গত ২১ জুন দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, গত ৩৫ বছর ধরে বাংলাদেশের উপর বিষফোঁড়া হয়ে আছে রোহিঙ্গা সমস্যা। তবে ২০০৫ সালের জুলাই মাসের পর থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বন্ধ থাকায় গত ২ দশক ধরে এ সংকট তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে ওঠছে। এখন ১৩ লাখের বেশি রোহিঙ্গার ভার বইছে সীমান্ত জেলা কক্সবাজার। এ নিয়ে স্থানীয় জনগণের মাঝেও বাড়ছে ক্ষোভ। কিন্তু কবে ফিরবে রোহিঙ্গারা, কবে হবে এ সংকটের সমাধান; তা নিয়ে শীঘ্রই কোন আশার আলো দেখছেন না স্থানীয়রা।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, বর্তমানে উখিয়া–টেকনাফের ৩৩টি ক্যাম্পে এবং আশপাশে বসবাস করছে প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গা। প্রায় ১০ হাজার একর বনাঞ্চল ধ্বংস করে তাদের জন্য বানানো হয়েছে আশ্রয় কেন্দ্র। কিন্তু কবে ফিরবে রোহিঙ্গারা, কবে হবে এ সংকটের সমাধান; তা নিয়ে শীঘ্রই কোন আশার আলো দেখছেন না স্থানীয়রা। যদিও গত মার্চ মাসে জাতিসংঘের মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেসের সাথে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস উখিয়ার কুতুপালংস্থ রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করে লক্ষাধিক রোহিঙ্গার সাথে ইফতার করার সময় তাদের আগামী ঈদ নিজ দেশে উদযাপনের আশা করেন।
এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রায় ৭৩% শরণার্থী আশ্রিত, যেখানে উন্নত দেশগুলোতে এই হার অনেক কম। এই পরিস্থিতিতে শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়া দেশগুলোতে চাপ বাড়ছে, অর্থনৈতিক সংকট বাড়ছে এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ, আমাদের অসংখ্য সমস্যার মধ্যে ‘রোহিঙ্গা শরণার্থী’ আজ আমাদের বড় ধরনের সমস্যা। প্রতিবেশী দেশ হিসেবে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে মানবিক বিবেচনায় আশ্রয় দিয়ে আসছে। বিশ্ববাসী বাংলাদেশের এই মানবিক মূল্যবোধের পক্ষে সায় দিলেও রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে যথাযথ উদ্যোগ কেউ নেয়নি। মিয়ানমারের প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছে। পাশাপাশি তারা বিভিন্ন অপরাধ ও অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ছে। কারও কারও বিরুদ্ধে বাংলাদেশি পাসপোর্ট জোগাড় করে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অভিযোগ রয়েছে। বলা চলে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা আমাদের নিরাপত্তার জন্যও হুমকি। যে সমস্যাটি মিয়ানমার তৈরি করেছিল, এর সমাধান অবশ্যই মিয়ানমারকেই করা উচিত। বিষয়টি সম্প্রতি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ‘আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার ওপর দারিদ্র্য, উন্নয়ন ঘাটতি ও সংঘাতের প্রভাব’ শীর্ষক উচ্চপর্যায়ের আলোচনায় তুলে ধরেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেছেন, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান না হলে দ্রুতই এই সংকট আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকির কারণ হতে পারে।
তাঁরা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উদ্যোগে সমপ্রতি জাতিসংঘের মহাসচিব বাংলাদেশে এসে রোহিঙ্গাদের দুরাবস্থা প্রত্যক্ষ করেছেন। জাতিসংঘের মহাসচিব রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে আশাব্যঞ্জক বাণী দিয়ে গেছেন। অতি সমপ্রতি ব্যাংককে বিমসটেকের সম্মেলনে ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তনের প্রসঙ্গটি এসেছিল। কিন্তু তার পরও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে কোনো বাস্তব অগ্রগতি লক্ষ করা যায়নি। এদিকে প্রত্যাবাসন দেরি হওয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে সন্ত্রাস ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বেড়েই চলছে। তাদের দ্রুত প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করা না গেলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিজস্ব জন্মভূমিতে ফিরে যাওয়ার অধিকার রক্ষা ও বাংলাদেশের পরিবেশগত দিক বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে শান্তিপূর্ণ প্রত্যাবাসন জরুরি। তাঁরা বলেন, ২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা নিধন শুরু হলে দফায় দফায় বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে চাইলে সরকার তাদের আশ্রয় দেন। আয়তনে ক্ষুদ্র ও ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হওয়ার পরেও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কক্সবাজারে আশ্রয় দেয়া হয়। এর পর থেকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব সহায়তায় তাদের খাদ্য, চিকিৎসা, স্বাস্থ্য নিরাপত্তাসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনায় সরকার নিবিড়ভাবে সহযোগিতা করেছে। কিন্তু তাদের প্রত্যাবাসন জরুরি হয়ে পড়েছে। কেননা, বাংলাদেশের নিরাপত্তা আজ ঝুঁকিতে। যেভাবেই হোক রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে হবে।