দৈনিক ছয় কোটি লিটার পানি সরবরাহের সক্ষমতা নিয়ে চট্টগ্রাম ওয়াসা দক্ষিণ চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে গড়ে তোলে ভান্ডালজুড়ি পানি শোধনাগার প্রকল্পটি। গত বছরের নভেম্বর মাসে প্রকল্পের কাজ শেষে কমিশনিং সম্পন্ন হয়েছে। এরপর থেকে প্রকল্পটি পুরোদমে উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত হলেও চাহিদা অনুযায়ী গ্রাহক না পাওয়ায় পুরোদমে উৎপাদনে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। অথচ নগরীর বিশাল অংশের মানুষ নিয়মিত খাবার পানি পাচ্ছে না। কিন্তু বোয়ালখালীর ভান্ডালজুড়ি প্রকল্পের ৬ কোটি লিটার পানির জন্য গ্রাহক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। প্রকল্পে দক্ষিণ কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংকের ৮২৫ কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ সরকার দিয়েছে ১ হাজার ১৫০ কোটি ৬৫ লাখ এবং চট্টগ্রাম ওয়াসা নিজস্ব তহবিল থেকে ২০ কোটি টাকাসহ মোট ১ হাজার ৯৯৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। এই প্রকল্প থেকে দৈনিক ছয় কোটি লিটার পানি সরবরাহের সক্ষমতা রয়েছে। এই প্রকল্পটি গ্রহণের আগে পরিকল্পনা ছিল আনোয়ারা ও পশ্চিম পটিয়ার ছোট–বড় ১৩টি শিল্প জোনে এবং পটিয়া ও বোয়ালখালী–কর্ণফুলীর তিন উপজেলার ১০ হাজার আবাসিক গ্রাহকের মাঝে পানি সরবরাহ দেয়া হবে।
প্রকল্পের তথ্য অনুযায়ী, এ প্রকল্প থেকে ছোট–বড় মোট ১৩টি বাণিজ্যিক সংযোগের মাধ্যমে শিল্পাঞ্চলগুলোতে প্রতিদিন ৪ কোটি লিটার পানি সরবরাহের টার্গেট রয়েছে চট্টগ্রাম ওয়াসার। অন্যদিকে, এই প্রকল্পের অধীনে ১০ হাজার আবাসিক গ্রাহকের মাঝে দুই কোটি লিটার পানি সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।
গত বছরের নভেম্বর মাসে কমিশনিং শেষে প্রকল্পটি পুরোদমে উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত হলেও এখনো পর্যন্ত শুধুমাত্র চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার (সিইউএফএল) ছাড়া আর কোনো প্রতিষ্ঠান পানি নিতে রাজি হয়নি। সংশ্লিষ্ট এলাকায় পানির চাহিদা না থাকায় পুরোদমে চালু করা যাচ্ছে না প্রকল্পটি। এর ফলে এই প্রকল্পের পানি নিয়ে বিপাকে পড়েছে ওয়াসা। বর্তমানে গ্যাস সংকটে সিইউএফএল–বন্ধ থাকায় সেখানেও পানি সরবরাহ বন্ধ রয়েছে বলে জানান ভান্ডালজুড়ি পানি শোধনাগার প্রকল্প পরিচালক ও ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. মাহবুবুল আলম। তিনি বলেন, এখন শুধুমাত্র পটিয়ায় দেড় হাজার আবাসিক গ্রাহকের মাঝে পানি সরবরাহ দেয়া হচ্ছে। আর বোয়ালখালীতে কিছু গ্রাহকের মাঝে দেয়া হচ্ছে। চায়না ইপিজেডের সাথে কথা হয়েছে। তাদের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর হবে। চায়না ইপিজেডে কাজ শুরু হলে পানি লাগবে। প্রকল্পের পুরো কাজ শেষ হলে ৬ বছর পর প্রতিদিন চায়না ইপিজেডে দৈনিক সাড়ে ৩ কোটি লিটার পানি লাগবে। এদিকে ড্যাপ (ডাই অ্যামোনিয়াম ফসফেট কারখানা) পানি নিতে রাজি হয়েছে। এখন তারা সংযোগের ফি দিলে আমরা সংযোগ দিবো।
এদিকে সিডিএর কর্ণফুলী আবাসিকে গ্রাহকদের মাঝে ভান্ডালজুড়ি প্রকল্প থেকে পানি সরবরাহের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে এরজন্য ওয়াসাকে সংযোগ ফি দিতে হবে। সিডিএ এখনো পর্যন্ত ওয়াসাকে সংযোগ ফি দেয়নি বলে জানান ভান্ডালজুড়ি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ও ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মুহম্মদ মাহবুবুল আলম।
আনোয়ারা ও পশ্চিম পটিয়ার দেশী–বিদেশী ছোট–বড় মোট ১৩টি শিল্প প্রতিষ্ঠানকে এই প্রকল্প থেকে পানি নেয়ার জন্য চিঠি দিয়েছিল চট্টগ্রাম ওয়াসা। তখন কাফকো, সিইউএফএল, ড্যাপ, কোরিয়ান ইপিজেড, চায়না ইকোনমিক জোনসহ অন্য শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো পানি নিতে আগ্রহ দেখিয়েছিল। প্রকল্পের কাজ শেষে সংযোগ নেয়ার জন্য চিঠি দিলে শুধুমাত্র সিইউএফএল ছাড়া আর কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে সাড়া পাওয়া যায়নি বলে জানান প্রকল্প পরিচালক ও ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মুহম্মদ মাহবুবুল আলম। এদিকে নগরীতে মানুষ খাবার পানি পাচ্ছে না। কিন্তু বোয়ালখালীর ভান্ডালজুড়ি প্রকল্পের পানির জন্য গ্রাহক পাওয়া যাচ্ছে না।










