জাতীয় রাজস্ব বোর্ড–এনবিআরের সংস্কার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে কর্মকর্তা–কর্মচারীদের আন্দোলনের পেছনে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়কার কিছু সুবিধাভোগী ব্যবসায়ীদের ইন্ধন থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তার মতে, আন্দোলন ও কর্মবিরতিতে নেমে সরকারি কর্মচারীরা আইন লঙ্ঘন করলেও আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান সম্ভব। গতকাল বুধবার সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত ও অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে অর্থ উপদেষ্টা এই মন্তব্য করেন। খবর বিডিনিউজের।
এদিন অর্থমন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কর ও কাস্টমস ক্যাডারের একটি প্রতিনিধি দলকে আলোচনার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা। এ বৈঠকের জন্য বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টায় সময় বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।
মে মাসে এনবিআর দুই ভাগ করে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা ও রাজস্ব নীতি নামে দুটি স্বতন্ত্র বিভাগ করে অধ্যাদেশ জারির পর তা বাতিলের দাবিতে কলম বিরতিসহ নানা কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলনে নামেন এনবিআরের কর্মকর্তা–কর্মচারীরা। তাদের আন্দোলনের মধ্যে সরকার পিছু হটে। বলা হয়, অধ্যাদেশ বাস্তবায়নে এনবিআর কর্মকর্তা–কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। এরপর কাজে যোগ দিলেও আন্দোলনকারীরা এনবিআর চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবিতে অটল থাকেন এবং সংস্থার কার্যালয়ে তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। পরে সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নিরাপত্তায় অফিসে ফেরেন এনবিআর চেয়ারম্যান। তিনি স্বাভাবিক কাজে ফিরলেও কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে দূরত্ব রয়েছে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এনবিআর কর্মকর্তাদের ক্যারিয়ার নিয়ে একটা নেতিবাচক ধারণা আছে। ওদের ক্যারিয়ারের কোনো অসুবিধা হবে না। বরং এনবিআর একটা স্বতন্ত্র বিভাগ হবে। ওদের মর্যাদা বাড়বে। ওদের ক্যারিয়ারটা আরও সমৃদ্ধ হবে। ওদের পদোন্নতিটা আরও ভালো হবে। এখন তাদের কারা কী বুঝিয়েছে; ভেতরের ব্যাপারস্যাপার আপনারা আরও ভালো বলতে পারবেন। ওরা যেটা করেছে, যে কর্মস্থলে অনুপস্থিতি, এটা কোনো সরকারি কর্মচারী, বিশেষ করে এনবিআরের কেউ কোনো দিন করেনি। এটা আপনার আমার ব্যাপার না। পুরা দেশের ব্যবসা, বাণিজ্য, রাজস্বের ব্যাপার। বন্দর, স্থলবন্দর, আমদানি–রপ্তানির ব্যাপার। আমি বলেছি, এমন কোনো সমস্যা নেই যেটা আলোচনা করে সমাধান করা যাবে না।
আন্দোলনে ব্যবসায়ীদের ইন্ধন নিয়ে তার ধারণার পেছনের কারণ তুলে ধরে তিনি বলেন, এনবিআরে সংস্কার করার কারণ হচ্ছে, এখানে আগে অনেক রকম অসঙ্গতি ছিল। সেখানে জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা নেই। এখানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আগের সরকারের সময় কিছুসংখ্যক ব্যবসায়ী লাভবান হতেন, ভালো যারা তারা সুবিধা পেতেন না। এনবিআর সমান সুবিধার নিশ্চিতের ধারে কাছেও ছিল না। অতএব আমি অনুমান করে বলছি, এখানে ব্যবসায়ীদের কিছু স্বার্থ আছে। না হয় ক্যারিয়ার ট্যারিয়ার নিয়ে ওরা হঠাৎ করে এতো চটে গেল কেন? অন্য কোনো বিষয় যদি না থাকে তাহলে এমন হওয়ার কথা না। এটা হলো আমার অনুমান। আমি ব্যবসায়ীদের ওভাবে দোষ দিচ্ছি না।