সুস্থ, সুন্দর ও মাদকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য সবাইকে মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. জিয়াউদ্দীন। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ‘মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস’ উপলক্ষে চট্টগ্রাম নগরের হোটেল সৈকতে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ আহ্বান জানান তিনি। বিভাগীয় কমিশনার বলেন, আজকের অনুষ্ঠানে উপস্থিতি সকলে মাদকের বিরুদ্ধে যোদ্ধা। আরও একটি গোষ্ঠী রয়েছে যারা আমাদের শত্রু। ওই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আমাদের দায়িত্বকে সবার সামনে তুলে ধরতেই আজকের এই আয়োজন। তিনি আরো বলেন, মাদক নির্মূলে শুধু মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রচেষ্টাই যথেষ্ট নয়। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। দিবসটি উদযাপন উপলক্ষ্যে হোটেল সৈকতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমের সভাপতিত্বে আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হোসাইন মোহাম্মদ কবীর ভূইয়া, চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি ওয়াহিদুল হক চৌধুরী, চট্টগ্রাম বিভাগীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. জাহিদ হোসেন মোল্লা, চট্টগাম জেলা পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম সানতু, চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম, এবং র্যাব–৭ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. হাফিজুর রহমান। সভাপতি জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম, মাদককে না বলার মাধ্যমে সুখী সমৃদ্ধ জীবন গড়ার আহ্বান জানান। চট্টগ্রাম বিভাগীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. জাহিদ হোসেন মোল্লা বলেন, ১৯৮৭ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৪৭তম অধিবেশনে ‘মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। মাদকের অপব্যবহার রোধে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে সারা বিশ্বের মত বাংলাদেশেও এই দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। বর্তমানে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ পুলিশ, র্যাব, আনসার, কোস্ট গার্ড, বাংলাদেশ কাস্টমসসহ সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার রোধে কাজ করে আসছে। তিনি আরো বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম মাদকবিরোধী গণসচেতনতার পাশাপাশি মাদকের সরবরাহ হ্রাসে মাদক অপরাধীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা, মামলা রুজু, মামলা তদন্ত, বিজ্ঞ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল, মোবাইল কোর্ট পরিচালনা ইত্যাদি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। তিনি বলেন, ২০২৫ সালের মে মাস পর্যন্ত সময়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম বিভাগ কর্তৃক ৯ হাজার ৫৯৬টি অভিযান পরিচালনা করেছে, ১ হাজার ৬৫৮টি মামলা রুজু করা হয়। আসামীর সংখ্যা ১ হাজার ৮৫৬ জন। চট্টগ্রাম বিভাগে বর্তমানে সরকারিভাবে ২৫ শয্যা বিশিষ্ট একটি মাদকাসক্তি চিকিৎসা কেন্দ্র ও বেসরকারি পর্যায়ে ৪৪টি মাদকাসক্তি নিরাময় বা পুনর্বাসন কেন্দ্রের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বেসরকারি পর্যায়ে পরিচালিত মাদকাসক্তি নিরাময় বা পুনর্বাসন কেন্দ্রসমূহের অনুমোদিত শয্যা সংখ্যা ৬২৫।
চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি ওয়াহিদুল হক চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ মাদক উৎপাদনকারী দেশ না হয়েও ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে মাদকের অপব্যবহারে দেশের প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা নষ্ট হয়। যারা মাদকে জড়িত হয়েছে তাদের অপরাধী হিসেবে না দেখে রোগী হিসেবে চিন্তা করতে হবে। চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হোসাইন মোহাম্মদ কবীর ভূইয়া বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। শুধুমাত্র আইনের প্রয়োগের মাধ্যমে মাদক নির্মূল সম্ভব নয়। চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম সানতু বলেন, মাদক নিয়ন্ত্রণের জন্য শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর নির্ভর না করে বরং প্রত্যেক নাগরিককেই সচেতনভাবে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে যাতে মাদকের উৎসকে বিনষ্ট করতে পারি। র্যাব–৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো: হাফিজুর রহমান সমাজের সকলকে মাদকের বিরুদ্ধে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান। চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মাদক একটি নীরব ঘাতক। ধুমপানের মাধ্যমেই এর শুরু। তিনি এ বিষয়ে পরিবারের অভিভাবকসহ সমাজের সকলের সচেতনতা বৃদ্ধির আহ্বান জানান এবং পরিবারে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের বিষয়ে জোর দেন।
এ দিবস উপলক্ষ্যে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম কর্তৃক পৃথক ৪টি ক্যাটাগরিতে রচনা ও চিত্রাঙ্কণ প্রতিযোগিতায় মোট ২১ জন ছাত্র–ছাত্রীদের মাঝে পুরষ্কার বিতরণ করা হয়। প্রধান অতিথি ও অতিথিবৃন্দ বিজয়ীদের ক্রেস্ট ও সনদ বিতরণ করেন। অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, বিভাগীয় গোয়েন্দা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. শামীম হোসেন।