বাংলাদেশ ব্যাংকের (বিবি) গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, আর্থিকভাবে সংকটে থাকা শরিয়াহ–ভিত্তিক পাঁচটি ব্যাংককে একীভূত করার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এই একীভূতকরণের ফলে কোনো কর্মী তাদের চাকরি হারাবেন না নিশ্চিত করা হয়েছে। গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বোর্ডরুমে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, এই পাঁচটি ব্যাংক আগামী কয়েক মাসের মধ্যে একীভূতকরণ সম্পন্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এসব ব্যাংকে কর্মরতদের চিন্তার কোনো কারণ নেই। খবর বাসস ও বিডিনিউজের।
একীভূত হতে যাওয়া পাঁচটি ব্যাংক হচ্ছে–ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক এবং এক্সিম ব্যাংক। গভর্নর বলেন, আমরা আশা করি আগামী সরকারও এ প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেবে কারণ এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া।
পাচারের টাকা উদ্ধারে বিদেশেও মামলা : পাচারের টাকা উদ্ধারে দেশের আদালতের পাশাপাশি বিদেশেও সরকার মামলা করবে সরকার বলে সংবাদ সম্মেলেনে জানিয়েছেন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। তবে কী ধরনের মামলা করা হবে সেই সিদ্ধান্ত নেবেন আইনজীবীরা। সরকার চাইলে এখনই আইনজীবী নিয়োগ করতে পারে। প্রধান উপদেষ্টার প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সমপ্রতি যুক্তরাজ্য সফর করে আসা আহসান মনসুর দেশটির বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে পাচার করা অর্থ উদ্ধার নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হওয়ার কথাও তুলে ধরেন। তিনি আগের আওয়ামী লীগ সরকারের সময় পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে আইনি সহায়তা দেয় এমন বিদেশি একাধিক প্রতিষ্ঠান আগ্রহ দেখিয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান।
তিনি বলেন, এসব আন্তর্জাতিক আইনি সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠানগুলো পাচার করা অর্থ ও সম্পদ উদ্ধারে প্রস্তাবও দিয়েছে। তারা এজন্য ৫০ থেকে ১০০ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। তারা মনে করছে, এ পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করলে সেটা উঠে আসবে। এসব প্রতিষ্ঠানগুলো উদ্ধারকরা অর্থের ১৫ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ পাবে। তবে চূড়ান্ত পরিমাণ আদায়ের অর্থের পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করা হবে। তিনি বলেন, পাচারের টাকা উদ্ধার ধাপে ধাপে এগোতে হবে। চূড়ান্ত রায় না পেলে সম্পদ উদ্ধার করা যাবে না। তাই যথাযথ তথ্য–উপাত্ত সংগ্রহ করে আদালতে দেওয়ার জন্য তৈরি করতে হবে যাতে বিচারিক প্রক্রিয়ায় এসব সম্পদ আদায় করতে পারি। আদালত সিদ্ধান্ত নেবে আমরা যেটা দাবি করছি তা সঠিক কিনা। আরেকটি পদ্ধতিতে আদায় করা যায় তা হল এডিআর (বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি) পদ্ধতি। সেখানেও একটা প্রক্রিয়া আছে তা নিয়ে আইনজীবীরা আলোচনা করবে।
সরকার এডিআর পদ্ধতি গ্রহণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে তুলে ধরে তিনি বলেন, এরপর দুই পক্ষের আইনজীবীরা বসে তা ঠিক করবে। দেশের সম্পদ উদ্ধারে দেশি আদালত এবং বিদেশি সম্পদ উদ্ধার বিদেশি আদালতে মামলা হবে। আমাদের সবকিছু প্রস্তুত সরকার চাইলে সম্পদ উদ্ধারের আইনজীবী নিয়োগ করতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর বলেন, দেশের কোন কোন ব্যাংক থেকে অর্থ লুট করা হয়েছে সে বিষয়ে বিদেশিদের তথ্য দেওয়া হয়েছে। ব্রিটিশ সরকার চাইলে এসব ব্যক্তিরদের সম্পদ যেখানেই থাকুক না কেন জব্দ করতে পারবে বলেও দাবি করেন তিনি।