১৫ বছরেও শেষ হয়নি খেলাপি ঋণ আদায়ের মামলা

চট্টগ্রামের অর্থঋণ আদালতে এপ্রিল পর্যন্ত মামলার সংখ্যা ৬ হাজার ৩৩৯ ১০ বছরের বেশি সময় ধরে বিচারাধীন মামলা অন্তত ১৫ টি

হাবীবুর রহমান | মঙ্গলবার , ১৭ জুন, ২০২৫ at ৪:০৪ পূর্বাহ্ণ

নগরীর পাহাড়তলীর মেসার্স রওনক স্টিল। প্রতিষ্ঠানটির মালিকরা ২০০৩ সালে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক থেকে কোটি টাকা ঋণ নেন। নির্ধারিত সময়ে তা পরিশোধের কথা থাকলেও সেটি হয়নি। যার কারণে খেলাপিতে পরিণত হয়ে পড়ে এ ঋণ। এ ঋণ আদায়ের লক্ষে একপর্যায়ে ব্যাংকের পক্ষ থেকে ২০০৯ সালে রওনক স্টিল ও এর মালিক এবং গ্যারান্টরদের বিরুদ্ধে একটি অর্থঋণ মামলা দায়ের করা হয়। দীর্ঘ ১৫ বছর অতিবাহিত হয়ে গেলেও সেই মামলাটি এখনো শেষ হয়নি। যার কারণে আদায় করা যায়নি খেলাপি হয়ে পড়া ব্যাংকের টাকাও। রওনক স্টিলের মতো এমন অসংখ্য প্রতিষ্ঠানের নামে চট্টগ্রামের অর্থঋণ আদালতে মামলা ঝুলছে। গত এপ্রিল পর্যন্ত আদালতটিতে ৬ হাজার ৩৩৯ টি মামলা থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে কোনটি এক থেকে ২ বছর, কোনটি ৫ বছর থেকে ৭ বছর, আবার কোন কোন মামলা ১০ বছরের বেশি সময় ধরে বিচারাধীন রয়েছে। চট্টগ্রামের অর্থঋণ আদালত সূত্রে জানা যায়, আদালতটিতে ১০ বছরের বেশি সময় ধরে বিচারাধীন রয়েছে এমন মামলার সংখ্যা অন্তত ১৫টি। উচ্চ আদালত কর্তৃক মামলার কার্যক্রম স্থগিত করাসহ নানা কারণে মামলাগুলো বছরের পর বছর ধরে বিচারাধীন রয়েছে। অর্থঋণ আদালত সংশ্লিষ্ট আইনজীবী জানিয়েছেন, আইনে সুযোগ রয়েছে উচ্চ আদালতে যাওয়ার। যার কারণে ঋণ খেলাপিরা উচ্চ আদালতে চলে যান এবং স্থগিত আদেশ নিয়ে আসেন। আইনজীবীরা আরো বলছেন, এ ধরণের দীর্ঘমেয়াদি বিচার বিলম্ব শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতিই নয়, বরং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের উপর আস্তা কমিয়ে দেয়। এছাড়া ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায় বাধাগ্রস্ত হয় এবং সেই বোঝা পড়ে সাধারণ গ্রাহকের উপর। আদালতসূত্র জানায়, ১০ বছরের অধিক সময় ধরে বিচারাধীন থাকা সবগুলো অর্থঋণ মামলাই ২০০৯, ২০১০ ও ২০১১ সালে দায়ের হয়েছে। অর্থঋণ আদালতের বেঞ্চ সহকারী মোহাম্মদ এরশাদ গতকাল দৈনিক আজাদীকে বলেন, রওনক স্টিলের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের আগে ব্যাংকের কাছে থাকা দায়িকদের বন্ধকি সম্পত্তি নিলামে বিক্রয়ের চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু আগ্রহী ক্রেতা না পাওয়ায় তখন তা সম্ভব হয়নি। পরে মামলা দায়ের হলে এবং মামলার বিচার কার্যক্রম শুরুর পর ২০১৩ সালে দায়িকদের একটি অংশ উচ্চ আদালতে গিয়ে রিট মামলা দায়ের করেন। যার প্রেক্ষিতে মামলার কার্যক্রম স্থগিত হয়ে পড়ে। তিনি বলেন, দীর্ঘ ১৫ বছরে নানা সময়ে এ মামলার বিচার কার্যক্রম বন্ধ ছিল। তবে বর্তমানে মামলাটির বিচার কার্য চলমান রয়েছে। সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। গত রোববারও কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়েছে। আগামী ২০ জুনও তারিখ রয়েছে। আশা করছি এটিসহ অধিক সময় ধরে বিচারাধীন অন্যান্য মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি হয়ে যাবে।

বেঞ্চ সহকারী মোহাম্মদ এরশাদ বলেন, আমাদের আদালতে খেলাপি ঋণ সংক্রান্ত মামলা প্রতিদিনই নিষ্পত্তি হচ্ছে। এরপরও মামলার সংখ্যা কমে না। একদিকে মামলা নিষ্পত্তি হচ্ছে, অন্যদিকে নতুন মামলা দায়ের হচ্ছে। তিনি বলেন, সম্প্রতি চট্টগ্রামে নতুন দুটি অর্থঋণ আদালত বাড়ানো হয়েছে। এ দুটির কার্যক্রম শুরু হয়ে গেলে মামলা নিষ্পত্তির সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়ে যাবে।

সিনিয়র অ্যাডভোকেট জিয়া হাবীব আহসান দৈনিক আজাদীকে বলেন, বিবাদীরা উচ্চ আদালত থেকে স্থগিত আদেশ নিয়ে আসার কারণেই বছরের পর বছর খেলাপি ঋণ আদায়ের মামলা শেষ হয় না। এক্ষেত্রে উচ্চ আদালতকে ভূমিকা রাখতে হবে। উচ্চ আদালতকে এমন একটি পদ্ধতি বা প্রসিডিউর বের করতে হবে যেটি করলে ১০ বছর কিংবা ১৫ বছর ধরে কোন মামলা বিচারাধীন থাকবে না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসাগরে স্পিড বোট বিকল, ভাসতে ভাসতে পৌঁছাল তীরে
পরবর্তী নিবন্ধএইচএসসি পরীক্ষায় মাস্ক পরে বসতে হবে