অভিযোগ আমলে, ২৬ আসামিকে গ্রেপ্তারে পরোয়ানা

আবু সাঈদ হত্যা

| মঙ্গলবার , ১ জুলাই, ২০২৫ at ৪:৫১ পূর্বাহ্ণ

জুলাই অভ্যুত্থানে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাইদ হত্যা মামলায় প্রসিকিউশনের দেওয়া আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নিয়ে পলাতক ২৬ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি আদেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল২ গতকাল সোমবার এ আদেশ দেয়। প্রসিকিউশনের পক্ষে এদিন শুনানি করেন প্রধান প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। এদিন সকালে এ হত্যা মামলায় ৩০ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয় ট্রাইব্যুনালে। তাদের মধ্যে চার আসামি অন্য মামলায় গ্রেপ্তার আছেন। এরা হলেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর শরিফুল ইসলাম, ছাত্রলীগ কর্মী ইমরান চৌধুরী আকাশ, সাবেক এসআই আমির হোসেন ও কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়।

প্রধান প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের দীর্ঘ তদন্ত শেষে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছিল। সেই প্রতিবেদন পর্যালোচনাপূর্বক চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয় ফরমাল চার্জ দাখিল করেছিল। আজকে সেই ফরমাল চার্জ এবং অন্যান্য ডকুমেন্টেসের ওপর শুনানি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল ৩০ জন আসামির বিরুদ্ধে অপরাধ আমলে গ্রহণ করেছেন। আগামী ১০ জুলাই পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন। খবর বিডিনিউজের।

আসামিদের মধ্যে যে চারজন অন্য মামলায় গ্রেপ্তার আছেন, তাদের এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দিয়েছে আদালত। বাকি ২৬ জনকে গ্রেপ্তার করে ট্রাইব্যুনালে হাজির করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাজুল কলেন, সেদিন (১০ জুলাই) বিচারের যে স্বাভাবিক কার্যক্রম, সেটা গৃহীত হবে। যদি সকল আসামিকে গ্রেপ্তার করা না যায়, তাহলে পলাতক আসামিদের ব্যাপারে স্টেট ডিফেন্স লইয়ার নিয়োগ করার জন্য আদালত আদেশ দিতে পারেন; এবং তার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক বিচারের যাত্রা শুরু হয়ে যাবে। চিফ প্রসিকিউটর বলেন, আমরা স্পষ্টভাবে দেখিয়ে দিয়েছি, শেখ হাসিনার নির্দেশ লেথাল উইপন ব্যবহার করা হয়েছে, শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছেন প্রথমে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে; স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দিয়েছেন পুলিশের আইজিপিকে; আইজিপির মাধ্যমে পুলিশের সমস্ত কমান্ডিংঅধস্তন যত কমান্ড আছে তাদের কাছে গিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, প্রাণঘাতী অস্ত্র বা লেথাল উইপন ব্যবহার করে ছাত্রদেরকে হত্যা করার জন্য। সেই নির্দেশের ধারাবাহিকতায় রংপুর অপরাধটা সংঘটিত হয়েছে।

তাজুল বলেন, সুতরাং সুপিরিয়র দায় হচ্ছে শেখ হাসিনার, আসাদুজ্জামান খান কামালের, আইজিপির এবং তারপরে রংপুরে পুলিশের যারা ঊর্ধ্বতন কর্তা ছিলেন, তাদের ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন দায় এখানে পাওয়া গেছে এবং তাদের ব্যাপারে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। পাশাপাশি ‘অঙিলারি ফোর্স’ হিসেবে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ এবং বিশ্ববিদ্যালয়েরে ভিসিসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই ছাত্রদের আন্দোলন দমনের ব্যাপারে পুলিশকে ‘সরাসরি নির্দেশনা দিয়েছে’ বলে উঠে এসেছে অভিযোগপত্রে। চিফ প্রসিকিউটর বলেন, সরকারের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন, ওই সময়ের প্রশাসনে যারা ছিল তারা, সরাসরি পুলিশকে উসকানি দেয়, নির্দেশ দেয়ার কাজটা করে। তারা যেহেতু সুপিরিয়র অবস্থানে থেকে এটা করেছে, সেজন্য সুপরিয়র রেসপনসিবিলিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের যারা ঊর্ধ্বতন কর্তাব্যক্তি, যারা এ মামলার আসামি, তাদের দায়ী করা হয়েছে। তবে মূল দায়টা হচ্ছে সরকারের। শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে পরবর্তী পুলিশ অফিসারদের।

২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে আন্দোলনের মধ্যে ১৬ জুলাই রংপুরে পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদ নিহত হন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশিক্ষক ও চিকিৎসকসহ ২৯৫ জনের চাকরি স্থায়ী করল চসিক
পরবর্তী নিবন্ধজুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি ৩৬ দিনের কর্মসূচি শুরু আজ