চট্টগ্রাম জেলায় নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সংশোধনের উদ্দেশ্যে ছয় মাসব্যাপী পরিচালিত বিশেষ ক্রাশ প্রোগ্রামে ৪৫ হাজার ৬৯৭টি আবেদন নিষ্পত্তি করেছে জেলা নির্বাচন কার্যালয়। যা শতকরা হিসাবে প্রায় ৮৪ শতাংশ।
এছাড়া চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার অধীন নিষ্পত্তিকৃত ‘গ’ ক্যাটাগরিতে সংশোধন হয়েছে ২০ হাজার ৭৪৭টি। গতকাল সোমবার দুপুরে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ তথ্য জানিয়েছেন সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. বশির আহমেদ।
তিনি জানান, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত চট্টগ্রামে এনআইডি সংশোধনের জন্য মোট ৫৪ হাজার ৪০৯টি আবেদন জমা পড়ে। এর মধ্যে নিষ্পত্তি করা হয়েছে ৪৫ হাজার ৬৯৭টি আবেদন। যা শতকরা হিসাবে প্রায় ৮৪ শতাংশ। তিনি জানান, গত ২২ এপ্রিল থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত চলা এই ক্রাশ প্রোগ্রামের আওতায় এনআইডি সংশোধনের কাজ দ্রুতগতিতে সম্পন্ন করা হয়। এছাড়া গত ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ৬ মাসে এনআইডি সংশোধন হয়েছে ৪৫ হাজার ৬৯৭টি। আবেদনের শ্রেণি অনুযায়ী নিষ্পত্তির তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘খ’ ক্যাটাগরিতে নিষ্পত্তি হয়েছে ৩৬ হাজার ৪৫৯টি, ‘খ (১)’ ক্যাটাগরিতে ৪ হাজার ৯৫০টি, ‘গ’ ক্যাটাগরিতে সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার অধীনে নিষ্পত্তি হয়েছে ৪ হাজার ২৮৮টি আবেদন। এছাড়া আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার অধীন নিষ্পত্তিকৃত ‘গ’ ক্যাটাগরিতে সংশোধন হয়েছে ২০ হাজার ৭৪৭টি। বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ৬০ থেকে ৭০টি নতুন সংশোধনের আবেদন জমা পড়ছে বলে জানান তিনি। এনআইডি সংশোধনের কারণ সম্পর্কে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বশির আহমেদ বলেন, বর্তমানে পাসপোর্ট, চাকরি, ব্যাংকিংসহ বিভিন্ন সরকারি–বেসরকারি সেবায় এনআইডি বাধ্যতামূলক হওয়ায় কেউ কেউ বয়স কমিয়ে সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করেন। পরে সেই তথ্য আবার এনআইডিতে সংশোধনের চেষ্টা করেন, যা অযৌক্তিক। অনেকের বিভিন্ন কাগজপত্রে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য থাকায়–যখন যে সেবা দরকার, সে অনুযায়ী তথ্য পাল্টানোর প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এতে জটিলতা তৈরি হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, শুধু এনআইডি সংশোধন করলেই সমস্যার সমাধান হবে না। বরং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকেও জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী নিজেদের রেকর্ড সংশোধনের উদ্যোগ নিতে হবে। তা না হলে তথ্যভিত্তিক বিভ্রান্তি থেকেই যাবে।
মতবিনিময় সভায় আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন চৌধুরী বলেন, এনআইডি সংশোধন একটি সংবেদনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি মামলা বা জমি বিক্রির মতোই গুরুত্বপূর্ণ, তাই যথাযথ ডকুমেন্টস দাখিল ছাড়া সংশোধনের আবেদন করা যাবে না। তিনি জানান, অনেকেই সরাসরি না গিয়ে কম্পিউটার দোকানের মাধ্যমে আবেদন করেন। এতে প্রাসঙ্গিক কাগজপত্র ঠিকমতো দাখিল না হওয়ায় বহু আবেদন বাতিল বা অনিষ্পন্ন থেকে যাচ্ছে। এজন্য নাগরিকদের সরাসরি উপজেলা বা থানা নির্বাচন অফিসে গিয়ে আবেদন করার পরামর্শ দেন তিনি।
বেলায়েত হোসেন চৌধুরী আরও বলেন, অনলাইনে আবেদনকারীরা যেন নির্বাচন কমিশনের পোর্টাল থেকে সঠিক নির্দেশনা অনুযায়ী আবেদন করেন। প্রয়োজনে ১০৫ নম্বরে ফোন করে পরামর্শ নেওয়ারও আহ্বান জানান তিনি। তিনি আরও উল্লেখ করেন, ভিন্ন সেবা গ্রহণের সময় অনেকেই দলিলে ভিন্ন তথ্য দেন যেমন শিক্ষা সনদ, পাসপোর্ট, জন্মসনদ বা সন্তানের স্কুল সনদে নাম বা জন্মতারিখের অমিল থাকে। পরে তা এনআইডিতে সংশোধনের জন্য নতুন করে জটিলতা তৈরি করে। সভায় জানানো হয়, বর্তমানে চট্টগ্রামে প্রতিদিন গড়ে ৬০–৭০টি নতুন সংশোধনের আবেদন জমা পড়ছে। যৌক্তিক আবেদন দ্রুত নিষ্পত্তির মাধ্যমে নাগরিকসেবা নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।