নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে আরও গভীরভাবে কাজ করার অপেক্ষায় চীন : ফখরুল

| মঙ্গলবার , ১ জুলাই, ২০২৫ at ৫:১৪ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশে নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে চীন আরও গভীরভাবে কাজ করার ‘অপেক্ষায় আছে’ বলে দাবি করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পাঁচ দিনের চীন সফর শেষে দেশে ফেরার পরে গতকাল সোমবার গুলশানে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি সেখানে চীনের কর্মর্তাদের সঙ্গে বিএনপির প্রতিনিধি দলের বৈঠকের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, চীন আশা প্রকাশ করেছে যে নির্বাচিত সরকার এলে আরও গভীর দৃঢ়তার সঙ্গে, আন্তরিকতার সঙ্গে, ভালোবাসার সঙ্গে, প্রেমের সঙ্গে কাজ করবে। মির্জা ফখরুল বলেন, এক চীন নীতির প্রতি বিএনপি তার দৃঢ় অবস্থানের কথা জানিয়েছে। সার্বিকভাবে এই সফরের মাধ্যমে আমরা এই দুই ভ্রাতৃপ্রতিম দেশের বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে আরও উন্নততর, আরও ঘনিষ্ঠতর করার সুযোগ পেয়েছি যা আগামীতে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে বলে আমরা আশাবাদী। খবর বিডিনিউজের।

বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফেরাতে চীনের মনোভাব কী, জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সোজাসাপটা জবাব দেন, অত্যন্ত ইতিবাচক দেখেছি। তারা নির্বাচিত সরকারের সাথে কাজ করার আগ্রহের কথা বলেছে। তিনি বলেন, চীনের আগ্রহ যথেষ্ট রয়েছে যে, আমরা আমাদের প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখি।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সহযোগিতা চেয়েছি :

বাংলাদেশে দীর্ঘদিন বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থীর অবস্থান এবং তাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে চীনের সাথে আলোচনা হয়েছে তুলে ধরে ফখরুল বলেন, আমরা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা নাগরিকদের নিরাপদে, স্বেচ্ছায় এবং সম্মানজনক প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে চীনের অধিকতর এবং কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছি।

চীন রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে কী বলে, জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আলোচনায় ওরা (চীন) বলেছে যে তারা অত্যন্ত আগ্রহের সঙ্গে এবং ঐকান্তিকতার সঙ্গে এই বিষয়টির ওপর কাজ করছেন। মিয়ানমার সরকারকে তারা রাজি করানোর চেষ্টা করছে, যাতে খুব দ্রুত এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হয়।

তিস্তা প্রকল্পে চীন ইতিবাচক : মির্জা ফখরুল বলেন, তিস্তা প্রকল্প নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি এবং আমাদের যে প্রয়োজন সেটা আমরা ব্যাখ্যা করেছি। তারা (চীন) এটাতে ইতিবাচকভাবে সাড়াও দিয়েছেন। এটার উপরে তারা কাজ করছেন। আমরা অবশ্যই, তাদের প্রস্তাব যদি তারা দেয়, সেই বিষয়টা ভবিষ্যতে যদি আমরা কখনো সরকার পরিচালনার দায়িত্বে আসি, তখন সেটা ইতিবাচকভাবেই দেখব বলে তাদের আমরা বলেছি।

চীনের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিসিয়েটিভ’ বিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনেকগুলো কাজই আপনার আছে, যেগুলো ইতিমধ্যে হয়েছে আর যদি কোনো কাজ থাকে, বাংলাদেশ সরকার এবং বাংলাদেশ যদি মনে করে সেই কাজগুলো বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক হবে, নিসন্দেহে তা বিবেচনা করা হবে।

চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সাথে বৈঠকের বিষয়বস্ত তুলে ধরে ফখরুল বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে দ্ব্যর্থহীনভাবে ‘এক চীন নীতির’ প্রতি বিএনপির দলীয় অবস্থান দৃঢ়ভাবে উচ্চারিত হয়েছে। তিনি বলেন, বিএনপি এক চীন নীতিতে বিশ্বাসী। আমরা কিন্তু এক চীন নীতি থেকে কখনো সরিনি। তাইওয়ানের একটা ট্রেড সেন্টার এখানে (ঢাকায়) কয়েকদিনের জন্য খোলা হয়েছিল। তারপরে সেটাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, বিএনপি বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়ন, ডিজিটাল প্রযুক্তি, সেমিকন্ডাক্টর, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, মেডিকেল ও স্বাস্থ্যসেবা, উচ্চশিক্ষা, যোগাযোগ, আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি, এসএমই বিজনেস, ব্লু ইকোনমি, উন্নততর প্রযুক্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে চীনের অধিকতর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, সিপিসির সাথে বৈঠকে লি হংসং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে চীন সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন এবং দ্রুতই একটি নির্বাচিত সরকারের সাথে নতুনভাবে কার্যক্রম শুরুর ব্যাপারে চীনের পক্ষ থেকে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। চীনা কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষ থেকে দুই বছর মেয়াদী রাজনৈতিক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের প্রস্তাব করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এটাকে আমরা ইতিবাচক হিসেবে গ্রহণ করেছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবায়েজিদে ইউপিডিএফ সদস্য গ্রেপ্তার
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