এখন আকাশে কখনো মেঘ কখনো রোদ আবার কখনো অঝোর ধারায় ঝুমঝুমিয়ে নামে বৃষ্টি। আমাদের দেশ যখন ষড়ঋতুর দেশ তাহলে তো রোদ বৃষ্টি থাকবেই। আবহাওয়া যে কখন কোন রূপ ধারণ করে তা বোঝা মুশকিল। দেখা যায় অঘোষিতভাবে মাঝে মাঝে এমন বজ্রপাত আর বিদ্যুৎ চমকানি যেন বজ্রের সাথে বিদ্যুৎ ফ্রী। তবে সে বিদ্যুতের আলো কখনো কারও মঙ্গলের জন্য চমকায় না। যাই হোক। তারপরও বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে অনেক কিছু আগাম জানতে পারা বা জানা যায়।
বলতে গেলেই এখন ঘোর বর্ষাকাল শুরু। রিমঝিম বৃষ্টি ভালোবাসে না এমন মানুষ কমই আছে। আর তা যদি হয় সমুদ্র, পাহাড়, টিনের চাল তাহলে তো আর কথাই নেই! তার সাথে গরম গরম ভূনা খিচুড়ি, বেগুন ভাজি, তারপর ধোঁয়া ওঠা চা উফ্! বৃষ্টি বিলাসের নাটক, গান, কবিতা লেখালিখি তো চলতেই থাকে। চারদিক সবুজে ছেয়ে গেছে। দেখলে চোখ জুড়িয়ে হৃদয় ভরিয়ে যায়! লোভ সামলানো দায়। একেক ঋতুতে একেক রকম সৌন্দর্য লুকিয়ে থাকে, প্রকৃতিতে আমরা–নিজেদের হারিয়ে ফেলি। প্রতিটা ঋতুই কি অপার মহিমায় নিঃস্বার্থভাবে শুধু দিয়েই যায়। তাই বলে ইচ্ছামতো বন, পাহাড় অহেতুক নষ্ট বা ক্ষতি করবো তা তো হতে পারে না।
বরং প্রকৃতিকে টিকিয়ে রাখাই আমাদের বেঁচে থাকার তাগিদে বড্ড প্রয়োজন! যখন ভারী বর্ষণে বন্যার পরিস্থিতি হয় পাহাড় ধ্বংসে অনেকে জীবন হারায় আর কতো মানুষের প্রাণ হুমকির সম্মুখীন হয় বছর বছর।
যেহেতু বর্ষার মৌসুম, এই প্রবল বৃষ্টিতে প্রকৃতির প্রেমে পড়ে মানুষ খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায়। অথৈ জল স্নিগ্ধ সবুজের মায়ার টানে মনের খাঁচা আর বন্ধী হয়ে থাকতে চাই না। আমাদের বাংলাদেশে এই দু‘টো জায়গাই বেড়ানোর উপযুক্ত স্থান! পাহাড় এবং সমুদ্র। প্রায় শোনা যায় পতেঙ্গা সৈকত এবং কঙবাজার সমুদ্রের গ্রোতে ভেসে নিতে! ফয়েজলেক, মহামায়া, কাপ্তাই, রাঙ্গামাটি নৌকা চালাত–চড়তে কতো দুর্ঘটনার সম্মুখীন হতে হয় আবার আনন্দও আছে। যারা বৃষ্টি, ঝর্ণা, সমুদ্র উপভোগ করার জন্য বিভিন্ন জায়গায় ঘুড়তে যান। হইহুল্লোড় আর সীমাহীন আনন্দে বেশ মজার সাথে সময় কাটায়। বাচ্চা তো বাচ্চাই হইহুল্লোড় তো থাকবে সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এ আনন্দ কখনো কখনো বিপদ হয়ে দাঁড়ায়! কেন? কারণ তখন এই বাচ্চাগুলো কী করে বুঝে না। সাথে থাকে না কারও কোন পরিবার, যার ফলে অহরহ দুর্ঘটনা ঘটে। আসলে বিপদ তো বলে কইয়ে আসে না! তারপরও সমুদ্রে গেলে কতোটুকু নামলে অথবা পাহাড়ে উঠলে বিপদ এড়ানো যায় সেদিকে সর্তক থাকা সকলেরই উচিৎ!
এই তো কিছুদিন আগে চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট স্কুলের ছাত্র, এইবার এস এস সি পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর কয়েকজন বন্ধু মিলে সীতাকুণ্ড ঝর্ণা দেখতে যায়। বন্ধুরা বেশ মজাই করছিলো হঠাৎ ঝর্ণার উপর থেকে নিচে পড়ে মারা যায় এবং আরও দু‘একজনও আঘাত পাই! এক হৃদয় বিদারক কী মর্মান্তিক ঘটনা! যে ছেলেটা মারা যায় শুনেছি সে মা–বাবার একমাত্র ছেলে। ভাবুন তো মা–বাবা বেঁচে থাকার মতো অবস্থায় আছে না কখনো থাকতে পারবে? আর কোন মায়ের কোল এভাবে যেন খালি না হতে হয়। তাই সময় থাকতে প্রত্যেক মা–বাবার দরকার বাচ্চাদের আদর–মমতা দিয়ে বুঝানো যে, কোন সময় গেলে বিপদের আশংঙ্কা কম থাকে সে সময় যাওয়া ভালো। যথা সম্ভব নিজেরা সাথে থাকলে ভালো। কান্নাকাটি পরে করার থেকে আগে করাই অনেক ভালো, তাই না? তাই বলে কি কেউ বেড়াতে যাবে না? হ্যাঁ অবশ্যই যাব সাবধনতা এবং সর্তকতার সাথে। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে
‘প্রকৃতি যেমন দেন, তেমনি ছুঁ মেরে নিয়েও নেন’। ঘুরে–বেড়ানো তখন ই সার্থক হয় যখন সবাই আনন্দ করে আনন্দের সাথে বাড়ি ফিরতে পারে!