সরকারি চাকরি আইন সংশোধন অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে বিক্ষুব্ধ পরিস্থিতিতে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, এই আইনের মাধ্যমে সরকারি চাকুরেরা ‘বিড়ম্বনা বা হয়রানির শিকার’ হতে পারেন। এ পরিস্থিতিতে কিছু জায়গায় এই অধ্যাদেশটির পুনর্বিবেচনার সুযোগ রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে একটি বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এ কথা বলেন আইন উপদেষ্টা। তিনি বলেছেন, এদিন মন্ত্রিপরিষদ গঠিত কমিটি বিষয়টি নিয়ে বৈঠকে বসছে, সেখানে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে।
আসিফ নজরুল ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫’ নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতি পর্যালোচনায় সরকার গঠিত কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আসিফ নজরুল বলেন, সরকারি কর্মচারী আইনের অবশ্যই পুনর্বিবেচনার অবকাশ রয়েছে। আমি তখন বিদেশে ছিলাম। আইনটা প্রণয়নের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলাম না। পরবর্তীতে যখন আইনটা দেখেছি, আমার কাছে মনে হয়েছে কিছু কিছু জায়গাকে পুনর্বিবেচনার স্কোপ রয়েছে। খবর বিডিনিউজের।
আইনটি সরকারের উদ্দেশ্য এবং প্রয়োগ নিয়ে উপদেষ্টা বলেন, সরকার কোনো অসৎ উদ্দেশ্যে আইনটা করে নাই। তবুও আইন যাদের জন্য তারা হয়ত এই আইন দ্বারা বিড়ম্বনা বা হয়রানির শিকার হতে পারে। এরকম সম্ভাবনা থাকতে পারে বলে স্বীকার করি। এটা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটা আইন। যে কোনো অধ্যাদেশ আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জারি হয়। কিন্তু আইন মন্ত্রণালয় এটা করেনি।
এদিন বৈঠকে সরকারি কর্মচারীদের দাবিদাওয়া নিয়ে আলোচনা করা হবে জানিয়ে আন্দোলনরতদের সরকারি কাজে বিঘ্ন না ঘটানোর অনুরোধ জানিয়েছেন আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, একটা রিপোর্ট উপদেষ্টা পরিষদে সুপারিশ আকারে তুলবো। কর্মচারী ভাইদের কাছে অনুরোধ করবো আপনারা একটু ধৈর্য ধরে কর্মসূচি দিন। আমাদের কাজ যদি আপনাদের পছন্দ না হয় তখন কর্মসূচি দিয়েন। সচিবালয়ের কাজে যাতে বিঘ্ন সৃষ্টি না হয়। আপনারা বিবৃতি দিতে চাইলে বিবৃতি দেন। চাইলে আমাদের সাথে মিটিং করেন। কিন্তু সরকারি কাজে যেন ব্যঘাত সৃষ্টি না হয়। সাংবাদিকদের সঙ্গে আইন উপদেষ্টার এই কথার পরপরই সচিবালয়ে জনপ্রশাসন ও মন্ত্রিপরিষদ ভবনের নিচে জমায়েত করেন সচিবালর কর্মকর্তা কর্মচারী ঐক্য পরিষদের নেতারা। আইন বাতিল করা না হলে আজ মঙ্গলবার সব মন্ত্রণালয়ে, বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীদের নিয়ে বড় ধরনের জমায়েতের ঘোষণা দিয়েছেন তারা। পাশাপাশি সচিবালয়ের গেইটে তালা ঝুলিয়ে, কর্মকর্তাদের কক্ষে ঢুকে দাপ্তরিক কাজ করতে বাধা দেওয়া হতে পারে বলেও সতর্ক করেছেন কয়েকজন নেতা। নতুন ধারায় একজন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে দুই দফায় সাত দিন করে নোটিসের পর, দায়ী হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা রাখার বিধান রাখা হয়েছে। অধ্যাদেশে ‘আচরণ বা দণ্ড সংক্রান্ত’ বিশেষ বিধানে বলা হয়েছে–
*কেউ যদি এমন কাজ করে যা অনানুগত্যের সামিল এবং যা অন্য কর্মচারীদের মাঝে অনানুগত্য সৃষ্টি করতে পারে বা শৃঙ্খলা বিঘ্ন ঘটাতে পারে বা অন্যের কর্তব্য পালনে বাধার সৃষ্টি করতে পারে,
*এককভাবে বা সম্মিলিতভাবে ছুটি ব্যতীত কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলে। কাউকে কর্মবিরতিতে বাধ্য বা উস্কানি দেওয়া, অন্য কর্মচারীকে কাজে বাধা দেওয়া হলে,
*কোনো কর্মচারীকে তার কর্মস্থলে আসতে বা কাজ করতে বাধা দেওয়া হলে তা দণ্ডনীয় অপরাধ হবে। এসব অপরাধের শাস্তি হিসেবে পদাবনতি বা গ্রেড অবনতি, চাকরি থেকে অপসারণ কিংবা চাকরি থেকে বরখাস্ত করার বিধান রাখা হয়েছে।
এসব অসদাচরণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অভিযোগ গঠন, সাত দিনের সময় দিয়ে কারণ দর্শানোর নোটিস, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কারণ জানিয়ে জবাব না দিলে আবার সাত দিনের নোটিস দেওয়ার পর তা বিবেচনা করে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবে। তবে অভিযুক্ত কর্মকর্তা–কর্মচারীর আপিল রাখার সুযোগ রয়েছে। দণ্ডের নোটিস হাতে পাওয়ার ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে আপিল করা যাবে। নতুন এই অধ্যাদেশকে আন্দোলনকারীরা বলছেন ‘নিবর্তনমূলক কালো আইন’। এর পর সচিবালয়ে আন্দোলন বিক্ষোভ আরো জোরদার করেন কর্মচারীরা। ওই সময়ে অধ্যাদেশ সংশোধন নয়, পুরোপুরি বাতিলের দাবি তোলেন আন্দোলনকারীরা।