বাসাবাড়িতে এডিস মশার প্রজননস্থল ও লার্ভা পাওয়া গেলে ভবন মালিক বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা, কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে এখন থেকে নিয়মিত অভিযান চালানো হবে। আমাদের ম্যাজিস্ট্রেট বাসাবাড়িতে গিয়ে দেখবেন এডিস মশার লার্ভা আছে কিনা। গতকাল রোববার টাইগারপাস নগর ভবনের অস্থায়ী কার্যালয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) উদ্যোগে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে প্রস্তুতিমূলক সমন্বয় সভা শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমরা শুধু জনসচেতনতাই বৃদ্ধি করছি না; লিফলেট বিতরণ, মাইকিং, ব্যানার–ফেস্টুনের পাশাপাশি ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে অভিযান চালাচ্ছি। যেখানে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে সেখানে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এখন মামলার পাশাপাশি কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড হতে পারে। তিনি বলেন, বর্ষার সময় ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বাড়ে। বিশেষ করে বৃষ্টির জমে থাকা পানিতে এডিস মশা জন্মে বেশি। বাসাবাড়িতে জমে থাকা পানিও এডিস মশার প্রজননস্থল হয়ে ওঠে। এজন্য নিয়মিত পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা প্রয়োজন। ডেঙ্গু প্রতিরোধে গণসচেতনতার বিকল্প নেই। সিটি কর্পোরেশনও তিন মাসের বিশেষ ক্র্যাশ প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন করছে।
মেয়র বলেন, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া দুটি রোগই মশাবাহিত। এই রোগ প্রতিরোধে তিন মাসব্যাপী এক বিশেষ ক্র্যাশ প্রোগ্রাম চালু করা হয়েছে। আমরা নতুন একটি উন্নত মানের ওষুধ এনেছি, যা যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো থেকে আমদানি করা হয়েছে। এটি পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহারে ইতিবাচক ফল পাওয়া গেছে।
তিনি বলেন, ডেঙ্গুর নতুন ভ্যারিয়েন্টগুলো সাধারণত স্বচ্ছ পানিতে জন্ম নেয়। বাড়ির আশপাশে প্লাস্টিক বোতল, ডাবের খোসা, পলিথিন বা নির্মাণসামগ্রীর কন্টেনারে পানি জমে থাকলে সেখানে এডিস মশার লার্ভা জন্ম নিতে পারে। এমনকি এক বা দুই মিলিলিটার পানিতেও এই মশার জন্ম হতে পারে।
শাহাদাত বলেন, বর্ষার এই সময়ে আমাদের সবাইকে দায়িত্বশীল হতে হবে। প্রতিটি বাসায় যেন পানি জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। নির্মাণাধীন ভবনের সামগ্রী ঢেকে রাখা, ফুলের টব, এসির পাইপের পানির দিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।
তিনি বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমরা শুধু জনসচেতনতা গড়েই থেমে নেই। লিফলেট বিতরণ, মাইকিং, ব্যানার–ফেস্টুনের পাশাপাশি ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে অভিযান চালাচ্ছি। যেখানে পাওয়া যাচ্ছে সেখানে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। অর্থদণ্ড ও কারাদণ্ডও হতে পারে।
মেয়র বলেন, আমি দায়িত্ব নেওয়ার পরই ডেঙ্গু রোগীদের জন্য ডেডিকেটেড হাসপাতাল নির্ধারণ করেছি। এসব হাসপাতালে এন্টিজেন পরীক্ষা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে করা হচ্ছে। করোনার জন্য আমরা আইসোলেশন সেন্টার চালু করেছি, যেখানে রয়েছে অঙিজেন কনসেন্ট্রেটর, চিকিৎসক ও নার্স।
তিনি বলেন, করোনা শনাক্তে র্যাপিড এন্টিজেন টেস্ট ও ডেঙ্গু শনাক্তে পূর্ণ রক্ত পরীক্ষা এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ ও চিকিৎসাসেবা সেখানে সরবরাহ করা হচ্ছে। আমরা বিনামূল্যে করোনার ভ্যাকসিনও দিচ্ছি, যারা গত এক বছরে বুস্টার ডোজ নেয়নি তারা এখন নিতে পারছে।
মেয়র বলেন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, জেনারেল হাসপাতাল, মা ও শিশু হাসপাতাল এবং বেশ কয়েকটি প্রাইভেট হাসপাতাল ও ল্যাবে আইসিইউ, হাই–ফ্লো অঙিজেন এবং আরটি–পিসিআর পরীক্ষার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
এর আগে সিটি কর্পোরেশনের সম্মেলন কক্ষে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে সমন্বয় সভায় বক্তব্য দেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. ইমরান বিন ইউনুস, চসিকের পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার ইখতিয়ার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক জান্নাতুল নাঈম। এতে বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।