৫ রানে ৭ উইকেটের পতন, বড় হারে সিরিজ শুরু বাংলাদেশের

ক্রীড়া প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার , ৩ জুলাই, ২০২৫ at ৪:৪০ পূর্বাহ্ণ

শ্রীলঙ্কার কাছে টেস্ট সিরিজ হারের হতাশা আরো দীর্ঘ হলো টাইগারদের। ওয়ানডে সিরিজও তাদের শুরু হয়েছে বড় হার দিয়ে। গতকাল বুধবার কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশকে ৭৭ রানে হারিয়েছে শ্রীলঙ্কা। ফলে তিন ম্যাচের এ সিরিজে স্বাগতিকরা ১০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল। টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নামে শ্রীলঙ্কা। ৪৯ ওভার ২ বল খেলে ২৪৪ রানে অলআউট হয়ে যায় তারা। এরপর জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশ ৩৫ ওভার ৫ বল খেলে ১৬৭ রানে গুটিয়ে যায়।

প্রথমে ব্যাট করতে নামা শ্রীলঙ্কাকে শুরু থেকেই চাপে রাখে বাংলাদেশের দুই পেসার তাসকিন এবং তানজিম। টেস্টে ব্যাট হাতে দুটি দুর্দান্ত সেঞ্চুরি করা ওপেনার পাথুম নিশাঙ্কাকে এবার রানের খাতা খুলতে দেননি তানজিম সাকিব। ইনিংসের চতুর্থ ওভারের প্রথম বলে নিশাঙ্কাকে উইকেটরক্ষক লিটন দাসের ক্যাচ বানান সাকিব। ৮ বল খেললেও রানের খাতা খুলতে পারেননি নিশাঙ্কা। পরের ওভারে আরেক ওপেনার নিশান মাদুশকাকে বোল্ড করেন তাসকিন আহমেদ। ১৩ বলে ৬ রান করে সাজঘরে ফেরেন তিনি। ১১ রানে ২ ওপেনারকে হারায় লঙ্কানরা।

তাসকিন নিজের পরের ওভারে এসে কামিন্দু মেন্ডিসকেও ফেরান। ইনিংসের সপ্তম ওভারের প্রথম বলে তাসকিনকে মিডঅফে মাথার ওপর দিয়ে মারতে চেয়েছিলেন কামিন্দু। কিন্তু বল সেভাবে ভাসেনি। মেহেদী হাসান মিরাজ সহজেই লুফে নেন ক্যাচ। ২৯ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে শ্রীলঙ্কা। এরপর হাল ধরেন চারিথ আসালাঙ্কা আর কুশল মেন্ডিস। লঙ্কানদের অনেকটা পথ এগিয়ে দেন তারা। গড়েন ৭৭ বলে ৬০ রানের জুটি। এ জুটি ভাঙেন অভিষিক্ত তানভীর ইসলাম। দ্বিতীয় ওভারেই এলবিডব্লিউ করেন কুশল মেন্ডিসকে। বেশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে খেলছিলেন তিনি। তবে ৪৩ বলে ৪৫ রানে থামতে হয়েছে তাকে।

জুটি গড়ে উঠছিল আবার। এবার জুটি গড়েন জানিথ লিয়ানাগে এবং আশালাঙ্কা। দুজনের ৭৬ বলে ৬৪ রানের জুটি ভাঙেন পার্ট টাইম বোলার নাজমুল হোসেন শান্ত। তাকে ডাউন দ্য উইকেটে এসে মারতে গিয়ে লংঅনে তানজিম হাসান সাকিবের সহজ ক্যাচ হন জানিথ লিয়ানাগে। ৪০ বলে তিনি করেন ২৯ রান। এরপর বলতে গেলে একাই দলকে টানছিলেন চারিথ আশালাঙ্কা। মিলান রথনায়েকেকে এবং ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা দুজনই ফিরেন ২ রান করে। মাহিশ থিকশানাকে ফিরিয়ে নিজের চতুর্থ উইকেট তুলে নেন তাসকিন। তবে চারিথ আসালাঙ্কাকে থামানো যায়নি। একেবারে ঠাণ্ডা মাথায় খেলে ১১৭ বলে সেঞ্চুরি তুলে নেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। এটি তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরি। ইনিংসের শেষ ওভারে তাকে ফেরান তানজিম সাকিব। ততক্ষণে ১২৩ বলে ১০৬ রানের ইনিংস খেলে দলকে ২৪৪ রানে পৌঁছে দিতে মুখ্য ভূমিকা রাখেন আসালাঙ্কা। ৬টি চার আর ২টি ছক্কা মেরেছেন আসালাঙ্কা। বাংলাদেশের তাসকিন আহমেদ ৪৭ রানে ৪টি এবং তানজিম সাকিব ৪৫ রানে নেন ৩টি উইকেট।

