খাগড়াছড়ির মাটিরাঙার মেয়ে জেরিন তার কণ্ঠের জাদুতে বিভোর করেন শ্রোতাদের। বাংলা ছাড়াও ইংরেজি ও হিন্দিতে মিনা কার্টুনের চরিত্র, শিনচ্যান, ডোরেমন, সিসিমপুরসহ ত্রিশটির বেশি চরিত্রে মিমিক্রি করেছেন তিনি।
পুরো নাম আয়েশা আক্তার জেরিন। ইতোমধ্যে কার্টুনের বিভিন্ন চরিত্রের কণ্ঠ অনুকরণ বা মিমিক্রি করে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন তিনি। ২০১৮ সালে মাটিরাঙ্গা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসিতে জিপিএ ৪.৬৫ পেয়ে খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হন। ২০২০ সালে উচ্চ মাধ্যমিকে জিপিএ–৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। দুই বোনের মধ্যে বড় জেরিন। ছোট বোন চট্টগ্রামের একটি নার্সিং কলেজে প্রথম বর্ষে অধ্যয়নরত। মানিকগঞ্জ নার্সিং কলেজের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জেরিন পাহাড়ি জেলা খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা পৌরসভার মাস্টার পাড়ার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত বিজিবি সদস্য মো. আমির হোসেনের বড় মেয়ে। বাল্যকাল থেকে উচ্চারণ অস্পষ্ট থাকা জেরিনের কথা বুঝতেন না শিক্ষক এবং সহপাঠীরা।
স্কুল শিক্ষকরা অভিভাবককে তার অস্পষ্ট উচ্চারণের কথা জানিয়ে উচ্চারণ শিখিয়ে স্কুলে পাঠাতে বলতেন। কিন্তু শত চেষ্টা করেও জেরিন স্পষ্ট উচ্চারণে ব্যর্থ হতেন। এক পর্যায়ে সব ঠিক হয়ে গেলেও জেরিনের মনে জেদ কাজ করে। যে কণ্ঠস্বরের জন্য তাকে সহপাঠীদের কাছে অপমানিত হতে হয়েছে, সে কণ্ঠস্বর মিমিক্রি করেই প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন জেরিন।
জেরিন জানান, ইউটিউব এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন মিমিক্রি দেখে ভয়েস আত্মস্থ করার অভ্যাস গড়ে ওঠে। গত বছর থেকে শিনচ্যান, ডোরেমন, মিনা কার্টুন, সিসিমপুরের ইকরি, নিনজা হাতোরি সহত্রিশটিরও বেশি কার্টুন চরিত্রে ভয়েস দিয়েছি। বাক্য উচ্চারণ অস্পষ্ট থাকায় ছোটবেলা থেকেই কার্টুন দেখতে আমার ভালো লাগত। কার্টুনে বিভিন্ন চরিত্র যখন কথা বলত, তখন সেগুলো আমার কাছে খুবই আকর্ষণীয় মনে হতো। সেখান থেকেই আমার এই আগ্রহের শুরু। ধীরে ধীরে সেটা একটা দক্ষতায় পরিণত হয়েছে।
তিনি বলেন, আমার লক্ষ্য হলো এমন একজন ভয়েস আর্টিস্ট হওয়া, যার কণ্ঠ মানুষের মনে ছাপ ফেলতে পারে এবং যেকোনো চরিত্র বা বার্তাকে প্রাণবন্ত করে তুলতে পারে। ডোরেমন বা মিনা কার্টুনের মতো বড় বড় চরিত্রে ভয়েস দেওয়ার পাশাপাশি ডাবিং বা নিউজ প্রেজেন্টার হওয়ার স্বপ্ন দেখি। মিমিক্রি এটি এমন একটি ক্ষেত্র যেখানে আমি আমার কণ্ঠ, অভিব্যক্তি এবং সৃজনশীলতাকে একত্রে প্রকাশ করতে পারি। আমি সুযোগ পেলে এই শিল্পে নিজেকে আরো দক্ষ করে গড়ে তুলতে চাই।
মাটিরাঙ্গা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবুল হাশেম বলেন, জেরিন ভয়েস আর্স্টিট হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে। তার চোখ, মুখ ও নাক এসব ইন্দ্রিয়ের ব্যবহার ভয়েসের সাথে মিল রেখে করতে হয়।
জেরিনের বাবা মো. আমির হোসেন বলেন, আমার মেয়ের কণ্ঠে বিভিন্ন কার্টুনের চরিত্রের কথা শুনে বিস্মিত হই। পরিবারের পক্ষ থেকে সবসময় উৎসাহ প্রদান করি। আমাদের প্রত্যাশা, সে ভয়েস আর্স্টিট হিসেবে সফল হবে।