পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি বাড়ছে

দুর্ঘটনা রোধে সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন

আলাউদ্দীন শাহরিয়ার, বান্দরবান | শনিবার , ২১ জুন, ২০২৫ at ১০:৪৯ পূর্বাহ্ণ

বান্দরবানের পাহাড়ের ঢালে ঝুকিপূর্ণ বসতি বাড়ছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাতটি উপজেলায় পাহাড় ধসে প্রাণহানি আতঙ্কের মাঝেও পাহাড়ের পাদদেশে ঝুকিপূর্ণ বসবাস করছে ত্রিশ হাজারেরও বেশি মানুষ। এরমধ্যে ‘অতি ঝুঁকিপূর্ণ’ অবস্থায় বান্দরবান ও লামা পৌরসভায় বিভিন্ন ওয়ার্ডে বসবাস করছে পনের হাজারেরও বেশি মানুষ। সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, শুক্রবার ও বৃহস্পতিবার বান্দরবান পৌরসভার বনরুপা পাড়া, কালাঘাটা, বাহাদুরনগর, তুমব্রু পাড়া, লেমুঝিড়ি, বালাঘাটা ফজরআলী পাড়া, স্বর্নমন্দির এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে পাহাড় কাটা হচ্ছে। রাতের আঁধারে স্কেভেটর ব্যবহার করে এবং বৃষ্টির মধ্যে শ্রমিক দিয়ে পাহাড় কাটা হচ্ছে বসতি স্থাপনের জন্য।

বিশেষজ্ঞদের মতে, নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন, পাহাড় কাটার কারণে বান্দরবানে পাহাড় ধসের ঘটনা বাড়ছে। বৃষ্টিতে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে সরে যেতে প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে। তবে অপরিকল্পিত বসতি স্থাপন বন্ধে প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের আরও কঠোর ভূমিকা রাখতে হবে।

সরকারি তথ্যমতে, পাহাড় ধসে ২০০৬ সালে বান্দরবান জেলা সদরে তিনজন, আজিজনগর ও গজালিয়ায় ১১ জন, ২০১০ সালে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় ৫ জন, ২০১১ সালে রোয়াংছড়ি উপজেলায় ২ জন, ২০১২ সালে লামা উপজেলার ফাইতং, রুপসীপাড়া ও লামা সদর ইউনিয়নে ১৫ জন, ২০১২ সালে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় ১০ জন, ২০১৫ সালে লামা ও বান্দরবান সদরে ৮ জন, ২০১৭ সালের ১৩ জুন সদরের কালাঘাটায় ৭ জন ও রুমা উপজেলায় ৫ জন, ২০১৮ সালে লামা উপজেলায় ৩ জন ও সদরের কালাঘাটায় ১ জন, ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই লামায় ১ জন, ২০২০ সালে আলীকদমে ১ জন, ২০২১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর রোয়াংছড়ির সাইঙ্গ্যা ঝিড়িতে একই পরিবারের ৩ জন, ২০২৩ সালের ১২ আগস্ট পর্যন্ত বান্দরবান সদর, লামা ও নাইক্ষ্যংছড়িতে ১০ জনের মৃত্যু হয়।

বান্দরবান মৃত্তিকা গবেষণা ও পানি সংরক্ষণ কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মাহাবুবুল ইসলাম বলেন, পাহাড় ধসে প্রাণহানি বন্ধে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। পাহাড় কাটা প্রতিরোধে পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের যথাযথ প্রয়োগ ঘটাতে হবে। পাহাড় ধসের ক্ষেত্রে যেহেতু প্রকৃতির চেয়ে মানুষের ভূমিকা অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ। তাই বাস্তবে এটি পরিবেশগত বিপর্যয়। এই বিপর্যয় মোকাবিলায় একটি সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।

এ বিষয়ে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শামীম আরা রিনি বলেন, বৃষ্টিতে পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে। পাহাড়ের পাদদেশে ঝুকিপূর্ণ বসতি গড়া বন্ধে লোকজনদের নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। পাহাড় কাটা বন্ধ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জেল জরিমানা করা হচ্ছে জড়িতদের।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনিজ ঘরে কাজ করার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে যুবকের মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধচান্দগাঁওয়ে চাঁদাবাজি মামলায় গ্রেপ্তার ৫