২৪৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুটা দারুণ করেছিল বাংলাদেশ। অভিষিক্ত পারভেজ হোসেন ইমনকে নিয়ে বেশ ভালোই করেছিলেন তানজিদ হাসান তামিম। ইমনের ব্যাটে ছিল আত্মবিশ্বাসের ছাপ। কিন্তু নিজের অভিষেক ইনিংসটাকে বড় করতে পারলেন না। দলকে ২৯ রানে রেখে ১৬ বলে ৩টি চারের সাহায্যে ১৩ রান করে ফিরলেন ইমন। এরপর নাজমুল হোসেন শান্তকে নিয়ে এগিয়ে যান তানজিদ। তুলে নেন নিজের চতুর্থ হাফ সেঞ্চুরি। ৫১ বলে ৮টি চার একটি ছক্কার সাহায্যে হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করেন তানজিদ। তানজিদকে বেশ ভালো সঙ্গ দিলেও নিজের ইনিংসটাকে বড় করতে পারেননি শান্ত। ২৬ বলে ২টি চারের সাহায্যে ২৩ রান করে রান আউট হয়ে ফিরেন তিনি। ভাঙে দুজনের ৭১ রানের জুটি। এ জুটি ভাঙতেই হুড়মুড় করে ভেঙে পড়তে থাকে বাংলাদেশের ব্যাটিং। ৩ রানে বাংলাদেশ হারায় তিন উইকেট।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে শেষ তিন ম্যাচে ৬ রান করেও দলে সুযোগ পেয়েছিলেন লিটন দাশ। কিন্তু সুযোগটাকে কাজে লাগাতে পারলেন না। হাসারাঙ্গার বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরেন লিটন রানের খাতা খোলার আগেই। একই ওভারে তানজিদ তামিমকেও ফেরান হাসারাঙ্গা। ৬১ বলে ৬২ রানে থামেন তানজিদ। পরের ওভারে ফিরেন তাওহিদ হৃদয়। কামিন্দু মেন্ডিসের বলে বোল্ড হন হৃদয়। পরের ওভারে হাসারাঙ্গার তৃতীয় শিকার হয়ে ফিরেন অধিনায়ক মিরাজ। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি টাইগার অধিনায়ক। অধিনায়কত্বের অভিষেকটা সুখকর হলো না মিরাজের। বল হাতে ৪৭ রান খরচায় পাননি কোন উইকেট। ব্যাট হাতেও পারলেন না রানের খাতা খুলতে। ৩ রানে ৪ উইকেট নেই বাংলাদেশের। ১০৩ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে একেবারেই খাদের কিনারায় বাংলাদেশ। পরের ওভারে ফিরলেন তানজিম সাকিব। কামিন্দু মেন্ডিসের দ্বিতীয় শিকার এই পেসার। ৪ রানে পড়ল ৫ উইকেট। দুই বল পর তাসকিনও ফিরলেন মেন্ডিসের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে। ৫ রানে পড়ল ৬ উইকেট।

শেষদিকে গিয়ে লড়তে থাকা জাকেরকে সঙ্গ দেন তানভির। কিন্তু ১৯ বলে ৫ রান করে তিনি মাহেশ থিকসানার বলে কিপার কুসল মেন্ডিসের ক্যাচ হয়ে বিদায় হন। ২৭ বলের মধ্যে ৫ রানে ৭ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ১ উইকেটে ১০০ রান থেকে ৮ উইকেটে ১০৫। লোয়ার অর্ডারদের নিয়ে ৪টি করে চার ও ছক্কায় ৬৪ বলে ৫১ রানের ইনিংস খেলে হারের ব্যবধান কিছুটা কমান জাকের আলি। তিনি হাসারাঙ্গার বলে এলবি হয়ে গেলে বাংলাদেশের ইনিংস গুটিয়ে যায় ১৬৭ রানে। লঙ্কানদের হয়ে ৪টি উইকেট নেন ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। ৩টি নেন কামিন্দু মেন্ডিস। সিরিজের পরের ম্যাচ আগামী শনিবার একই মাঠে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধগ্যাসের সাথে বায়ু মিশিয়ে সিলিন্ডার রিফিল
পরবর্তী নিবন্ধসাবেক এমপি নাইমুর রহমান দুর্জয় গ্রেপ্তার