর্যাপ্ত পরিমানে কার্গো ফ্লাইট পরিচালনা করা যায় সে জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে তোলার উপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
এরই অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অত্যাধুনিক কার্গো স্টেশন গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বর্তমান কার্গো স্টেশনে আমদানি রপ্তানি পণ্য কাছাকাছিতে রাখা হয়। নয়া প্রস্তাবনায় আমদানি এবং রপ্তানি পণ্যকে বেশ দূরত্বের সাথে যাতে আলাদা রাখা যায় সে জন্য বড়সড় শেড নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া কার্গো স্টেশনের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও বিশ্বমানের তৈরি করা হবে। এজন্য ইতোমধ্যে সাইট নির্ধারণ, ব্যয় নির্ধারণসহ প্রাথমিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে ঠিকাদার নিয়োগের টেন্ডার আহ্বান করা হতে পারে বলেও সূত্র জানিয়েছে।
বিদ্যমান সুবিধার সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত এবং চীন এবং ইউরোপে সরাসরি কার্গো ফ্লাইট চালুসহ নতুন রপ্তানি রুটের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে উল্লেখ করে সূত্র জানিয়েছে, দেশের রপ্তানিপণ্য পরিবহনের সক্ষমতা বাড়াতে সরকার এ উদ্যোগ নিয়েছে।
ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিলের পর সরকার নিজেদের সক্ষমতা বাড়ানোর উপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে বলে মন্তব্য করে সূত্র বলেছে, ভারতীয় উদ্যোগ বাংলাদেশের নিজস্ব এয়ার ফ্রেইট সক্ষমতা গড়ে তোলার একটি সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে।
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল গতকাল দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমাদের বর্তমানে ২৫০ টন আমদানি এবং ২০ টন রপ্তানি পণ্যের কার্গো স্টেশন রয়েছে। এই সক্ষমতা এখন আরো কয়েক গুণ বৃদ্ধি করার প্রক্রিয়া চলছে। তিনি বলেন, ইয়ংওয়ান চট্টগ্রাম থেকে ইউরোপে কার্গো ফ্লাইট চালুর যে প্রক্রিয়া শুরু করেছে তা কার্যকর করতে আমাদেরকে সক্ষমতা বাড়াতে হবে।